জানা-অজানা

ম্যারাডোনার রাজনৈতিক মতাদর্শ কী এই ‘পেরনিজম’

ম্যারাডোনার রাজনৈতিক মতাদর্শ কী এই ‘পেরনিজম’ - West Bengal News 24

‘আমি সবসময় ছিলাম, আছি এবং থাকব একজন পেরোনিস্ট হিসাবে’- মৃত্যুর মাসখানেক আগে ১৭ অক্টোবর নিজের এমন মত ব্যক্ত করেছিলেন ফুটবলের কিংবদন্তী ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনার মা-বাবাও ছিলেন ‘পেরোনিস্ট’। আর্জেন্টিনার রাজনৈতিক ইতিহাসে ‘পেরোনিজম’র রয়েছে দাপুটে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা। বিশ্বের ইতিহাসেই যা উল্লেখযোগ্য। আর যার হাত ধরে এই পেরোনিজমের প্রতিষ্ঠা, তিনি হুয়ান পেরন- একজন সমারিক ব্যক্তিত্ব।

সামরিক ব্যক্তিত্ব শুনলে নেতিবাচক শাসক মনে হলেও হুয়ান পেরন ছিলেন জনতার নেতা। একবার ক্ষমতাচ্যুত হলেও জনগণের রায়ের মাধ্যমে তিনি আবার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন।

কলম্বিয়া ডট এডু’র তথ্য মতে, হুয়ান পেরনের শাসনামলে সব কারখানায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ট্রেড ইউনিয়ন, সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আসে দশটির সব মানুষ, শিক্ষা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত ও বিনামূল্যে, নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য নেয়া হয় আবাসন প্রকল্প, ছিল বেতনসহ ছুটি উপভোগের সুবিধা, চাকরিরত শিক্ষার্থীরা তাদের বড় কোনো পরীক্ষার আগে পেত সাপ্তাহিক ভাতা, সব ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ছিল বিনামূল্যে চিকিৎসা সুবিধা, শিশু জন্মদানের আগে ও পরের তিন মাস বেতনসহ ছুটি পেতেন প্রসূতীরা, শ্রমিকদের জন্য আর্জেন্টিনাজুড়ে তৈরি করা হয় বিনোদন ও বিশ্রামকেন্দ্র। বছরের ১৫ দিন মাত্র ১৫ শতাংশ খরচে শ্রমিকরা এগুলো উপভোগ করতে পারত।

আরও পড়ুন : সন্তান জন্মদানের জন্য কতটা কষ্ট করতে পারেন একজন মা? দেখুন একটি মর্মস্পর্শী কাহিনী

সমাজতান্ত্রিক হিসেবে ঘোষণা না দিলেও পেরনের শাসনামলে অনুসরণ করা হতো কার্ল মার্ক্সের ভাবাদর্শকে। পেরন তার দেশের কৃষিপণ্য বিদেশে চড়া দামে বিক্রির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলেন।

ম্যারাডোনার রাজনৈতিক মতাদর্শ কী এই ‘পেরনিজম’ - West Bengal News 24

তবে এত ছিুর পরও পেরন ক্ষমতায় টিকতে পারেননি। এর কারণ হলো তিনি গ্রামের শ্রমিকদের মজুরি বাড়ালেও ধনীদের বাধ্য করতেন কম দামে তাদের পণ্য সরকারের কাছে বিক্রি করতে। তবে তিনি জমির মালিকানা জাতীয়করণ করেননি। যে কারণে ফসল উৎপাদনে ভাটা পড়ে।

একই সঙ্গে পেরন তার শ্রমিকদের চলমান সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতার বিরুদ্ধে যথেষ্ট সচেতন করতে পারেননি বলে তার পক্ষে টানা ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব হয়নি।

হুয়ান পেরনের নেতৃত্বাধীন আদর্শ ২০টি নীতিকে অনুসরণ করত। সেগুলোর কয়েকটি হলো- তারা মনে করত প্রকৃত গণতন্ত্র হলো জনস্বার্থের পক্ষে যায় এমন যে কোনো কিছুকে রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব। তারা মনে করত শ্রমিকরাই সব। নতুন আর্জেন্টিনাকে তারা গড়ে তুলতে চেয়েছিল এমনভাবে যে সব মানুষ কাজ পাবে। তারা মনে করত, কাজই মানুষকে যথার্থ মর্যাদা দেয় এবং সে-ই কোনো কিছু ভোগ করার উপযুক্ত যে উৎপাদন বা উপার্জন করে। তাদের মূলমন্ত্র ছিল সামাজিক ন্যায়বিচার এবং সমাজের ভালো করা। তাদের রাষ্ট্রে কেবল শিশুরা বাড়তি সুবিধা পাবে বলে জানিয়েছিল পেরোনিস্টরা।

আরও পড়ুন : বিশ্বের জঘন্যতম ৬টি পানীয়

তাদের আদর্শ ছিল ‘জাস্টিসিয়ালিজম’ বা ইনসাফ। তারা মনে করত, এই জাস্টিসিয়ালিজম এমন এক ধরনের দর্শন যা খ্রিষ্টিয়ান ভাব ও মানবিকতাবাদের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। এই আদর্শ একইসঙ্গে ব্যক্তি ও সমষ্টির স্বার্থ রক্ষা করবে।

তারা অর্থনৈতিকভাবে স্বনির্ভর আর্জেন্টিনা গড়ে তুলতে চাইত। পুঁজিবাদ ও সমাজতান্ত্রিক ধারার মধ্যবর্তী একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে চেয়েছিল তারা। সেই সময়ে লাতিন আমেরিকাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সমাজতান্ত্রিক ভাবাদর্শের প্রভাবে বিভিন্ন গণকল্যাণমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে ওঠে। হুয়ান পেরনও তার দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন।

ম্যারাডোনার রাজনৈতিক মতাদর্শ কী এই ‘পেরনিজম’ - West Bengal News 24

আর্জেন্টিনার তিনবারের প্রেসিডেন্ট হুয়ান পেরন ১৮৯৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আর্জেন্টিনার আর্মি জেনারেল ছিলেন। পরে বিভিন্ন সময়ে সরকারি দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪৬ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হন। তখন তার স্ত্রী ছিলেন ইভা পেরন। যাকে ‘আর্জেন্টাইনদের আধ্যাত্মিক নেতা’ বলা হতো। ১৯৫৫ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হন পেরন। পরে তার দল ১৯৭৩ সালে আবার ক্ষমতায় আসেন, তখন পেরন প্রেসিডেনট পদে বসেন। ১৯৭৪ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

আরও পড়ুন ::

Back to top button

দয়া করে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিন

দেখে মনে হচ্ছে আপনি কোনও বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমরা বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করি ওয়েবসাইটের ফান্ডের জন্য