বাবা মা-র যে ৭ কারণে শিশুরা ভবিষ্যতে নেতৃত্বদান করতে পারে না
শিশুরা কাদামাটির মত। যেভাবে গড়া যায়,সেভাবেই তারা বেড়ে উঠে। কিন্তু মা বাবার পক্ষ থেকে এমন কিছু কারন আছে যা শিশুদের ভবিষ্যৎ নেতা হয়ে উঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
আমরা আমাদের শিশুদেরকে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ঝুঁকি নিতে দেইনা
আমরা এমন একটি দুনিয়ায় বাস করি যার প্রত্যেক বাঁকেই বিপদ। এই বিপদের ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হয়। যেহেতু “নিরাপত্তা হচ্ছে প্রথম অগ্রাধিকার” এ কারনেই আমরা আমাদের বাচ্চাদের সব ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে সব ধরনের চেষ্টা করি। কিন্তু এর একটি বিরূপ ফলও আছে। যদি একটি শিশুকে বাইরে খেলতে দেয়া না হয় এবং কখনো একটি শিশুকে যদি ব্যথা পাওয়া হাঁটু কী তা অনুভব করতে দেয়া না হয় তাহলে সে ভীতু হবে। বাচ্চাদের আসলে কয়েক বার পড়ে গিয়েই শিখতে হয়। এছাড়া তরুণ বয়সে সম্ভবত একটি বয়ফ্রেন্ড বা বান্ধবী-এর সাথে সম্পর্ক ভাঙতে আবেগের পরিপক্বতাও থাকতে হয় এবং মূল্যায়ন করতে শিখতে হয় কীভাবে আসলে স্থায়ী-সম্পর্ক শক্ত করতে হয়। তাই বাবা-মা যদি শিশুদের জীবন থেকে ঝুঁকি সরিয়ে নিয়ে আশা করে তাদের সন্তানরা নেতৃত্ব দান করবে- এমন স্বপ্ন দেখা আসলেই ঠিক নয়।
আমরা খুব তাড়াতাড়ি উদ্ধার করি
আজকের তরুনরা তাদের জীবনের দক্ষতা অর্জনের জন্য কিছুই করছে না, যা ৩০ বছর আগের বাচ্চারা করত। কারন এখনকার পূর্ণবয়ষ্করা তাদের সন্তানদের সব সমস্যা নিজের কাঁধে নেয়। কিন্তু যখন আমরা এগিয়ে আসি এবং সমস্যা থেকে তাদের তাড়াতাড়ি উদ্ধার করি তখন তাদের মধ্যে নিজস্ব সমস্যা সমাধানের সক্ষমতা গড়ে উঠে না। এটা স্বল্প মেয়াদি শিশুদের মানুষ করার একটা কৌশল হলেও দারুণভাবে তাদেরকে নেতৃত্ব দেয়ার কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। ফলে আমাদের গড়ে তোলা নিষ্ক্রিয় শিশু কীভাবে নেতৃত্বদান করবে?
