বর্ধমান

ধান বিক্রি নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে নজিরবিহীন প্রতারণার পর্দা ফাঁস করলো পুলিশ, গ্রেপ্তার তিন

ধান বিক্রি নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে নজিরবিহীন প্রতারণার পর্দা ফাঁস করলো পুলিশ, গ্রেপ্তার তিন

সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে নজিরবিহীন প্রতারণার পর্দা ফাঁস করলো পুলিশ। একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে কৃষকদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বর থানার পুলিশ।

ধৃতরা হলেন মন্তেশ্বরের কামারশালার বাসিন্দা সঞ্জয় ঘোষ, দেনুয়া গ্রামের শ্রীকান্ত ঘোষ ও সাহাপুর গ্রামের মঙ্গলময় ঘোষ। সঞ্জয় ও শ্রীকান্ত জেলার গলসির একটি চালকলের কর্মী। মোটরবাইকে চেপে শুক্রবার সকালে পালানোর সময় মন্তেশ্বর থানার পুলিশ পিছু ধাওয়া করে কুসুমগ্রামে তাদের ধরে ফেলে।মোটরবাইকটিও পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছে।

পুলিশের দাবি, ধৃতদের কাছ থেকে ৩৮টি এটিএম কার্ড, ল্যাপটপ ও নগদ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার হয়েছে। সুনির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশ এদিনই তিন ধৃতকে পেশ করে কালনা মহকুমা আদালতে বিচারক সঞ্জয় ঘোষ কে তিনদিন পুলিশ হেফাজত ও বাকিদের জেল হাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতারণা চক্রে আর কারা কারা যুক্ত রয়েছে তা খতিয়ে দেখছে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ।

মন্তেশ্বরের সাহাপুর গ্রামে বসবাস করেন সুদীপ দাস।প্রতারণার ঘটনা নিয়ে কিছুদিন আগে তিনি মন্তেশ্বর থানায় অভিযোগ জানান। পুলিশকে তিনি জানান, জিরো ব্যালেন্স অ্যাকাউন্ট খোলার জন্যে তাঁর বাবা ও মায়ের নথি নিয়েছিল প্রতিবেশী ঋজু। অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে যাবার পর তিনি দেখেন অ্যাকাউন্টে মোটা অঙ্কের টাকা ঢুকছে,আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই টাকা উঠে যাচ্ছে। সন্দেহ হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে নিতি খোঁজ নেওয়া শুরু করেন। তখনই জানতে পারেন, তাঁদের মতো অনেকের অ্যাকাউন্টে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রির টাকা ঢুকেছে। কিন্তু তারাও তাঁদের মতই প্রতারিত হয়েছেন।এর পরেই সুদীপ দাস পুলিশের দ্বারস্থ হন।

খাদ্য দফতরের দাবি, এখনও পর্যন্ত পূর্ব বর্ধমান জেলায় ধান কেনা হয়েছে ৪,৬৪,০৬৪ টন। এ বছর গত মরসুমের চেয় ১৭ হাজার টন বেশি অর্থাত্‍ ৬,২১,৮০০ টন ধান কেনার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। ধান বিক্রি নিয়ে ফড়ে বা চালকল মালিকরা যাতে কোন ‘কারসাজি’ করতে না পারে তার জন্যে অনলাইনের ব্যবস্থা করা হয়। পালাপাশি জমির পরিমাণ দেখে উত্‍পাদিত ধান নেওয়ার নির্দেশও দেয় খাদ্য দফতর ।অভিযোগ,এত কিছুর পরেও অনেক কৃষক তাঁদের উত্‍পাদিত ধান ‘ধান্য-ক্রয় কেন্দ্রে’ বিক্রি করেন না। পরিবর্তে তারা একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি করেছেন। যা থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে,এবারও সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে।

সহায়ক মূল্যে ধান বিক্রি নিয়ে যে দুর্নীতি হয়েছে, সে কথা মেনেও নিচ্ছেন চালকল মালিক সংগঠন। ‘বর্ধমান রাইসমিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-র সভাপতি আব্দুল মালেকের দাবি, “খাদ্য দফতরের একাংশ আর ফড়েদের যোগসাজসেই প্রান্তিক কৃষকরা প্রতারিত হয়েছেন বলে তাঁরা মনে করছেন।” যদিও জেলা খাদ্য দফতরের সহকারী খাদ্য নিয়ামক বাবুয়া সর্দার দুর্নীতির কথা মানতে চাননি।তিনি এদিন বলেন, “পুলিশের কাছ থেকে রিপোর্ট নিয়ে বিভাগীয়স্তরে খতিয়ে দেখা হবে। কোনও গড়মিল পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে”।

আরও পড়ুন ::

Back to top button