নদীয়া

কৃষ্ণনগরে প্রথম হেরিটেজ ওয়াক

কৃষ্ণনগরে প্রথম হেরিটেজ ওয়াক

২২ জানুয়ারি ২০২৩ (রবিবার) দিনটি কৃষ্ণনগর শহরের জন্য বিশেষ হয়ে রইল, কারণ এই প্রথম কৃষ্ণনগর শহরে সুসংগঠিত ভাবে ‘হেরিটেজ ওয়াক কৃষ্ণনগর’-এর আয়োজন করা হয়েছিল। ২২ জানুয়ারি ২০২৩ (রবিবার) সকালে নদিয়া জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগরের রাস্তায় একদল শিক্ষার্থী বেরিয়ে পড়েছিল ঐতিহ্যের অনুসন্ধানে। সেই দলে ছিল একাধিক কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা। তারা এদিন কৃষ্ণনগরের ইতিহাস অনুসন্ধান করতে সরেজমিনে বার হয়ে পড়েছিল।

মধ্যযুগে নগর চরিত্র পাওয়া কৃষ্ণনগর শহরের ঐতিহাসিক জায়গাগুলি ঘুরে দেখে এবং সেই জায়গাগুলির ইতিহাস অনুধাবন করে তারা এদিন একবুক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে। হেরিটেজ ভবনগুলির জীর্ণ দশা দেখে তাদের অনেকে নিজেদের ব্যথিত চিত্তকেও জাহির করে। কৃষ্ণনগর শহরের ঐতিহ্যগুলি ঘুরে দেখার এই সমগ্র কর্মকাণ্ডের নাম দেওয়া হয়েছিল— ‘হেরিটেজ ওয়াক কৃষ্ণনগর’।

কৃষ্ণনগরে প্রথম হেরিটেজ ওয়াক

কখনো দু’পা হেঁটে, কখনো বা টোটো গাড়ি চেপে তারা সমগ্র কৃষ্ণনগর শহর এদিন চষে বেড়ায়। এইভাবে কৃষ্ণনগর শহরকে দেখা, বলা ভালো ‘হেরিটেজ ওয়াক কৃষ্ণনগর’ নাম দিয়ে এই রকম উদ্যোগ কৃষ্ণনগরের মাটিতে এই প্রথম দেখা গেলো। সেদিক থেকে ঐতিহাসিক স্মারকগুলি ঘুরে দেখার এই দিনটিও ছিল ঐতিহাসিক।

কৃষ্ণনগরের হেরিটেজগুলি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা এবং সেগুলি সকলকে দেখানোর সমগ্র এই পরিকল্পনাটি যিনি নিয়েছিলেন, তিনি দীপাঞ্জন দে। তিনি নিজে আঞ্চলিক ইতিহাসের একজন অনুসন্ধিৎসু গবেষক। তিনি ‘হেরিটেজ ওয়াক কৃষ্ণনগর’ সম্পর্কে বলেন— “আমরা সকলে আজ কৃষ্ণনগরের ইতিহাস অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছি।

কৃষ্ণনগরে প্রথম হেরিটেজ ওয়াক

পর্যটকদের অনেকেই কৃষ্ণনগরে ঘুরতে এলে কেবলমাত্র দু-একটি জায়গা দেখেই ফিরে যান। কিন্তু কৃষ্ণনগরে একাধিক ঐতিহাসিক ভবন রয়েছে, যেগুলি সম্পর্কে আমরা উদাসীন। সেগুলি সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার উদ্দেশ্য নিয়েই আজকের এই হেরিটেজ ওয়াক।” দীপাঞ্জন দে-র নেতৃত্বে এদিন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দল এক অনন্য অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়।

রবিবাসরীয় সকালে ৮:৩০ নাগাদ কৃষ্ণনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে তাদের হেরিটেজ ওয়াক শুরু হয়। প্রথমে যাওয়া হয় কৃষ্ণনগরের সবথেকে পরিচিত জায়গা— মৃৎশিল্পের রাজধানী ঘূর্ণিতে। সেখানে মৃৎশিল্পের নিদর্শন ঘুরে দেখতে দেখতে কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পের ইতিহাস সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের অবগত করেন তাদের শিক্ষক দীপাঞ্জন দে। আঞ্চলিক ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী যে কেও এই কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারেন, সেভাবেই ‘হেরিটেজ ওয়াক কৃষ্ণনগর’-এর পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন।

কৃষ্ণনগরে প্রথম হেরিটেজ ওয়াক

নদিয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যেমন অংশগ্রহণকারীরা এসেছিলেন, তেমনি জেলার বাইরে থেকেও এদিন আঞ্চলিক ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী মানুষদের ‘হেরিটেজ ওয়াক কৃষ্ণনগর’-এ অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। তাদের দলের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘দীপাঞ্জন দে ও সঙ্গীরা’।

‘হেরিটেজ ওয়াক কৃষ্ণনগর’-এর জন্য নির্ধারিত ২২ জানুয়ারি দিনটিও একপ্রকার বিশেষ বলা চলে। প্রখ্যাত সাহিত্যিক, সুরসাধক দিলীপকুমার রায়ের ১২৬ তম জন্মদিবস ছিল এদিন। এহেন দিনটিকেই বেছে নেওয়া হয়েছিল ‘হেরিটেজ ওয়াক কৃষ্ণনগর’-এর জন্য। ঘূর্ণির মৃৎশিল্প দেখার পরে যাওয়া হয় পরবর্তী গন্তব্য— বঙ্গের গৌরব ব্যারিস্টার মনোমোহন ঘোষের নিবাস কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলে।

কৃষ্ণনগরে প্রথম হেরিটেজ ওয়াক

সেখান থেকে বার হয়ে শহরের অন্যান্য ঐতিহাসিক ভবনগুলি দেখতে যাওয়া হয়। দেখে নেওয়া হয় ১৭৬৯ শকাব্দে স্থাপিত ঐতিহাসিক কৃষ্ণনগর ব্রাহ্মসমাজ, যেটি কৃষ্ণনগরের আমিনবাজার এলাকায় অবস্থিত। এরপর একে একে ঘুরে নেওয়া হয় কৃষ্ণনগর রাজবাড়ি, পীরতলা, আনন্দময়ী তলা, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের জন্মভিটে, রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য রানিকুঠি, কৃষ্ণনগর ক্যাথিড্রাল, খ্রিস্ট মন্দির, লুপ্তপ্রায় অঞ্জনা নদী, কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিধন্য গ্রেস কটেজ প্রভৃতি।

কৃষ্ণনগরে প্রথম হেরিটেজ ওয়াক

গ্রেস কটেজ পরিদর্শনের মধ্যে দিয়েই প্রথম ‘হেরিটেজ ওয়াক কৃষ্ণনগর’-এর পরিসমাপ্তি হয়। এই ধরনের উদ্যোগ আগামীদিনে আরো বেশি করে হলে আঞ্চলিক ইতিহাসের প্রতি মানুষের উদাসীনতা কিছুটা হলেও কমবে বলে মনে হয় এবং আমাদের ঐতিহ্যও রক্ষা পাবে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button