ঝাড়গ্রাম: তিনি জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘শ্রীময়ী’র জুন আন্টি। বাংলা ছবির সত্যবতী। ব্যোমকেশ বক্সীর ঘরণী। অভিনয় জগতের বাইরে বাস্তবে তিনি একজন দরদী প্রগতিশীল মানুষ। সেই ঊষসী চক্রবর্তী বুধবার দুপুরে কিছুটা সময় কাটিয়ে গেলেন ঝাড়গ্রাম শ্রমজীবী ক্যান্টিনে। সিটুর রাজ্য সম্পাদক প্রয়াত শ্যামল চক্রবর্তীর মেয়ে ঊষসী সাধারণ জীবনযাপনে অভ্যস্ত। তাই মঙ্গলবার রাতে ট্রেনে এসে পৌঁছন অরণ্য শহরে।
বুধবার দুপুরে শ্রমজীবী ক্যান্টিন ঘুরে দেখে উদ্যোক্তাদের ঊষসী বলেন, “খুব ভাল কাজ করছো তোমরা। তোমাদের পাশে আছি।” সত্যিই তিনি পাশে আছেন। দিন পনেরো আগে ক্যান্টিন চালানোর জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ সাহায্য করেছেন তিনি। এদিন নিজে এসে ঘুরে দেখলেন কিভাবে শ্রমজীবী মানুষজনকে নামমাত্র দামে ভরপেট দুপুরের খাবার দেওয়া হচ্ছে। বুধবার ক্যান্টিনের ১৬৭ তম দিনে রাঁচির বাসিন্দা ছোট্ট অভিরাজ ঘোষের জন্মদিনে তার অভিভাবকরা খাবারের খরচ জুগিয়েছেন। মেনুতে ছিল পোলাও, কষা চিকেন ও মিষ্টি। কয়েকজন শ্রমজীবী মানুষের হাতে খাবার প্যাকেট তুলে দেন ঊষসী।
আরও পড়ুন : অসহায়দের ভিক্ষা নয়, সম্মান দিতে বিজেপিতে এসেছি: মিঠুন চক্রবর্তী
গত ১ অক্টোবর থেকে সিপিআইয়ের উদ্যোগে ঝাড়গ্রাম শহরে চালু হয়েছে ‘শ্রমজীবী ক্যান্টিন’। রেল স্টেশন লাগোয়া সিপিআইয়ের শ্রমিক সংগঠন এআইটিইউসি-র কার্যালয়ে ওই ক্যান্টিন চালু করা হয়েছে। মাত্র কুড়ি টাকায় প্রতিদিন দুপুরে সেখানে মেলে ভরপেট খাবার। সপ্তাহের সাতদিনই ওই ক্যান্টিন থেকে দুপুরে সুলভ দামে খাবার পাওয়া যায়। তবে একেবারে হতদরিদ্রদের খাবার দেওয়া হয় বিনামূল্যে। শহরে রোজই বহু মানুষ নানা প্রয়োজনে আসেন। এদের একটা বড় অংশ দরিদ্র শ্রেণির। কেউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর পরিজন, গ্রাম থেকে আসা টোটোচালক, আউটডোরে দেখাতে আসা রোগী ও তাঁদের পরিজন, দিনমজুরির কাজে আসা বহু মানুষের পক্ষে হোটেলের চড়া দামে খাবার কিনে খাওয়া সম্ভব নয়। তাই নামমাত্র দরে সুষম খাবার দেওয়ার জন্যই এমন ক্যান্টিন চালু করা হয়েছে।
প্রতিদিন দু’শো জনের খাবার মেলে এই ক্যান্টিন থেকে। সকাল ন’টা থেকে ১১টার মধ্যে আগাম কুপন সংগ্রহ করতে হয়। দুপুর ১ টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়। প্রতিদিন দু’শো জনের খাবার তৈরি করতে খরচ পড়ছে ৬ হাজার টাকা। ফলে ২০ টাকায় প্রতি প্যাকেট খাবার দেওয়া হলে প্রতিদিন ঘাটতি থাকছে দু’হাজার টাকা। শুভানুধ্যায়ীদের দানে সেই ঘাটতি কিছুটা পূরণ হচ্ছে। শ্রমজীবী ক্যান্টিনের দায়িত্বে রয়েছেন সিপিআইয়ের ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মূল তদারকিতে রয়েছেন সিপিআইয়ের যুব সংগঠন এআইওয়াইএফ নেতা শ্রীদীপ মুখোপাধ্যায়, গুরুপদ মণ্ডল, ছাত্র সংগঠন এআইএসএফের রাজ্য সহ-সম্পাদক প্রতীক মৈত্র ও জেলা সম্পাদক দেবাশিস ভুই। ক্যান্টিনের স্লোগান: ‘কেউ খাবে, কেউ খাবে না, তা হবে না, তা হবে না’।