জাতীয়

ঐতিহাসিক শাহি ঈদগাহ মসজিদে মসজিদে মুসলিমদের প্রবেশ বন্ধে পিটিশন

Shahi Idgah Mosque : ঐতিহাসিক শাহি ঈদগাহ মসজিদে মসজিদে মুসলিমদের প্রবেশ বন্ধে পিটিশন - West Bengal News 24

সপ্তদশ শতাব্দিতে নির্মিত উত্তর প্রদেশের মথুরার ঐতিহাসিক শাহি ঈদগাহ মসজিদে মুসলমানদের প্রবেশ বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে আদালতের কাছে পিটিশন দায়ের করেছেন কট্টর হিন্দুত্ববাদী কয়েকটি গোষ্ঠী সদস্যরা। মসজিদের স্থানে হিন্দু কোনও স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ আছে কিনা তা তদন্ত করে না দেখা পর্যন্ত সেখানে মুসলমানদের প্রবেশ বন্ধে বুধবার আদালতে এই পিটিশন দায়ের করা হয়েছে বলে হিন্দুত্ববাদীদের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।

উত্তর প্রদেশ (ইউপি) রাজ্যের হিন্দু ধর্মীয় শহর মথুরার স্থানীয় আদালতের বিচারকরা পিটিশন আমলে নিয়েছেন। এই পিটিশনের বিষয়ে এখনও শুনানি শুরু হয়নি। তবে সপ্তদশ শতকের শাহি ঈদগাহ মসজিদের ভেতরের ভিডিও ধারণ ও সেখানে জরিপ চালানোর অনুমতি চেয়ে ২০২০ সালের একটি মামলার শুনানি শুরু করেছেন বিচারকরা।

এই মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনজীবী মাহেন্দ্র প্রতাপ বলেছেন, ‘শাহি ঈদগাহ মসজিদের ভেতর থেকে হিন্দু প্রতীকগুলো সরিয়ে ফেলা হতে পারে বলে আমরা সন্দেহ করছি। যে কারণে আমরা চাই আদালত সেখানে মুসলমানদের প্রবেশ স্থগিত করুন।’

চলতি মাসে একই রাজ্যের বারানসির বিখ্যাত জ্ঞানবাপি মসজিদেও মুসলিমদের প্রবেশ বন্ধ চেয়ে আদালতে পিটিশন দায়ের করেছেন হিন্দুত্ববাদীরা। পরে জ্ঞানবাপি মসজিদের ওজুখানার জলাধারে তথাকথিত শিবলিঙ্গ বা ফোয়ারার নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির শীর্ষ আদালত।

একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা বলেছেন, বারানসির জ্ঞানবাপি মসজিদে মুসলমানদের নামাজ পড়তে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। এই মসজিদের ভেতরেও পরিদর্শনকারী একটি দলকে ঢুকে ভিডিও ধারণ ও অনুসন্ধানের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। ভারতের হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক ঘাঁটি উত্তর প্রদেশের প্রাচীন শহর বারানসি।

নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সাথে সংশ্লিষ্ট দেশটির কট্টরপন্থী হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর সদস্যদের বিশ্বাস— ইসলামিক আক্রমণকারীরা তাদের ২০০ বছরের শাসনামলে ভারতে বিভিন্ন হিন্দু মন্দির ধ্বংস করেছেন।

মথুরার শাহি ঈদগাহ মসজিদের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলোর আইনজীবী রঞ্জনা অগ্নিহোত্রী বলেন, ‌‘আমরা বিশ্বাস করি, নিজেদের আধিপত্য প্রমাণের জন্য মুসলিম শাসকরা একটি মন্দির ধ্বংস করার পর শাহি ঈদগাহ মসজিদ নির্মাণ করেছেন। এই মসজিদের ভেতরে হিন্দু দেবতার মূর্তি আছে।’

বারানসির মসজিদের সাথে সংশ্লিষ্ট জরিপকারীরা বলেছেন, তারা জ্ঞানবাপি মসজিদের ভেতরে হিন্দু দেবতা শিবের একটি বৃহৎ ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পেয়েছেন। কিন্তু সেখানকার মুসলিম গোষ্ঠীগুলো বলছে, ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়ানোর জন্য একটি ফোয়ারাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

মসজিদের ভেতরে মূর্তি পাওয়ার খবর রটে যাওয়ায় দেশটির পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলীয় বিভিন্ন রাজ্যের হিন্দু গোষ্ঠীগুলো অন্যান্য মসজিদেও অনুসন্ধানের দাবি তুলেছে। আওরঙ্গবাদ শহরের পুলিশ বলেছে, আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল এমএনএসের সদস্যরা মুঘল শাসক আওরঙ্গজেবের সমাধি ধ্বংসের হুমকি দেওয়ার পর তারা কবরের চারপাশে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। মুঘল শাসক আওরঙ্গজেব হিন্দুবিরোধী ছিলেন বলে এমএনএসের সদস্যদের বিশ্বাস।

সম্প্রতি এই রাজনৈতিক দল মহারাষ্ট্র সরকারকে মসজিদের মাইকে আজান দেওয়ার বিষয়ে নতুন বিধি-নিষেধ জারি করতে বাধ্য করেছে। মসজিদের বাইরে হিন্দুরা পুজা করার হুমকি দেওয়ার পর মহারাষ্ট্র সরকার আজানের সময় মাইকের আওয়াজ কমিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।

দেশের মুসলিম রাজনৈতিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন গোষ্ঠী বলছে, তারা মসজিদ ও সমাধির পবিত্রতা নষ্টকারী হিন্দু গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে। দেশটির ফেডারেল আইনপ্রণেতা ও হায়দরাবাদের একটি আঞ্চলিক ইসলামি রাজনৈতিক দলের নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, ‘আমরা (মুসলমানরা) হিন্দুদেরকে আমাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং মসজিদের অপমান করতে দেব না।’

আরও পড়ুন ::

Back to top button