বর্ধমান

তলানিতে ঠেকেছে লেভি আদায়, শেষমেশ বিক্রি হচ্ছে জেলা পার্টি  অফিসের গাড়ি

তলানিতে ঠেকেছে লেভি আদায়, শেষমেশ বিক্রি হচ্ছে জেলা পার্টি অফিসের গাড়ি

১২ বছর দল ক্ষমতায় নেই। টান পড়েছে দলের খরচের বহরে। তাই খরচে রাশ টানতে জেলা কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে গাড়ি বিক্রির। একটানা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় ছিল সিপিআইএম । ৩৪ বছর ক্ষমতার অলিন্দে থাকার পর ২০১১ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয় বামেরা। সিপিএম রেজিমেন্টেড পার্টি হলেও ক্ষমতা হারানোর পর দলে ধরে ভাঙন।

কেউ দলবদল করে শাসকদলে নাম লেখায়। কেউ আবার সদস্য পদ নবীকরণ না করে বসে যান। ফলে ১১ সালের পর থেকেই দলের মধ্যে শুরু হয়ে যায় রক্তক্ষরণ। একদিকে যেমন দলের সদস্য সংখ্যা কমতে শুরু করে হু হু করে, তেমনই দলের আয়ও কমতে থাকে অনেকটা। লেভি সংগ্রহও কার্যত তলানিতে ঠেকেছে। এরমধ্যে জেলা ভাগ হয় ২০১৭ সালে। পূর্ব বর্ধমান জেলার আসানসোল ও দুর্গাপুর অর্থাত্‍ খনি ও শিল্পাঞ্চল নিয়ে আলাদা জেলা পশ্চিম বর্ধমানের আত্মপ্রকাশ ঘটে। ফলে সিপিএম পার্টি লেভি আরও কমে যায় বলে মনে করছেন পার্টি কর্মীদের একাংশ।

অবিভক্ত বর্ধমান জেলার সিপিএমের লেভির সিংহভাগ আসত খনি ও শিল্পাঞ্চল থেকে। একদিকে জেলা ভাগ অন্যদিকে পার্টির লাগাতার রক্তক্ষরণ, সব নিয়ে কার্যত পূর্ব বর্ধমান জেলার সিপিএমের হাল একেবারে বেহাল। দলের আয় কমে গেছে। তাছাড়া গত একদশকে বহু স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অধ্যাপক অবসর গ্রহণ করেছেন। তাতে আয় আরও কমেছে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে। তাই হাঁড়ির হাল থেকে পরিত্রাণ পেতে শেষমেশ দলের কার্যালয়ে থাকা ৬টি চারচাকা গাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।

যদিও সিপিআইএমের পূর্ব বর্ধমান জেলা সম্পাদক সৈয়দ হোসেন এই তথ্য মানতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “লেভি আদায় নয়, এমনতেই গাড়ি পুরাতন হয়েছে, মেরামতির খরচও বেড়ে যাওয়ায় ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। এত খরচ বহন করা পার্টির পক্ষে সম্ভব নয়, তাই জেলা কমিটির পক্ষ থেকে গাড়ি গুলি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

সূত্রের খবর, গত একদশকে পার্টির লেভি সংগ্রহ ৬৫ শতাংশ কমে গিয়েছে। যদিও বর্তমানে পার্টির সদস্য সংখ্যা সামান্য হলেও উর্ধমুখী। কিন্তু তাতে দলের আয় বাড়েনি। কারণ দলের ছাত্র ও যুবদের মধ্যে অনেকে সদস্যপদ পেলেও তাতে লেভি আদায়ের ক্ষেত্রে কোনও লাভ হয়নি। বেশির ভাগই বেকার ছেলেমেয়ে। সূত্রের খবর, বাম আমলে সব থেক বেশি লেভি আসত কলকাতা থেকে। তারপরেই ছিল অবিভক্ত বর্ধমান। বর্ধমানে সেই সময় পর্যন্ত সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ হাজার। জেলা ভাগের পর বেশিরভাগ অংশই থেকে যায় পশ্চিম বর্ধমানে।

এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য মুখপাত্র প্রসেনজিত্‍ দাস বলেন, “৩৪ বছর রাজত্ব চালানোর পাশাপাশি দেশের সবচেয়ে বড় চোর কোম্পানির নাম মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টি। এদের আবার গাড়ি বিক্রি করে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিতে হচ্ছে, এটা জনগণকে বোকা বানানো ছাড়া আর কিছুই নয়। শুধু মাত্র সিপিআইএম জেলা কমিটির যা সম্পত্তি রয়েছে তা কয়েক পুরুষ চলে যাবে।”

অন্যদিকে বিজেপির যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক সুধীররঞ্জন সাউ বলেন, “সিপিআইএম বর্তমানে মানুষের কাছ থেকে ছিন্ন, সাইনবোর্ডে পরিণত হয়েছে। আগের মত লেভি আসে না। মাঠে ময়দানে লড়াইয়ে আছে বিজেপি। গাড়ি বিক্রির নাটক করে মানুষকে বোকা বানানো যাবে না।”

আরও পড়ুন ::

Back to top button