রাজনীতিরাজ্য

বিজেপির ভোট বেড়েছে ৭ গুণ, শেষরক্ষা হবে কি তৃণমূলের?

বিজেপির ভোট বেড়েছে ৭ গুণ, শেষরক্ষা হবে কি তৃণমূলের? - West Bengal News 24

পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা হয়নি কখনো। তবে সেসবে না গিয়ে সরাসরি শাসক দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়াই লক্ষ্য বিজেপির। আর সেই লক্ষ্যে তাদের পাখির চোখ জমি আন্দোলনের ভূমি নন্দীগ্রাম। গত তিন বছরে রাজ্যে কেন্দ্রীয় ক্ষমতাসীন দলের ভোট বেড়েছে ৬ গুণ, অপরদিকে তৃণমূলও তাদের অবস্থান ধরে রাখতে মরিয়া।

বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা—এই চার জেলার মোট ৩০টি আসনে ভোট। তবে শুধুমাত্র এই ৩০টি আসনই নয়, বরং নীলবাড়ির লড়াইয়ে ২৯৪ আসনের মধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রামই ভোটের ভরকেন্দ্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ নিজের কেন্দ্র ভবানীপুর ছেড়ে এবার সেখান থেকেই ভোটে নাম লিখিয়েছেন তৃণমূল নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার সঙ্গে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন, তারই ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা শুভেন্দু অধিকারী, ফুল বদলের পর যিনি এখন পদ্মশিবিরে। দু’পক্ষেই নিজেদের জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। তবে মমতা, শুভেন্দু, নাকি ‘অসম্ভব’কে সম্ভব করে সংযুক্ত মোর্চার মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের ভোটবাক্স ভরে উঠবে, তার উত্তর মিলবে ২ মে।

২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে মূলত সিপিএম এবং কংগ্রেসই বিরোধী পক্ষের ভূমিকা পালন করে আসছে রাজ্যে। ২০১৪ সালে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকার গড়ার পর অন্যান্য রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গেও গেরুয়া হাওয়া বইতে শুরু করে। তবে ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সেভাবে দাপট দেখাতে পারেনি গেরুয়া শিবির।
বিধানসভায় প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা পালন তো দূর, কোনোরকমে খাতা খুলতে সক্ষম হয় তারা। সেবার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২১১টিতে জয়লাভ করে তৃণমূল। কংগ্রেস জয়লাভ করে ৪৪টি আসনে। সিপিএম এর হাতে ওঠে ৩২টি আসন। সাকুল্যে মাত্র ৩টি আসনে জয়ী হয় বিজেপি। কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা আসন আসতে আসতে খাতায় কলমে না হলেও, সংখ্যার নিরিখে কার্যত প্রধান বিরোধীর ভূমিকায় উঠে আসে বিজেপি। সেবার ১৬৪টি আসনে এগিয়ে ছিল তৃণমূল। বিজেপি এগিয়ে ছিল ১২১টি আসনে। ৯টি আসনে এগিয়ে ছিল কংগ্রেস।

আরও পড়ুন : করোনার উৎস নিয়ে আরো কাজ করা দরকার: ডব্লিউএইচও

জেলা ভিত্তিক আসনেও ছাপ রেখে যায় গেরুয়া দাপট। বৃহস্পতিবার যে ৩০ আসনে নির্বাচন, ২০১৬ সালে তার মধ্যে মাত্র একটি আসনে জয়লাভ করেছিল বিজেপি। দিলীপ ঘোষের হাত ধরে খড়্গপুর সদর কেন্দ্রটি হাতে আসে তাদের। সেই তুলনায়, তৃণমূলের হাতে ছিল ২১টি আসন। ৫টি ওঠে সিপিএম এর হাতে। কংগ্রেস জয়লাভ করে ৩টি আসনে।

