জানা-অজানা

মৃত্যুর পরও যেভাবে মানুষের অনুভূতি কাজ করে

মৃত্যুর পরও যেভাবে মানুষের অনুভূতি কাজ করে - West Bengal News 24

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, মৃত্যু মূলত হৃদযন্ত্রের থেমে যাওয়া। এতে শরীরের রক্ত প্রবাহ, শ্বাস-প্রশ্বাস, এবং মস্তিষ্কের কাজও থেমে যায়। ভাববাদী দৃষ্টিকোণ থেকে মৃত্যু এমন একটা অবস্থান, যা থেকে আর ফেরা যায় না। এই দু’টি দৃষ্টিভঙ্গি কম-বেশি একই রকম কথাই বলে। অন্ততপক্ষে ৫০ বছর আগে কার্ডিয়াক-পালমোনারি রিসাসসিটেশনের (সিপিআর) উদ্ভবের আগে এমনটিই বলা যেত। কিন্তু সিপিআর বা হৃদ-ফুসফুস পুনরুজ্জীবন পদ্ধতি উদ্ভাবনের ফলে এখন কারও হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মৃত্যু হলেও তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে (সব সময় নয়)। পুনরুজ্জীবনের এ আধুনিক পদ্ধতি চিকিৎসা বিজ্ঞানের জরুরি সেবা ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছে। কিন্তু একই সঙ্গে মৃত্যু বিষয়ক এতোদিনের ভাবনাকে করেছে দ্বিধা বিভক্ত।

চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, সব সময় এই পদ্ধতিতে ঘোষিত মৃত ব্যক্তিকে পুনরায় জীবিত করা সম্ভব নয়। ফলে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি ধারণা তৈরি হয়েছে যে, শারীরিক মৃত্যুর সাথে সাথে জীবের চৈতন্যও লোপ পায়। কিন্তু গত কয়েক বছরের বিভিন্ন গবেষণা থেকে দেখা গেছে-মৃত্যুর পরও মস্তিষ্কের কোষগুলো কয়েক দিন, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে এর চেয়েও বেশি সময়ের জন্য কার্যক্ষম থাকে। এর মানে এই নয় যে, মৃত্যু ঘটেনি। মৃত্যু ঘটেছে, কিন্তু মস্তিষ্কের কোষগুলো সম্ভবত ঠিক তখনই মরেনি। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাংগন মেডিকেল কেন্দ্রের সংকটকালীন সেবা ও পুনরুজ্জীবন বিষয়ক পরিচালক ড. স্যাম পার্নিয়া বলেন, সবচেয়ে চিত্তার্ষক বিষয় হচ্ছে, মৃত্যুর পর শরীরের বিভিন্ন অংশ তাদের নিজস্ব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়। তিনি আরও বলেন, আমি বলবো না, মারা যাওয়ার পর মস্তিষ্ক অথবা শরীরের অন্য কোনো অংশ কাজ করছে। কিন্তু শরীরে কোষগুলো তৎক্ষণাৎই জীবিত থেকে মৃত হয়ে যায় না। প্রকৃতপক্ষে, হৃদযন্ত্রের বন্ধ হওয়ার তুলনায় কোষগুলো অনেক বেশি প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞানের অধ্যাপক পিটার নোবেল জানান, মৃত্যুর পরও সক্রিয় জিনগুলোর কার্যকলাপ দেখতে বহু দিন ধরেই বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন। জিনের এই বিষয়টি দেখতে নোবেল ও তার সহকর্মীরা ইঁদুর ও জেব্রা মাছের ওপর গবেষণা চালান। এ নিয়ে তাদের লেখা একটি প্রবন্ধ ২০১৭ সালে ওপেন বায়োলজি নামের একটি বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়েছে, শুধু মুষ্ঠিমেয় কিছু জিন নয়, প্রায় ১০৬৩টি জিনকে মৃত্যুর চারদিন পরও সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে। নোবেল বলেন, আমরা এ ধরনের কিছু দেখতে পাবো, তা আশা করিনি। কল্পনা করতে পারেন, মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পরও অনুলিপি তৈরির মাধ্যমে বস্তুতপক্ষে জিনের সংখ্যা বেড়েছে? এটা বিষ্ময়কর ব্যাপার? নোবেল জানান, এর মধ্যে কিছু জিন ছিল, যারা দেহের ক্রমবিকাশ ঘটাতে সক্ষম। নোবেলের এ তথ্য মৃত্যুর পর জীবন চক্রের শুরু ভ্রুণ অবস্থায় ফিরে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে সামনে নিয়ে আসছে। নোবেল দেখতে পান, প্রাণীর মৃত্যুর পরও কিছু কোষ সপ্তাহ খানেক কর্মক্ষম থাকে। তার বক্তব্য অনুসারে বলতে হয়; একবারে নয়, জীবের শরীরের বিভিন্ন অংশ এর নিজস্ব হারে ধাপে ধাপে মারা যায়।

ঠিক কী কারণে দেহের কিছু কোষ প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলায় অধিকতর সক্ষম, তা এখনও পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ২০১৬ সালে কানাডিয়ান জার্নাল অব বায়োলজিক্যাল সাইন্সেস নামের বিজ্ঞান সাময়িকী একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে লেখা হয়েছে, ডাক্তাররা মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া চার রোগীর লাইফ সাপোর্ট খুলে নেয়। এরপরও প্রায় ১০ মিনিট যাবৎ একজন রোগী কাছ থেকে ডেল্টা তরঙ্গ নিঃসরণের ঘটনা ধরা পড়েছিল। ডেল্টা তরঙ্গ গভীর ঘুমে থাকা অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্ক থেকে নিঃসরিত হয়ে থাকে। এ সময় ওই রোগীর হৃদস্পন্দন বা নাড়ির গতি পাওয়া যায়নি, কিংবা চোখের তারার প্রসারণও ঘটেনি। ড. স্যাম পার্নিয়া গবেষণা হতে দেখা যায়, চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুসারে মৃত অবস্থা থেকে ফিরে আসা ব্যক্তিরা বিচিত্র ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বলে থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে উজ্জ্বল আলো দেখা পাওয়া, কোনো পুণ্যাত্মা পথ দেখিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, শারীরিক বেদনা থেকে মুক্তি, প্রগাঢ় প্রশান্তি ইত্যাদি। কিন্তু এ অভিজ্ঞতাগুলো তারা কীভাবে পাচ্ছে? পার্নিয়া বলেন, আমি বলছি না, মৃত্যুর পর চোখ খোলা থাকছে কিংবা মস্তিষ্ক কাজ করছে। আমাদের মধ্যে একটি চৈতন্য কাজ করে-যা আমাদের অস্তিত্ব, চিন্তা-ভাবনা, অনুভুতি, আবেগকে জানান দেয়। মৃত্যুর অমোঘ সীমা অতিক্রমের সাথে সাথেই ওই চৈতন্যগুলো ধ্বংস হয়ে যায় না, আরও কিছু সময় বজায় থাকে। তবে কত সময় যাবৎ থাকে আমরা তা জানি না।

(নিউজ উইক অবলম্বনে)

আরও পড়ুন ::

Back to top button

দয়া করে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিন

দেখে মনে হচ্ছে আপনি কোনও বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমরা বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করি ওয়েবসাইটের ফান্ডের জন্য