![ঝাড়গ্রাম জেলার পর্যটন পালে হাওয়া, বাড়ছে হোম স্টে ঝাড়গ্রাম জেলার পর্যটন পালে হাওয়া, বাড়ছে হোম স্টে](https://www.westbengalnews24.com/wp-content/uploads/2024/04/Aranyak-Resort.jpg)
ঝাড়গ্রাম জেলার পর্যটন শিল্পে বাড়ছে বেসরকারি বিনিয়োগ! কেবলমাত্র বেলপাহাড়িতেই তৈরি হয়েছে ৬৮ টি হোম স্টে। শুধু বেলপাহাড়ি নয়, জেলার অন্যত্রও আরও বেশ কিছু হোম স্টে তৈরির কাজ চলেছে। এর ফলে এখন প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় জমির দাম লাফিয়ে বাড়ছে। মহানগরের পর্যটকরা কোলাহল থেকে দূরে গ্রামীণ এলাকায় থাকতে পছন্দ করছেন। সেই কারণে ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় তৈরি হচ্ছে একের পর এক হোম স্টে।
জমির কারবারিরা জানাচ্ছেন, পুরনো গাছ সহ রায়ত জমির দর আকাশ ছোঁয়া। বেলপাহাড়িতে এখন প্রকৃতির মাঝে এমন রায়ত জমি চার থেকে সাত লাখ কাঠা দরে বিক্রি হচ্ছে। কলকাতা, ভিন জেলা, এমনকী ভিন রাজ্যের লোকজনও ঝাড়গ্রামে হোম স্টে গড়তে আগ্রহী হচ্ছেন, বিনিয়োগ করছেন। বেলপাহাড়ি ব্লক সদরের অদূরে একটি বিলাসবহুল হোম স্টে এবং রিসর্টে সুইমিং পুলও রয়েছে। বেলপাহাড়ির নতুন হোমস্টে গুলির নামেও রয়েছে অভিনবত্ব। বাঁশপাহাড়িতে বাগানবিলাস, কাঁকড়াঝোরে কেকা, আমলাশোলে কোজাগর, আমঝর্নায় কুড়চি।
বেলপাহাড়ি টুরিজ়ম অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র বিধান দেবনাথ জানাচ্ছেন, বিপুল সংখ্যক পর্যটক আসছেন বলেই নতুন নতুন হোম স্টে তৈরি হচ্ছে। বাইরের লোকজন বিনিয়োগ করছেন। বেলপাহাড়িতে ৬৭টিরও বেশি হোম স্টে হয়ে গিয়েছে। এর ফলে জমির দামও বাড়ছে। জানা গেল, বেলপাহাড়িতে এখন প্রত্যন্ত এলাকায় প্রতি কাঠা জমির দাম প্রায় চার লাখ টাকা। একটু ভাল জমি হলে কাঠা প্রতি দর উঠছে সাত লাখ।
বিধান জানাচ্ছেন, হাউস কিপিংয়ের বিষয়ে পেশাদার বাইরের লোকজনের পাশাপাশি, স্থানীয়রাও হোম স্টে গুলিতে কাজ পাচ্ছেন।
ঝাড়গ্রামের পর্যটন ব্যবসায়ী রিনিতা চ্যাটার্জী বেলপাহাড়ির নোটাচুয়ায় পাহাড়ের কোলে জমি কিনেছেন। ঝাড়গ্রাম শহরে একটি নামি অতিথিশালা রয়েছে রিনিতার স্বামীর। রিনিতা বলছেন, ‘‘পর্যটকরা প্রকৃতির কোলে থাকতে পছন্দ করছেন। সেই কারণে বেলপাহাড়িতে হোম স্টে তৈরির উদ্যোগ করেছি।’’
শুধু বেলপাহাড়ি নয়, ঝাড়গ্রাম শহর থেকে গড়ে দশ কিলোমিটারের মধ্যে নতুন হোম স্টে গড়ে উঠছে। ঝাড়গ্রাম শহর থেকে ৯ কিমি দূরে জামবনি ব্লকের শুশনি গ্রামে পাঁচ বিঘে জমিতে হোম স্টে তৈরি করছেন ভুবনেশ্বর প্রবাসী ঝাড়গ্রামের ভূমিকন্যা উপাসনা কর্মকার। উপাসনা টুরিজ়ম ম্যানেজমেন্টের ছাত্রী। উপাসনার বলছেন, ‘‘রায়তি জমিটিতে প্রচুর শাল, মহুল, সেগুন গাছ রয়েছে। গাছের ক্ষতি না করে সেখানেই কটেজ তৈরি করছি। পর্যটকরা জঙ্গলের মাঝে থাকার অনুভূতি পাবেন।’’
ঝাড়গ্রাম ডিস্ট্রিক্ট হোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শিবাশিস চ্যাটার্জী জানাচ্ছেন, জেলায় এই মুহূর্তে সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত ১০২টি হোম স্টে রয়েছে। এছাড়াও আরও অসংখ্য হোম স্টে তৈরি হয়েছে ও তৈরি হচ্ছে। আগে জেলায় বেসরকারি অতিথিশালার সংখ্যা ছিল ১৭টি। এখন অতিথিশালার সংখ্যা ৬৫টি। শিবাশিসের কথায়, ‘‘আগে মরসুমে স্থানাভাবে পর্যটকদের জায়গা দেওয়া সম্ভব হত না। এখন সেই সঙ্কট অনেকটা মিটেছে। শহুরে জীবন থেকে দু’তিনটি দিনের জন্য প্রকৃতির মাঝে থাকার প্রবণতাটাই পর্যটকদের মধ্যে বেশি। সেই কারণে জেলার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় প্রচুর হোম স্টে তৈরি হচ্ছে।’’
ঝাড়গ্রামের জেলাশাসক সুনীল আগরওয়াল বলছেন, ‘‘আবেদনের ভিত্তিতে ১০২টি হোম স্টেকে সরকারি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বাকি গুলিকেও আবেদন করতে বলা হচ্ছে। সরকারি অনুমোদন মেলে সংশ্লিষ্ট হোম স্টে কর্তৃপক্ষ সরকারি আর্থিক অনুদানও পাবেন।’’