জীবন যাত্রা

যে ৭টি প্রশ্ন আপনাকে আজীবন কৌতূহলী করে রাখবে

যে ৭টি প্রশ্ন আপনাকে আজীবন কৌতূহলী করে রাখবে

মানুষ সহজাত আগ্রহ নিয়ে জন্মায়। পৃথিবীটা সম্পর্কে তার আগ্রহের কমতি নেই। এমনকি শিশুরাও আগ্রহবোধ থেকেই যাবতীয় কাজ করে থাকে। বিস্ময়বোধ থেকে আগ্রহের জন্ম। মানুষ বড় হওয়ার পর ধীরে ধীরে এই বিস্ময়বোধ কমে যেতে থাকে এবং আগ্রহ হারিয়ে যেতে থাকে। বিজ্ঞান বলছে, এতে আমাদের বহু মূল্যবান একটি গুণ হারিয়ে যাচ্ছে। তাই জীবনের প্রতি মুহূর্তকে উপভোগ্য করতে হলে আগ্রহকে ধরে রাখতে হবে আমাদের। এখানে ৭টি প্রশ্ন দেওয়া হলো। এগুলো মনে ধরে রাখলে আগ্রহবোধের মৌলিক ভিত্তিটা নষ্ট হবে না।

১. ভালোবাসা কী? : সংজ্ঞায়িত করার জন্য সবচেয়ে কঠিন বিষয় সম্ভবত ভালোবাসা। প্রতিটি মানুষের কাছে এর ভিন্ন ভিন্ন আবেদন রয়েছে। তাই এর সম্পর্কে নিজের মতাদর্শ কী তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন।
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ডেবরা অ্যানাপল তার ‘দ্য সেভেন ন্যাচারাল লস অব লাভ’ বইয়ে ভালোবাসার একটি সুন্দর সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আপনার কী ঘটছে তার খেয়াল রাখে ভালোবাসা। কারণ, ভালোবাসা জানে যে আমরা সবাই একে অপরের সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগে আবদ্ধ। ভালোবাসা মজ্জাগতভাবে আবেগময় এবং প্রভাবশালী। ভালোবাসা জানে একজন অন্যজনের কাছে কী। এটাই ভালোবাসার সত্যিকার বৈশিষ্ট্য এবং ভালোবাসা নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

২. আমি কোথায় থাকতে চেয়েছিলাম? : নিজেকে এই প্রশ্ন করা শুধু আপনার জীবনের বর্তমান চিত্রকেই দেখায় না, বরং কী করার ইচ্ছা পোষণ করেন তাও পরিষ্কার করে। ক্যারিয়ারের লক্ষ্য, পরিবার, বন্ধুমহল এবং শখের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন করা যায়। নিজের চিন্তামতো জীবনের পথ ঠিক করুন।

প্রয়াত স্টিভ জবস বলেছিলেন, তোমার সময় সীমিত। তাই অন্যের জীবন ধারণ করে সময় নষ্ট করো না। মতবাদের ফাঁদে পড়ো না, এতে অন্যের চিন্তাধারা দ্বারা নিজের জীবন নিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে। অন্যের গুঞ্জন বা মতামতে যেন তোমার ভেতরের কণ্ঠ স্তব্ধ না হয়ে যায়। হৃদয় আর অনুভূতি দিয়ে উপলব্ধি করার সাহস করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এরা কোনো একভাবে জানে যে তুমি আসলে কী হতে চাও। বাকি সব গৌণ।

৩. আমার মৃত্যুর পর কী হবে? : যারা ধর্মের দীক্ষা নিয়ে জীবন কাটান না তাদের কাছে মৃত্যুর বিষয়টি একান্ত প্রাকৃতিক, এক কদর্য রহস্য, শেষ সত্য এবং এমন একটি বিষয় যা নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। একে স্রেফ মুখে অস্বীকার করা যায়, এ সব বলেছেন আমেরিকান ঔপন্যাসিক, সিনেমা নির্মাতা এবং বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয় কর্মী সুসান সোনটাগ।

২০১২ সালে ‘পারসোনালিটি অ্যান্ড সোশাল সাইকোলজি রিভিউ’-এ প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যু সম্পর্কে চিন্তা ভালো কিছু বয়ে আনতে পারে। কারণ মরণশীলতার উপলব্ধি মানুষের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য গড়ে দেওয়াসহ তার নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে।

