আর কয়েক ঘণ্টা বাকি বিয়ের, ডাক্তার বাবার সঙ্গে অপারেশন করতে ছুটলেন ডাক্তার কনে!
বিয়ের দিন মানেই একটা মেয়ের (daughter) কাছে সকাল থেকে হাজারো ঝক্কি, সেই সঙ্গে উত্তেজনাও। প্রিয়াঙ্কারও তাই ছিল। তবে সেই সঙ্গে ছিল একটা স্বপ্নও। বাবার সঙ্গে অপারেশন থিয়েটারে একসঙ্গে অপারেশন করা। ছোটবেলায় বাবাকে দেখে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন আগেই পূরণ হয়েছিল, কিন্তু বড়বেলায় বাবার সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে অপারেশন করার স্বপ্ন যে বিয়ের কয়েক ঘণ্টা আগে পূরণ হবে, তা কে জানত! এই কাণ্ড ঘটানোর পরে ডক্টর প্রিয়াঙ্কা সাহার সঙ্গে অনেকেই মিল খুঁজে পেয়েছেন মা দুগ্গার।
যিনি দশ হাতে সবদিক সামলে চলেছেন প্রতিনিয়ত। প্রিয়াঙ্কাও যেন তাই। মেহেন্দি পরা হাতে ছুরি-কাঁচি ধরে, সফল অস্ত্রোপচার করে, তার পরে রোগীকে দেখে, খবর নিয়ে বিয়ে করতে চললেন তিনি। প্রিয়াঙ্কার বাবা মাখনলাল সাহা। তিনি এসএসকেএম হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধানের পদ থেকে অবসর নিয়েছেন মাসখানেক আগেই। এখন সার্জারি করেন দক্ষিণ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে। মেয়ে প্রিয়াঙ্কা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে, সার্জারিতে স্নাতকোত্তর পড়ার জন্য যান মুম্বই।
তার পরে এখন তিনি ভুবনেশ্বরে এমসের চিকিত্সক। তিনি বিয়ের জন্যই কলকাতা এসেছেন সম্প্রতি। এমনই সময়ে রানিকুঠির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অর্ণব মুখোপাধ্যায় নামের এক রোগী। তাঁর পেয়ে হয়েছিল এক জটিল টিউমার। আয়তনে প্রায় ফুটবলের মতো। অস্ত্রোপচার করে তা বাদ দেওয়া নিছক মুখের কথা ছিল না। সেই জন্যই চিকিত্সক দীপঙ্কর সরকার সাহায্য চেয়েছিলেন দক্ষ ও অভিজ্ঞ সার্জেন মাখনলাল সাহার।
আরও পড়ুন : উত্সবের মাঝে খানিকটা স্বস্তি! গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যে সংক্রমিত হয়েছেন ৭৬০ জন, নিম্নমুখী মৃত্যুহারও
অস্ত্রোপচার দু’দিন আগেই হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নানা কারণে তা হয়নি, শুক্রবার সকালে অপারেশনের ডেট ঠিক হয়। একথা জানতে পেরেই প্রিয়াঙ্কা ঠিক করেন, এতদিনের স্বপ্নপূরণের এই সুযোগ। বাবার কাছে আবদার করেন, তিনিও ওই অস্ত্রোপচারে থাকতে চান, বাবাকে সাহায্য করতে চান। প্রথমে না বললেও, মেয়ের জেদের কাছে হার মানেন মাখনলালবাবু। শেষমেশ শুক্রবার ওই রোগীর পেট থেকে ১০ কেজি ওজনের বিশাল টিউমারটি নিরাপদে বার করা হয় অপারেশন করে।
বাবা-মেয়ের যুগলবন্দিতে সফল হয় অপারেশন। এর পরে শনিবার হাসপাতালে রোগীকে দেখতেও যান প্রিয়াঙ্কা। তার পরেই হাসপাতাল থেকে কনের গাড়ি ছোটে বাইপাসের ধারের অভিজাত হোটেলে, সেখানেই যে বিয়ের আসর! চিকিত্সক মাখনলাল সাহা জানিয়েছেন, ‘বাবা হিসেবে নয়, এক জন চিকিত্সক হিসেবেও আমি প্রশংসা করতে চাই ওর।
ও চিকিত্সকের ধর্ম পালন করেছে বিয়ের কয়েক ঘণ্টা আগেও। আসলে প্রতিটি মেয়েই দশভুজা, সব দিক সামলাতে পারেন তাঁরা।’ ওই রোগীও এখন ভাল আছেন বলে জানিয়েছেন মাখনলালবাবু। আজ আরও একবার তাঁকে দেখে এসেছেন প্রিয়াঙ্কা নিজে।
সূত্র: দ্য ওয়াল