করোনার ভয়ে কেউ আসেনি সত্কারে কিন্তু শ্রাদ্ধে খেতে হাজির ১৫০ জন
করোনায় মৃত্যু। সত্কারের জন্য স্বভাবতই কেউ এগিয়ে আসেনি। ৪ দিনের ব্যবধানে বাবা মা দুজনকেই হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছিল বছর সোনি। বাড়িতে ছোটো ছোটো দুই ভাই বোনকে দেখাশোনার দায়িত্বও পড়েছে তার উপরেই। সাহায্যের জন্য দরজায় দরজায় ঘুরলেও কেউ মুখ ফিরে তাকায়নি। শ্রাদ্ধের দিন উল্টো ছবি দেখে তাই ধাক্কা খেয়েছে বছর ১৮-র তরুণী।
বিহারের অররিয়া জেলার বিষ্ণুপুরা গ্রামের বাসিন্দা সোনি। বাড়িতে তার ১৪ বছরের ভাই নীতিশ আর ১২ বছরের বোন চাঁদনীও রয়েছে। সম্প্রতি করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাদের বাবা মা দুজনেই। সেসময় মৃতদেহ সত্কারের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরতে হয়েছিল এই অনাথ শিশুদের। সংক্রমণের ভয়ে কেউ সাহায্য করেননি।
অবশেষে নিরুপায় হয়ে নিজেদের বাড়ির উঠোনেই মায়ের মৃতদেহ কবর দিতে হয়েছে তিন ভাই বোনকে। কিন্তু তিন জনেই অবাক হয়েছে শ্রাদ্ধের দিন। কেন? কারণ দরকারের সময় যে চেনা মুখ গুলো ফিরেও তাকায়নি, ফ্রি-তে খাবার খেতে তারা সকলেই হাজির। ১৫০ জন আত্মীয়স্বজন আর প্রতিবেশী উপস্থিত হয়েছেন শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠানে।
সোনিদের সময়টা গত কয়েকদিন ধরে খুবই খারাপ গেছে। তাদের বাবা স্থানীয় একটি ওষুধের দোকান চালাতেন। গ্রামের লোকজন তাঁকে ডাক্তার সাহেব ডাকতেন। যখন তিনি অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, পরিবারটিকে চিকিত্সার খরচ জোগানোর জন্য নিজেদের গোরু ছাগলও বিক্রি করে দিতে হয়েছে জলের দরে। কারও থেকে এক কানাকড়ি সাহায্য আসেনি। বাবাকে সুস্থ করার চেষ্টায় মায়ের শরীরেও বাসা বাঁধে মারণ এই ভাইরাস।
ঋণে জর্জরিত পরিবার, আর কোনও চিকিত্সা চালানোর সামর্থ্য তাদের ছিল না। চার দিনের মধ্যেই মৃত্যু হয় মায়েরও। বাড়ির উঠোনে কবর দেওয়া ছাড়া আর কোনও রাস্তা খুঁজে পায়নি তিন ভাইবোন। সোনির কথায়, ‘আমাদের তিন জনের কাছে আর কোনও উপায় ছিল না।
আমাদের খাবারও ছিল না। বাবা মা দুজনেই চলে গেছে। আমাদের খুব দুঃখ হয়েছে।’ একমাত্র স্থানীয় সমাজকর্মী প্রভাত যাদব সাহায্য করতে এগিয়ে এসেছিলেন বলে জানিয়েছে সোনি। এছাড়া জেলা প্রশাসনের তরফে কিছু অর্থ সাহায্য করা হয়েছে।
সূত্র : দ্য ওয়াল