তিন মাসের বেশি সময় ঘুরেও সার্টিফিকেট হাতে পাচ্ছেন না সদ্যজাতের অভিভাবকরা, অভিযোগ জেলা সদর হাসপাতালের বিরূদ্ধে
সরকারি পরিষেবা দিতে দুয়ারে যাচ্ছে প্রশাসন। দিন দিন সরকারি নানান পরিষেবা পাওয়ার পদ্ধতিকে সরলিকরন করছে রাজ্য সরকার। কিন্তু আলিপুরদুয়ার জেলা সদর হাসপাতালের চিত্রটি একটু অন্যরকম। জেলা সদর হাসপাতালে কোন শিশু জন্ম গ্রহন করলে সেই শিশুর জন্মের সার্টিফিকেট পেতে সময় লাগছে অন্তত তিন মাস।
অনেক ক্ষেত্রে তিন মাসের বেশি সময় ঘুরেও সার্টিফিকেট হাতে পাচ্ছেন না সদ্যজাতের অভিভাবকরা। হাসপাতাল কতৃপক্ষ অবশ্য জন্ম মৃত্যুর সার্টিফিকেটের অনলাইন পোর্টালের সার্ভারে সমস্যার কারনে এই বিলম্ব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। যদিও বেসরকারি হাসপাতালে শিশু জন্মালে একই পোর্টালে তথ্য আপলোডের পর সার্টিফিকেট মিলছে। কিন্তু বেসরকারি হাসপাতালে শিশুর জন্মের সাত থেকে পনেরো দিনের মধ্যে সার্টিফিকেট হাতে পেয়ে যাচ্ছেন শিশুর অভিভাবকরা বলে জানা গিয়েছে।
একই পোর্টাল কোন জাদুতে হাসপাতালে কাজ করছে না তা বুঝতে পারছেন না অনেকেই। এই বিষয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা সদর হাসপাতালের রোগী কল্যান সমিতির চেয়ারম্যান সুমন কাঞ্জিলাল বলেন, ” সারভারের গন্ডগোলের কারনে এই বিলম্ব বলে জানতে পেরেছি। খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবো। ” তুফানগঞ্জের ধলপল থেকে আলিপুরদুয়ার জেলা সদর হাসপাতালে স্ত্রীকে ভর্তি করিয়েছিলেন শিবু অধিকারী।
৩১ জানুয়ারি তার সন্তান হয় জেলা সদর হাসপাতালে। নিজের সন্তানের জন্ম সার্টিফিকেট পেতে হাসপাতালে ঘুরতে ঘুরতে তার জুতো খয়ে গেছে। কিন্তু আজও সার্টিফিকেট পাননি তিনি। আলিপুরদুয়ার শহর লাগোয়া ভোলারডাবরির বাসিন্দা বিজয় পাসোয়ানের ভাগ্নি জেলা সদর হাসপাতালে ১ লা জানুয়ারি জন্ম গ্রহন করে।
বিজয়রা এখনও শিশুর জন্মের সার্টিফিকেট হাতে পান নি। উত্তরপানিয়ালগুড়ি গ্রামের খোকন দাসের মাসে তিন মাস আগে জেলা সদর হাসপাতালে মারা যান। খোকন বাবু আজও মায়ের মৃত্যুর সার্টিফিকেট হাতে পেলেন না। ধলপলের শিবু অধিকারী বলেন, ” তিন মাসে দশ দিন হাসপাতালে এসেছি।
আজ নয় পরে এসে খোজ নাও বলে আমাকে নিয়মিত ঘোরানো হচ্ছে। হাসপাতাল কর্মী সঠিকভাবে বলতেই পারেন না কবে এই সার্টিফিকেট হাতে দিতে পারবেন। আমার সন্তানের পরে বেসরকারি হাসপাতালে জন্মানো শিশুর জন্মের সার্টিফিকেট পেয়ে গেছে। আমাদের পয়সা নেই বলে হাসপাতালে আসি।
সেই কারনে এভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছি। ধলপল থেকে আমার মতো সাধারন মানুষের যাতায়াত খরচ ও সময়ের দামে হাসপাতাল কত্তৃপক্ষের কাছে কোন মুল্যই নেই।” তিন মাস আগে মায়ের মৃত্যুর পর মৃত্যুর সার্টিফিকেট নিতে এখনো হাসপাতালে এসে নিয়মিত ঘুরে যাচ্ছেন খোকন দাস। তিনি বলেন, ” মুখ্যমন্ত্রী সব কাজ দ্রুত করার নির্দেশ দিচ্ছেন। প্রশাসনকে আমাদের দুয়ারে পাঠাচ্ছেন ।
আর এখানে এরা এভাবে মানুষকে হয়রানি করছে । এদের শুধু একটাই কথা সার্ভার খারাপ। কিন্তু পোর্টালে প্রতিদিন কতগুলো এন্ট্রি করা যাচ্ছে। ঠিকঠাকমতো করা হচ্ছে কিনা। একজন না হলে দুইজনকে দিয়ে করানো জাতীয় কোন উদ্যোগ নেই। অথচ একই পোর্টালে বেসরকারি হাসপাতালের কাজ এত দ্রুত হচ্ছে কিভাবে?”