ভারত মহাসাগরে একটি বিশাল ‘মাধ্যাকর্ষণ গর্ত’! কেন ভারত মহাসাগরে এই মাধ্যাকর্ষণ গর্ত?
ওয়েস্ট বেঙ্গল নিউজ ২৪
পৃথিবীকে একটি নিখুঁত গোলক হিসেবে কল্পনা করা খুবই সহজ। কারণ, তার সর্বত্র সমান মাধ্যাকর্ষণ রয়েছে। কিন্তু কিছুক্ষেত্রে তো আবার পৃথিবীকে গোলক বলা যায় না। একথা তো নিশ্চয় সকলেই জানেন যে, আমাদের গ্রহ মেরুতে সমতল এবং বিষুবরেখায় ফুলে উঠেছে।
পৃথিবীর সর্বত্র অভিন্ন মাধ্যাকর্ষণ নেই। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে ভারত মহাসাগরে একটি বিশাল ‘মাধ্যাকর্ষণ গর্ত’ বা ‘Gravity Hole’ রয়েছে। এখন গবেষকরা সেই রহস্যই উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছেন যে, কেন ভারত মহাসাগরে এই মাধ্যাকর্ষণ গর্তটি রয়েছে?
পৃথিবীর যে কোনও অংশে মহাকর্ষীয় টানের শক্তি নির্ভর করে সেই নির্দিষ্ট অঞ্চলের নিচে পৃথিবীর ভূত্বক, আবরণ এবং কেন্দ্রর ভরের উপরে। সায়েন্টিফিক আমেরিকানের একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারত মহাসাগরের একটি বিশাল অঞ্চলজুড়ে মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টান এতটাই কম রয়েছে যে, সেখানে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এই অংশটি অবস্থান আসলে ভারতের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে প্রায় 1,200 কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে। সেই বিরাট ডোবা বা খাল বা গর্তের মতো অংশটিকে বলা হচ্ছে ইন্ডিয়ান ওশান জিওয়েড লো (IOGL)।
১৯৪৮ সালে ডাচ জিওফিজিসিস্ট ফেলিক্স অ্যান্ড্রিস ভেনিং মেইনেজ় (Felix Andries Vening Meinesz) একটি সমীক্ষা করার সময় আবিষ্কৃত হয়েছিল এই গর্তটি। তারপর থেকে এই মাধ্যাকর্ষণ গর্তের উপস্থিতি একাধিক বার বিভিন্ন জাহাজ থেকে পরীক্ষা এবং উপগ্রহ থেকে পরিমাপ করে নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু কী কারণে এই গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, তার কূলকিনারা এতদিন পর্যন্ত করতে পারেননি গবেষকরা।
কী কারণে মহাকর্ষীয় এই বিরল ঘটনাটি ঘটে, বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (IISc) এর গবেষক দেবাঞ্জন পাল এবং আত্রেয়ী ঘোষ সম্প্রতি জিওফিজ়িক্যাল রিসার্চ লেটার্স জার্নালে তার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। বিবিসির রিপোর্ট অনুযায়ী, বিগত 140 মিলিয়ন বছরের কম্পিউটার-সিমুলেটেড মডেল গুলি দেখার পরে তারা পৃথিবীর ভূত্বকের প্রায় 965 কিলোমিটার নিচে, যা আসলে আফ্রিকার নিচে রয়েছে, সেখানেই একটি প্রাচীন মহাসাগরের অবশেষ খুঁজে পেয়েছেন।
প্রত্যেকটি সিমুলেশনেই গবেষকরা আফ্রিকার নিচে গলিত শিলার টুকরো খুঁজে পেয়েছেন, যেগুলি খুব সম্ভবত ম্যান্টলে টেকটনিক প্লেট নিমজ্জিত হওয়ার ফলে সৃষ্টি হতে পারে। গবেষকরা মনে করছেন, ওই শিলার টুকরোগুলির কারণেই ইন্ডিয়ান ওশান জিওয়েড লো বা IOGL বা এই গর্তটির সৃষ্টি হয়েছে।
যদিও নিউ সায়েন্টিস্টের কাছে গবেষকরা বলেছেন যে, ওই শিলাগুলি যে আসলে ভারত মহাসাগরের নিচেই রয়েছে তার কোনও স্পষ্ট সিসমোগ্রাফিক প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাঁদের দাবি, এই মাধ্যাকর্ষণ গর্তের পিছনে অন্যান্য কারণও থাকতে পারে।