তীব্র দাবদাহে চাষীদের কি কি করণীয় জানালেন উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক ড. সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া
তীব্র দাবদাহে নাজেহাল গোটা রাজ্যবাসি।ক্রমশ বেড়েই চলেছে তাপমাত্রার পারদ। আবহাওয়া দফতর আগেই পূর্বাভাস দিয়েছিল, এই সময় বৃষ্টির দেখা মিলবে না। কালবৈশাখীর কোনও সম্ভাবনা নেই। উল্টে প্রতিদিনই ২ ডিগ্রি থেকে ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা বাড়তে পারে রাজ্যের একাধিক জেলায়। আর সেই কথা সত্য প্রমাণ করে ইতিমধ্যেই ৪২ ডিগ্রি ছাড়িয়ে গেল আসানসোল। বৃহস্পতিবার আসানসোলের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২.২ ডিগ্রি। এটিই রাজ্যের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।
আবহাওয়া দফতরের রিপোর্ট অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার আরও পাঁচটি জেলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি ছাড়িয়েছে। সেগুলি হল বাঁকুড়া, বর্ধমান, কলাকাতা (সল্টলেক), মেদিনীপুর এবং বীরভূমের শ্রীনিকেতন। আর ৪০ ডিগ্রি ছুঁয়েছে পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, কৃষ্ণনগর, কলকাতা-আলিপুর।
একাধিক জেলায় তাপমাত্রা প্রায় চল্লিশ ডিগ্রির আশপাশে ছিল। যা দু’দিন আগেও ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি ছিল। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, তাপ প্রবাহের কারণে প্রতিদিনই ২ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটতে পারে। সেটাই হয়েছে চলেছে এবার।
এবার দেখা যাক কোথায় কত সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল বৃহস্পতিবার। আসানসোল (৪২.২), বাঁকুড়া (৪১.৬), বিষ্ণপুর (৪১.৬), বর্ধমান (৪১.৪), ডায়মন্ড হারবার (৩৯.৪), দিঘা (৩৯.৮), কলকাতা আলিপুর (৪০.৫), কলকাতা দমদম (৩৯.৫), কলকাতা সল্টলেক (৪১.১), অশোকনগর (৩৯), কৃষ্ণনগর (৪০.২), মেদিনীপুর (৪১), মুর্শিদাবাদ (৪০.৭), মালদা (৩৯.৩), পুরুলিয়া (৪০.৭), বোলপুর শান্তিনিকেতন (৩৯.৬), শ্রীনিকেতন (৪১)।
এব্যাপারে কৃষকদের কী করণীয়? সে ব্যাপারে জানিয়েছে উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক ড. সমরেন্দ্রনাথ খাঁড়া। এই সময় চাষিদের কোন কোন বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে?
আবহাওয়া জনিত সতর্কতা গুলি হল:-
- মাঠের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বেলা ১১ টা থেকে বিকেল ৪ টে পর্যন্ত মাঠের কাজকর্ম সীমিত রাখুন।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করুন এবং প্রয়োজনে ORS পান করা যেতে পারে।
- মাঠের কাজের জন্য বাইরে বেরোনোর সময় সুতির ঢিলেঢালা পোশাক এবং টুপি অথবা ছাতা অবশ্যই ব্যবহার করুন।
- উদ্যানজাত ফসলের ক্ষেত্রে সেচ সকালে ও বিকেলে দিতে হবে, যখন তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত কম থাকবে।
- ফসল তোলার ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব সকাল ও বিকেল বেলায় ফসল তুলে গুদামজাত করতে হবে।
- ফলদায়ী ফসলের ক্ষেত্রে সেচ পরবর্তী পর্যায়ে মাটিতে যে কোনো প্রকারের জৈব আচ্ছাদন (বিচুলি, শুকনো পাতা ইত্যাদি), অজৈব আচ্ছাদন (পলি মালচিং) ব্যবহার করতে হবে। যাতে জলের অপচয় কম হয়। এছাড়া ফলন্ত আম ইত্যাদি গাছের ক্ষেত্রে সুবিধামতো সাধারণ জল স্প্রে করলে উপকার পাওয়া যাবে।
- উদ্যানজাত ফসলের ক্ষেত্রে বিশেষ করে জল সংরক্ষণকারী সেচ ব্যবস্থা (কলসি সেচ, ড্রিপ, স্প্রিঙ্কলার ইত্যাদি) গ্রহণ করা যেতে পারে, যাতে জলের অপচয় এবং কায়িক পরিশ্রম অনেকটাই কম হয়।
- উদ্যানজাত ফসলের ক্ষেত্রে উত্তম রুপে পচানো জৈবসার গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করা যেতে পারে যা জল সংরক্ষণ এবং পুষ্টিপ্রদান দুটো কাৰ্যই সমপূর্ণ করবে।
- হিট স্ট্রোক বা অন্যান্য তাপপ্রবাহ জনিত কোনো উপসর্গ দেখা দিলে অবশ্যই নিকটবর্তী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।
- এছাড়া উদ্যানপালন সংক্রান্ত বিশদ পরামর্শের জন্য জেলা উদ্যানপালন কাৰ্যালয়ে যোগাযোগ করুন।