স্পিচ-থেরাপি সুব্রতর, শোভনের লিভারের সমস্য়া, মদনের ছুটি নিয়ে সংশয়
গলার সমস্যা রয়েছে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। একটানা কথা বলতে অসুবিধা হয়। তার ওপর সিওপিডি-র সমস্যা দীর্ঘদিনের। সিওপিডি রয়েছে শোভন চট্টোপাধ্যায় ও মদন মিত্রেরও। শোভনবাবুর আবার লিভারের সমস্যাও বেড়েছে। এসএকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি তিন নেতাই। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে যখন তাঁদের জামিনের মামলা চলছে, তিন ওজনদার নেতাকে তখন পর্যবেক্ষণে রেখেছিলেন ডাক্তাররা। চার নেতার মধ্যে জেলে রয়েছেন একমাত্র রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম।
বাকি তিনজন— সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মদন মিত্র এবং শোভন চট্টোপাধ্যায় ভর্তি রয়েছেন এসএসকেএম হাসপাতালের উডবার্ন ওয়ার্ডে। তিন নেতারই রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি রয়েছে। তিনজনেরই সিওপিডি আছে। এঁদের মধ্যে সুব্রতবাবু বয়সে প্রবীণ। তাঁর সিওপিডি-জনিত শ্বাসকষ্ট রয়েছে। সূত্রের খবর, হাসপাতালের কেবিনে তাঁর জন্য নেবুলাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঝে মধ্যেই বুকে ব্যথার কথা বলছেন শোভনবাবু। তাঁর ইকো কার্ডিওগ্রাম ও ইসিজি করানো হয়েছে। তাঁরও রক্তে শর্করা বেশি।
লিভারের সমস্যাও রয়েছে বলে খবর। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শোভনবাবুরও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা রয়েছে। তাঁকেও নেবুলাইজার দিতে হয়েছে। শ্বাসের সমস্যা হচ্ছে মদন মিত্রেরও। বুধবার তাঁকে টানা অক্সিজেন দিতে হয়। বাইপ্যাপ দিতে হয়েছে বলেও জানা গিয়েছে। সিওপিডি হল ফুসফুসের অসুখ। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ বা সিওপিডি ফুসফুসের এমন একটা রোগ যেখানে বিশুদ্ধ বাতাস বা অক্সিজেন ঢোকার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। শ্বাসের সমস্যা শুরু হয় রোগীর। তীব্র প্রদাহ শুরু হয় ফুসফুসে।
একটা সময় শ্বাসকষ্ট প্রচণ্ড বেড়ে যায়, তখন রোগীকে নেবুলাইজার বা বাইরে থেকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিতে হয়, অথবা ভেন্টিলেশনে রাখতে হয়। ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড জমতে শুরু করে। তিন নেতার সিওপিডি থাকায় তাঁদের কোভিড টেস্ট করানো হয়েছিল, তবে তিনজনেরই করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শোভনবাবুর বুকে ব্যথা বেড়েছে। বুকে চাপ অনুভব করছেন, ধড়ফড়ানি বেড়েছে।
ডাক্তারবাবুরা বলছেন, অতিরিক্ত চিন্তা, স্ট্রেন, মানসিক চাপ, উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা থেকে বুক ধড়ফড় করতে পারে। মানসিক চাপ অতিরিক্ত থাকলে হৃদপিণ্ডের সংকোচন বেড়ে যায়, তখন রোগী বুকে চাপ অনুভব করে। ডাক্তারি ভাষায় একে বলে ‘প্যালপিটেশন’ । হৃত্পিণ্ডের জটিল রোগ থাকলে অনেক সময় প্যালপিটেশন হতে পারে। তবে শোভনবাবুর বুক ধড়ফড়ের কারণ অতিরিক্ত উদ্বেগ বলেই মনে করছেন ডাক্তাররা। সেই কারণে তাঁর ইসিজি ও ইকো-কার্ডিওগ্রাম করানো হয়েছে।
একটানা কথা বলতে গেলে গলায় চাপ লাগে, সমস্যা হয় বলে আগেও মেডিক্যাল বোর্ডের ডাক্তারদের বলেছিলেন সুব্রতবাবু। শুক্রবার তাঁর ভোকাল কর্ডের পরীক্ষা করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ডাক্তারবাবুরা বলছেন, ভোকাল কর্ডে কিছু ত্রুটি রয়েছে তাঁর। সেই কারণে কথা বলার সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে স্পিচ থেরাপি করানো যায় কিনা সে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছেন ডাক্তাররা। স্পিচ থেরাপি করালে সুব্রতবাবুর গলার সমস্যা দূর হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
স্পিচ থেরাপি একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে শিশু এবং বয়স্কদের কথা বলার ক্ষেত্রে সমস্যাগুলি দূর করা হয়। অনেক বাচ্চারা আছে যারা ঠিকমতো কথা বলতে পারে না বা বয়স পেরিয়ে গেলেও মুখে কথা ফোটে না, তখন স্পিচ থেরাপি করেন স্পিচ-ল্যাঙ্গুয়েজ প্যাথোলজিস্টরা। প্রাপ্তবয়স্কদের ভোকাল কর্ডের সমস্যা থাকলে বা কোনও জটিল রোগ সারিয়ে উঠলে কথা বলার সমস্যা হতে পারে। তখন স্পিচ থেরাপি করা হয়।
সুব্রতবাবু ডাক্তারদের বলেছেন তাঁর একটানা কথা বলতে সমস্যা হয়, বেশি কথা উচ্চারণ করলে গলায় লাগে, সেক্ষেত্রে আর্টিকুলেশন ডিসঅর্ডার বা ফ্লুয়েন্সি ডিসঅর্ডারের মতো সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। যদি শব্দ উচ্চারণের সময় গলায় লাগে বা সঠিকভাবে উচ্চারণ করা না যায়, তখন আর্টিকুলেশন ডিসঅর্ডার হয়। আবার নাগাড়ে কথা বলার সময় যদি গলা ব্যথা হয় বা কথা আটকে যেতে থাকে তখন ফ্লুয়েন্সি ডিসঅর্ডার হয়। স্পিচ থেরাপি করলে এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠা যায়।
সুত্র : দ্য ওয়াল