আমরা সহজে রেগে যাই
শিশুরা প্রায় পর্যবেক্ষণ করে থাকে যে তাদের মা আর বাবারা হচ্ছেন একমাত্র মানুষ যারা ধরে নেন তাদের সন্তানই সেরা। কিন্তু বাইরে মানুষ এমন কিছু বলে না। ফলে এক সময় তারা তাদের বাবা-মার বস্তুনিষ্ঠতা সন্দেহ করতে শুরু করে। বাস্তবতা তখন মূর্ত হয়ে উঠে। এছাড়া যখন শিশুরা দেখে যে, মা বা বাবা সহজেই রেগে যায় এবং বাজে ব্যবহার উপেক্ষা করে, তখন শিশুরা প্রতারণা করতে, অতিরঞ্জিত করতে, মিথ্যা বলতে আর কঠিন বাস্তবতা এড়াতে শিখে। এমন শিশু নিশ্চয়ই নেতৃত্ব দিতে পারে না।
তাদের দোষকে ভাল দিক নির্দেশনা দিতে পারা
শিশুকে প্রত্যেক মিনিট ভালোবাসতে হবে তা নয়। তাই তাদেরকে ‘ না বা ‘এখন না’ বলুন। প্রয়োজনীয়তা এবং চাওয়ার ব্যাপারে তাদের লড়তে দিন। যখন একাধিক সন্তান থাকে তখন আমরা মা বাবা হিসেবে ভাবি একজনকে পুরস্কৃত করা ঠিক নয়। আসলে এটা ভুল ধারনা। কারন, সবাইকে পুরস্কৃত করলে আমাদের সন্তান বুঝতে পারবে না যে, আমাদের কাজ এবং ভালো গুনের উপরেই নির্ভর করে সাফল্য। পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য তাদের পুরষ্কার হিসেবে তাদের মার্কেটে ঘুরতে নিয়ে যাবেন এমন প্রতিশ্রুতি দেয়া যাবে না। যদি পণ্য বা বস্তুর উপর নির্ভর করে সম্পর্ক গড়ে উঠে তবে আপনার বাচ্চা বুঝতে পারবে না সহজাত প্রেরনা অথবা নিঃশর্ত ভালোবাসার মূল্য।
আমরা আমাদের আগের ভুলগুলো বলি না
উদ্যম তরুণরা নিজেদের ডানা প্রসার করতে চায় এবং এটা তারা তাদের নিজেদের প্রয়োজনেই করে থাকে। পূর্ণবয়ষ্ক মানুষ হিসেবে আমাদের উচিৎ তাদেরকে সমর্থন দেয়া। আর আমাদের জীবনের ভুলগুলো নিয়েও তাদের অভিহিত করা উচিৎ, যা তাদেরকে ভাল কিছু পেতে সাহায্য করবে।
প্রতিভা, বুদ্ধিমত্তা এবং পরিপক্বতার জন্য প্রভাব নিয়ে আমাদের ভুল ধারনা
বুদ্ধিদিপ্ততা সবসময়ই একটি শিশুর পরিপক্বতার একটি মাপকাঠি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর, বাবা-মারা মনে করেন বুদ্ধিমান শিশুরাই শুধু নেতৃত্বদান করে। এটা আসল কথা নয়। উদাহরনস্বরূপ, কিছু পেশাদারী ক্রীড়াবিদ আর হলিউড ক্ষুদে তারকা, এরা কল্পনাতীত প্রতিভা দেখায়। কিন্তু স্ক্যান্ডালে এরাও জড়িয়ে পড়ে। এর কারন প্রতিভা জীবনের একটি মাত্র ক্ষেত্রেই দেখা যায়, সকল ক্ষেত্রে নয়। নির্দিষ্ট বয়সে শিশুদের নির্দিষ্ট স্বাধীনতা দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। মূল কথা হচ্ছে, অন্য শিশুদের সাথে আপনার শিশুর বেড়ে উঠা পর্যবেক্ষণ আমরা করি না। যদি আপনি লক্ষ্য করেন যে, তারা আপনার শিশুর থেকেও বেশি কিছু করছে, তাহলে আপনি আপনার শিশুর স্বনির্ভরতা দিতে হয়তো দেরী করে ফেলছেন।
আমাদের উপদেশ আমরাই মানি না
বাবা-মা হিসেবে, এটা আমাদের দায়িত্ব আমাদের শিশুদের জীবনটাকে গড়ে দেয়া। তাদের চরিত্র গঠনেও সাহায্য করা উচিৎ। এই শিক্ষা ঘর থেকেই শুরু করতে হবে। সংসারের মূল কর্তা হিসেবে, আমরা একমাত্র সৎ কথা বলা দিয়ে শুরু করতে পারি। সেবা ধর্মী কাজগুলোতে তাদের উৎসাহিত না করা আমাদের একটি ভুল।