অবশেষে লড়াই জিতে ফিরলেন বর্ধমানের রেণু
পারিবারিক হিংসা থেকে মহিলাদের সুরক্ষা দেয়া সংক্রান্ত আইন ২০০৫ সালে বিধিবদ্ধ করা হয়। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই আইনটি ২০০৬ সালের পঁচিশ অক্টোবর কার্যকর হয়। ক্রমবর্ধমান পারিবারিক হিংসার কবল থেকে মহিলাদের নিশ্চিত সুরক্ষা দেওয়াই এই আইনের প্রধান লক্ষ্য। আশা করা হয় সরকারসমূহ এই আইন প্রয়োগের মাধ্যমে পারিবারিক হিংসার আক্রমণ থেকে মহিলাদের সুরক্ষা দিতে পারবে। ওই মহিলা একটি যৌথ পরিবারের একজন বিবাহিতা স্ত্রী হবেন এমন কথা নয়। যৌথ পরিবারের কোনো মহিলা ওই পরিবারের যে-কোনো সদস্য (পুরুষ বা মহিলা) দ্বারা নির্যাতিত হলে এই আইনে মামলা করতে পারেন। আবার একজন মহিলা একজন পুরুষের সঙ্গে স্বামী-স্ত্রী রূপে বসবাস কালে যদি কোনোভাবে নির্যাতিত হন তাহলে ওই পুরুষ এবং পরিবার যদি যৌথ হয় এবং যদি ওই পরিবারের অন্য কোনো মহিলা বা পুরুষ সদস্য ওই মহিলার উপর অত্যাচার করেন তাহলে তিনিও এই মামলার আওতায় আসবেন। এই ক্ষেত্রে এটা বিচার্য বিষয় হবে, ওই মহিলা ও পুরুষ আইনসঙ্গতভাবে বিবাহিত কিনা।
পারিবারিক হিংসায় হাত কাটা যাওয়ার প্রায় ১০ মাস পরে, কৃত্রিম হাত পেলেন পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রামের রেণু খাতুন। শুক্রবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে তাঁর কৃত্রিম হাত জোড়া হয়। এ দিনই তিনি সেই হাতে লিখতে পেরেছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। বর্ধমানের সরকারি নার্সিং কলেজে কর্মরত রেণু বলেন, ‘একটা লড়াই শেষ হল।যাঁরা আমার পাশে থেকেছেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।”
নার্সের সরকারি চাকরিতে যাতে যোগ দিতে না পারেন, সে জন্য রাতে ঘুমন্ত রেণুর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে তাঁর ডান হাতের কব্জি কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল স্বামী ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। ছয় অভিযুক্তের মধ্যে রেণুর স্বামী শের মহম্মদ এখন জেল হেফাজতে রয়েছেন। বাকিরা জামিনে মুক্ত। জেলাশাসক (পূর্ব বর্ধমান) প্রিয়াঙ্কা সিংলা এ দিন বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রেণুর কৃত্রিম হাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।” পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের তহবিল থেকে সে জন্য প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছে।
বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ কৌস্তভ নায়েক বলেন, ”কৃত্রিম হাত জোড়ার আগে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে সব কাজই করতে পারবেন রেণু।” হাসপাতালের ‘ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন’ বিভাগের প্রধান ক্ষেত্রমাধব দাশ বলেন, ‘চিকিত্সার মাধ্যমে রেণুর ডান হাতের অবশিষ্ট অংশকে আধুনিক কৃত্রিম হাতের উপযোগী করে তোলা হয়েছিল। প্রতিস্থাপনের পরে আমার কাছে বসে সেই হাতে কলম ধরে তিনি লিখেছেন। তবে চিকিত্সা এখনও চলবে।”
রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘রেণুর কৃত্রিম হাতের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা সুপারিশ করেছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন। তাঁকে ধন্যবাদ। পারিবারিক হিংসা রোধের মুখ হিসেবে রেণুকে আমরা সংবর্ধনা দেব।” ঘটনার পরে রেণু বাঁ হাতে লেখা অভ্যাস করেছিলেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘হাত প্রতিস্থাপনের আগে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। ডান ও বাঁ, দু’হাতেই এখন লিখতে পারছি। যেন মনে হচ্ছে, সব্যসাচী হয়ে উঠলাম!”