বাধা ঠেলে উচ্চ মাধ্যমিকে মনের জোরে ‘সব্যসাচী’ সন্দীপন

স্বপ্নীল মজুমদার, ঝাড়গ্রাম: শারীরিক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৯১ নম্বর পেয়েছে সন্দীপন হাজরা। ঝাড়গ্রাম কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের কৃতী ছাত্র সন্দীপনের ডান হাতের আঙুলে জন্ম থেকেই সমস্যা থাকায় সে লেখে বাম হাতে। কিন্তু মনের জোরে সে যেন সব্যসাচী।

পড়াশোনার পাশাপাশি, ভাল ক্রিকেট খেলে সন্দীপন। কোথাও না শিখে দুর্দান্ত ছবিও আঁকে। শুক্রবার ফল প্রকাশের পরে ঝাড়গ্রাম শহরের মডেল রোডের ভাড়া বাড়িতে গিয়ে সন্দীপনের সঙ্গে দেখা করে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন টিএমসিপি-র রাজ্য সম্পাদক আর্য ঘোষ। সন্দীপনকে চকোলেট খাইয়ে আর্য বললেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম জেলার গর্ব তুমি। আরও এগিয়ে যাও।’’

বছর দেড়েক আগে সন্দীপনের বাবা তারাপদবাবু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন। অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর মনের জোরকে সম্বল করে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে সন্দীপন। সন্দীপনের আদিবাড়ি বিনপুরের হাড়দা অঞ্চলের কড়াসাই গ্রামে। ২০১৮ সালে হাড়দা রামকৃষ্ণ বিদ্যালয় থেকে ৬৫৯ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে উত্তীর্ণ হয় সন্দীপন।

আরও পড়ুন : নিরক্ষর বাবা-মা চান, ছেলে হোক ইঞ্জিনিয়র, স্বপ্ন পূরণে বাধা অভাব

একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখায় ভর্তি হয় ঝাড়গ্রাম কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনে। পড়াশোনার জন্য ঝাড়গ্রাম শহরের সিধু-কানু মোড় লাগোয়া মডেল রোডের ভাড়া বাড়িতে মায়ের সঙ্গে থাকতে শুরু করে সে। কিন্তু আচমকা সন্দীপনের বাবার মৃত্যুতে পরিবারে নেমে আসে শোকের ছায়া। পিতৃহীন মেধাবী এই ছাত্রের কৃতিত্বে মা শ্যামলীদেবীর চোখে জল! বললেন, ‘‘পড়াশোনার সঙ্গে খেলা, ছবি আঁকা, গল্পের বই পড়া সবেতেই ছেলের আগ্রহ।’’ ভাইপোর ভাল ফলের খবর পেয়ে ঝাড়গ্রামে এসেছেন সন্দীপনের জেঠু পেশায় শিক্ষক শঙ্করপ্রসাদ হাজরা। তিনি বলেন, ‘‘সন্দীপনের ভাল রেজাল্ট ওর বাবা দেখে যেতে পারল না এটাই বড় বেদনার।’’

সন্দীপন জানাল, সে আইআইটি জয়েন্ট দিয়েছে। হাড়দার স্কুলে পড়ার সময়ে সেখানকার শিক্ষক অরূপকুমার নস্কর বরাবরই উৎসাহ দিতেন। উচ্চ মাধ্যমিকস্তরে প্রস্তুতির জন্য আট জন গৃহশিক্ষকের সাহায্য নিয়েছে সন্দীপন। প্রতিদিন সব মিলিয়ে গড়ে ৮ ঘন্টা পড়াশোনা করত সে। তবে ভাল ইংরেজি ও হিন্দি সিনেমা দেখতেও ভালবাসে সন্দীপন। ভাইয়ের ভাল ফলে গর্বিত সন্দীপনের দুই জেঠতুতো দিদি পেশায় শিক্ষিকা শঙ্খলেখা ঘোষ হাজরা এবং ডাক বিভাগের কর্মী তিতাস হাজরা।

আরও পড়ুন : ঝাড়গ্রাম কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের কৃতী সৌরিশ হতে চায় অধ্যাপক

দুই দিদি বলেন, ‘‘ভাইয়ের জন্য আমাদের খুব গর্ব হচ্ছে। এই দিনটা কাকু দেখলে কত আনন্দ পেতেন!’’ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক নিরঞ্জন মান্না বলেন, ‘‘জেলার সম্ভাব্য দ্বিতীয় হয়েছে সন্দীপন। আমাদের স্কুলেরই সন্তু রাউত ৪৯৩ নম্বর পেয়ে জেলায় সম্ভাব্য প্রথম হয়েছে। এছাড়া স্কুলের আর এক ছাত্র সোমনাথ দাসও ৪৯১ নম্বর পেয়েছে। জেলার সম্ভাব্য তৃতীয় হয়েছে স্কুলেরই অর্ণব মণ্ডল (৪৮৯)। পরিশ্রম ও অধ্যাবসায়ের মূল্য পেয়েছে তারা।’’ সন্দীপন জানায়, তার পছন্দের বিষয় পদার্থবিদ্যা। ভবিষ্যতে পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করতে চায় এই কৃতী ছাত্র।