২৮ জানুয়ারি ২০২৩ (শনিবার) নদিয়া জেলার সদর শহর কৃষ্ণনগরে ‘মুক্তধারা’-র ৪৪তম আলোচনাসত্র অনুষ্ঠিত হল। এদিনের আলোচনাসত্রের বিষয় ছিল ‘ডাক্তার হৈমবতী সেন — উনিশ শতকের এক অ-নন্দিত মানবী সত্তা’। আলোচক ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা এবং মুক্তধারার অন্যতম সদস্য পঞ্চশীলা মজুমদার।
উনিশ শতকের একজন উল্লেখযোগ্য মহিলা ডাক্তার হওয়া সত্ত্বেও হৈমবতী সেন সম্পর্কে খুব বেশি আলোচনা হয় না। সমকালের অন্যান্য বিশিষ্ট নারী ব্যক্তিত্বদের মধ্যে হৈমবতী সেনের নাম অনেক ক্ষেত্রেই অনুল্লেখিত থেকে যায়। কিন্তু তৎকালীন সময়ে যে সকল সামাজিক প্রতিবন্ধকতাকে অতিক্রম করে তিনি জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন, সেগুলি সকলের জানা প্রয়োজন।
‘মুক্তধারা’-র ৪৪তম আলোচনাসত্রের বিষয় হিসেবে নারী ইতিহাসের এমন একটি অধ্যায় উপস্থাপনা অনেকেরই ভালো লাগে। ডাক্তার হৈমবতী সেন সম্পর্কে দর্শক-শ্রোতাদের অনেকেই নতুন ভাবে জানতে পারেন এবং এতে তারা আপ্লুত হন। এই ধরনের বিষয় নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে মুক্তধারা যেন আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল।
আসলে ডা: হৈমবতী সেন সাধারণ মানুষ বিশেষ করে সমাজের নিম্নবর্গের মানুষদের চিকিৎসা পরিষেবা দিয়ে, অবহেলিতদের পাশে দাঁড়িয়ে, এমনকি যারা হৃত সর্বস্ব তাদের নিজের কাছে আশ্রয় দিয়ে এমন কিছু উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন, যা সে যুগের প্রেক্ষিতে ব্যতিক্রম বলা চলে। তাঁর এধরনের অনবদ্য কিছু কাজের জন্যই সাধারণ মানুষের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ডাক্তার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন।
ডাক্তার হৈমবতী সেনের জীবনের এহেন বহুবিধ বিষয় নিয়েই আলোচক পঞ্চশীলা মজুমদার এদিন আলোচনা করেন। তিনি বলেন যে, ডাক্তার হৈমবতী সেন সম্পর্কে এ ধরনের আরো অনেক আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। ‘মুক্তধারা’-র ৪৪তম আলোচনাসত্রে সেই ধরনেরই এক প্রচেষ্টা এদিন লক্ষ্য করা গেল।
মুক্তধারার পক্ষ থেকে এদিনের আলোচনাসত্রের আহ্বায়ক ছিলেন সম্পদনারায়ণ ধর, তপনকুমার ভট্টাচার্য এবং দীপাঞ্জন দে। কৃষ্ণনগরের সাংস্কৃতিক সংস্থা ‘মুক্তধারা’-র ৪৪তম আলোচনাসত্র ছিল এটি। পূর্বের ন্যায় এবারও কৃষ্ণনগর পৌরসভার দ্বিজেন্দ্র মঞ্চে মুক্তধারার আলোচনাসত্রটি বসেছিল।
আলোচনাসত্র শুনতে বহু মানুষ উপস্থিত হয়েছিলেন। অন্যান্য বারের মতোই মুক্তধারার প্রথা মেনে ৪৪তম আলোচনাসত্রের শুরুতে একটি উদ্বোধন সংগীত পরিবেশিত হয়। এদিনের বিষয়ের সঙ্গে সাজুজ্য রেখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “আমি মারের সাগর পাড়ি দেব বিষম ঝড়ের বায়ে, আমার ভয়ভাঙা এই নায়ে” গানটি নির্বাচন করা হয়েছিল।
সংগীতশিল্পী ঐশ্বর্য মজুমদারের কণ্ঠে গানটি পরিবেশিত হয়, যা অনুষ্ঠানের শোভা বর্ধন করে। এদিনের সমগ্র অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন মুক্তধারার অন্যতম সদস্য শুভময় সরকার। দ্বিজেন্দ্র মঞ্চে প্রায় ঘন্টা দেড়েকের সমগ্র অনুষ্ঠানটি সকলে মন দিয়েই উপভোগ করেছে বলে মনে হচ্ছে।
লেখক: আঞ্চলিক ইতিহাস লেখক, নদিয়া।