মমতার লক্ষ্মীর ভান্ডারের ফর্ম ভরে দিচ্ছে সিপিএম, বিরল দৃশ্য দেখছে মেদিনীপুর শহর
কয়েক বছর আগে সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই একটা স্লোগান দিয়েছিল—’গণ্ডি ছেড়ে বন্ধু বাড়াও।’
নাহ! সেই গণ্ডি আর বাড়েনি। ক্ষয় হতে হতে যখন একুশের নির্বাচন হল, দেখা গেল সিপিএম শূন্য। ভোট শতাংশের তুলনা হতে পারে একমাত্র এসইউসিআইয়ের সঙ্গে। সেই সিপিএম যেন অন্য মুডে ময়দানে নামল পশ্চিম মেদিনীপুরে। রাজ্য সম্পাদক সূর্য মিশ্রর জেলায়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের দুয়ারে সরকার প্রকল্পে যখন ঠাসাঠাসি ভিড় তখন দেখা গেল, ক্যাম্পে আসা সাধারণ মানুষকে সাহায্য করতে লালঝান্ডা নিয়ে পৃথক ক্যাম্প করেছে সিপিএম। সেখানে বসে সিপিএমের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা সাধারণ মানুষের ফর্ম ফিলআপ করে দিচ্ছেন। ঠিক যেমনটা অতীতে দেখা যেত। কলেজে ভর্তির সময়ে এসএফআই ক্যাম্প করেছে, কিংবা মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের অভিভাবকদের জন্য ত্রিপল খাটিয়ে বসার ব্যবস্থা করছে গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি—ঠিক তেমন।
আরো পড়ুন : আবারও বিক্ষোভের মুখে দিলীপ ঘোষ, উত্তরবঙ্গে উড়ল কালো পতাকা
মেদিনীপুর শহরের কর্নেল গোলায় নারায়ণ বিদ্যাভবন বালিকা বিভাগে চলছে দুয়ারে সরকার ক্যাম্প। আর সেই ক্যাম্পের বাইরে সাধারণ মানুষের সাহায্যের জন্য সিপিএমের শাখা অফিসের বাইরে ক্যাম্প করেছে স্থানীয় নেতৃত্ব। তাতে উপচে পড়ছে সাধারণ মানুষের ভিড়। সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির সদস্য সুকুমার আচার্যের বক্তব্য, সরকারের ভাল কাজের সঙ্গে রয়েছেন তাঁরা, কিন্তু যা অন্যায়, ভুল, তা নিয়ে আন্দোলনে লড়াই চলবে। এই ক্যাম্পেই ফর্ম ফিলআপ করিয়েছেন রুমা দাস। গৃহবধূ রুমা বলেন, যে ভাবে সিপিএমের লোকজন ফর্ম ফিলআপে সাহায্য করেছেন তা বলে বোঝানো যাবে না।
রাজনৈতিক বিরোধ ভুলে মানুষের স্বার্থে সবার দাঁড়ানো উচিত। সিপিএমের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে তৃণমূলও। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান দীনেন রায়ের বক্তব্য, ‘এ ধরনের উদ্যোগ খুব ভাল। মানুষের পাশে থাকার কথা সবাই বলে কিন্তু কাজে খুব কম লোকই করেন। সিপিএম সেই কাজ করছে। তাই তাদের ধন্যবাদ জানাই।’ যদিও তৃণমূল সরকারের কর্মসূচিতে সিপিএমের হেল্প ক্যাম্প নিয়ে টিপ্পনি কাটতে ছাড়েনি বিজেপি।
গেরুয়া শিবিরের জেলা সভাপতি সৌমেন তিওয়ারির বক্তব্য, ‘সিপিএমকে মানুষ বর্জন করেছে। ওরা ময়দানে নেই। শুধুমাত্র রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্যই এই কাজ করছে সিপিএম।’ এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই কাজকে অন্য জেলার সিপিএম কী ভাবে দেখছে? হুগলি সিপিএমের সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এই কর্মসূচিতে কোনও অন্যায় নেই। এটা সরকারের কর্মসূচি। সেখানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোটাই উচিত।
আরো পড়ুন : সিবিআই তদন্ত নিয়ে লাফালাফি করে লাভ নেই’, দিলীপকে পাল্টা জবাব ফিরহাদ হাকিমের
আমাদের পার্টির রাজনীতিটাই মানুষের স্বার্থে।’ তিনি এও জানিয়েছেন, হুগলি জেলাতেও সিপিএম এমন ক্যাম্প অনেক জায়গায় করছে। তাঁকে এও প্রশ্ন করা হয়, আগেও তো দুয়ারে সরকার হয়েছে তখন তো সিপিএমকে দেখা যায়নি। ভোটের পর এটা দেখা যাচ্ছে। বিলম্বিত বোধোদয়? জবাবে তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আপনারা উচ্চতর নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।’
প্রসঙ্গত, সিপিএমের মধ্যে এই চর্চা কয়েকদিন ধরেই শুরু হয়েছে। দলের অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, কেন মহিলা সমিতি বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলবে না কী ভাবে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন সাধারণ মহিলারা। কেন এসএফআই যাবে না ছাত্রদের কাছে, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড পাওয়ার নিয়মাবলী বলতে। তবেই তো বৃত্ত বাড়বে।
চারটে নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হবে। এসব নিয়ে যখন হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে চর্চা চলছে তখন দেখা গেল রাস্তায় নেমে দুয়ারে সরকার সামলাচ্ছে লালঝাণ্ডা। অনেকে বলছেন, ফের পার্টির সংকটে মেদিনীপুর লাইন।
সূত্র : দ্য ওয়াল