২০১৬ সালে ওই ৩০টি কেন্দ্রে মোট ভোটের ৪৭.৮৮ শতাংশই পেয়েছিল তৃণমূল। বামেরা পেয়েছিল ২৫.৬০ শতাংশ ভোট। কংগ্রেসের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ১১.৪১ শতাংশ। সেই তুলনায় বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৭.৩৮ শতাংশ। কিন্তু ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভা ভিত্তিক ফল বেরোলে দেখা যায়, শুধুমাত্র বাম-কংগ্রেসের ভোট ছিনিয়ে নেওয়াই নয় তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে ভাগ বসিয়েছে বিজেপি।

২০১৬ সালে তৃণমূলের হাতে থাকা পাঁশকুড়া পশ্চিম, নারায়ণগড়, ডেবরা, তালড্যাংরা, ওন্দা, কোতুলপুর এবং ইন্দাসে এগিয়ে যায় তারা। এর পাশাপাশি সিপিএম এর হাতে থাকা হলদিয়া, বরজোড়া এবং সোনামুখীতেও এগিয়ে যায় বিজেপি। তারা কংগ্রেসের বাঁকুড়া এবং বিষ্ণুপুরেও এগিয়ে যায়। অর্থাৎ গোরুয়া দাপটে ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে বিধানসভা ভিত্তিক ফলাফলে ১৮টি আসনে এগিয়েছিল তৃণমূল। ১২টি আসনে তাদের ঘাড়ের উপর নিঃশ্বাস ফেলছিল বিজেপি।

সেবার বাম-কংগ্রেস একটি আসনেও এগিয়ে থাকতে পারেনি। ভোটের হারেও তার প্রভাব পড়ে। ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৯-এ তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোটের হার ছিল ৪৫.৮৯ শতাংশ। আর ২০১৬ এর ৭.৩৮ শতাংশ থেকে সটান ৪২. ৪০ শতাংশ ভোট বাগিয়ে দ্বিতীয় স্থানে এসে পৌঁছায় বিজেপি। ২০১৯-এ বাম ও কংগ্রেস যথাক্রমে ৭.২৪ এবং ১.৫০ শতাংশ করে ভোট পায়।

বাম-কংগ্রেসের ভোট ভাঙিয়েই বিজেপি নিজেদের পাল্লা ভারি করেছে বলে সেইসময় যদিও দাবি করেন তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু ২০১৬ সালে তাদের জেতা ৭টি আসনেই ২০১৯-এ বিজেপি এগিয়ে যায়। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের ভোটবাক্সেও ক্ষয় ধরে। ৪৭.৮৮ থেকে তাদের প্রাপ্ত ভোটের হার কমে দাঁড়ায় ৪৫.৮৯ শতাংশ। সেখান থেকেই তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিজেপির উত্থান শুরু বলে মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।

এবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় খোদ নন্দীগ্রামের প্রার্থী হলেও, তাতে তৃণমূলের কতটা সুবিধা হবে তা নিয়েও সন্দিহান তারা। কারণ যে অধিকারী পরিবারের হাতে পূর্ব মেদিনীপুর ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্তে ছিলেন তিনি, এবার গোটা পরিবারই প্রায় পদ্মশিবিরে। নন্দীগ্রামে মমতাকে টক্কর দিচ্ছেন খোদ শুভেন্দু।

খড়্গপুর সদরেও তৃণমূল ছেড়ে আসা অভিনেতা হিরণকে এবং ডেবরায় ভারতী ঘোষকে জেতাতে চেষ্টায় কোনো ত্রুটি রাখছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। খোদ নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ দফায় দফায় এসে তাদের জন্য সভা করে যাচ্ছেন। তবে তৃণমূলে থাকাকালীনই যাদের নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ গড়ে উঠেছিল, তাদের দলে টেনে বিজেপি কতটা সুবিধা করতে পারবে, সে নিয়েও সন্দিহান রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশ।

সূত্র: আনন্দবাজার

আরও পড়ুন ::

Back to top button