ইউনিভার্সিটি অব মিসৌরির এক গবেষক কেনেথ ভেইল জানান, মৃত্যু নিয়ে মানুষের চিন্তা সমাজে বিশৃঙ্ক্ষলতা আনে না, বরং মানুষের জীবনধারাকে উন্নত করে।

৪. আমাকে কী বাঁচিয়ে রেখেছে? : আফ্রিকান-আমেরিকান লেখক, দার্শনিক এবং মানবাধিকার সংগঠনের নেতা হাওয়ার্ড থারম্যানের একটি বিখ্যাত উদ্ধৃতি হলো, পৃথিবীটার কী দরকার তা নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। তোমার বেঁচে থাকতে কী লাগবে তা চিন্তা করে বের করো এবং তা করো। কারণ তোমার বেঁচে থাকার অবলম্বন তুমি খুঁজে পাও এটাই পৃথিবী চায়।

ভেতরের সবটুকু জাগ্রত করতে যে রসদের প্রয়োজন হয় তার কথা বলাটা সহজ, কিন্তু করাটা অনেক কঠিন। আপনার বেঁচে থাকার পেছনে কী কারণগুলো জরুরি তা জানতে চিন্তা-চেতনার পুরোটা উজাড় করে দিন। যেকোনো সম্ভাবনাকে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন না।

৫. মানুষের স্মৃতিতে আমি কীভাবে বেঁচে থাকতে চাই? : অনেক মানুষ তাদের রিজ্যুমির ওপর ভিত্তি করে জীবন কাটান। নিজের মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে কাজের সম্মান বা স্বীকৃতিকে মানুষ জীবনের সার্থকতা বলে মনে করে। এসবের ভিত্তিতে তারা অন্যদের স্মৃতিতে বেঁচে থাকতে চান। হাফিংটন পোস্ট মিডিয়া গ্রুপের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান সম্পাদক আরিয়ানা হাফিংটনের সর্বসাম্প্রতিক বই ‘থ্রাইভ : দ্য থার্ড মেট্রিক টু রিডিফাইনিং সাকসেস অ্যান্ড ক্রিয়েটিং আ লাইফ অব ওয়েল-বিয়িং, উইসডম অ্যান্ড ওয়ান্ডার’। এখানে তিনি বলেছেন, কখনো খেয়াল করে দেখেছেন যে, আমরা প্রতিদিনের জীবনে নিজের সফলতা ও সার্থকতাকে যে দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখি, মৃত্যুর পর অন্যরা এই সার্থকতাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে তুলে ধরেন। তবে মানুষ জীবনে যাই করুক না কেন বা কাঠিন্যকে ধাওয়া করে যত বড় বিজয়ীই হোন, মানুষের মনে বেঁচে থাকতে হলে অন্যের জন্য কী করলেন তাই সত্যিকার কর্ম।

৬. আমি কী সত্যিই সুখী? : বর্তমান পরিস্থিতির মাঝে যদি আপনি নিজের সুখ খুঁজতে যান তবে জীবনের প্রতি উদার দৃষ্টি দিতে হবে। এ নিয়ে কাজ করতে গেলে আপনার উপলব্ধি আসবে। সেই সঙ্গে নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারবেন যা আপনার সুখের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে। ২০১৩ সালে ‘জার্নাল অব পজিটিভ সাইকোলজি’-তে বলা হয়, গবেষণায় দেখা গেছে, যে মানুষ সঠিক উপায়ে সুখী হওয়ার চেষ্টা করেন তিনি তা করতে পারেন। খুব সাধারণ একটি উদাহরণ হলো- মন ভালো করতে গান শুনতে গেলে মনটা ভালো হয়ে যাবে।

সম্ভবত দালাই লামা আরো পরিষ্কারভাবে বোঝাতে পেরেছেন, সুখ প্রস্তুতকৃত কোনো বস্তু নয়। এটা তোমার নিজের কর্ম থেকে আসে। কাজেই সুখ কী? সুখ তাই যা তুমি আনন্দ নিয়ে করো এবং বলো।

৭. আমার জীবনের উদ্দেশ্য কী? : সময়ের সঙ্গে নিজের মধ্যে পরিবর্তনের সময় এই প্রশ্নটি মনে উদয় হতে পারে। যেমন- নতুন সন্তানের বাবা-মা হওয়ার সময় বা ক্যারিয়ারের বড় পরিবর্তনের সময় ইত্যাদি। ‘আমার জীবনের অর্থ কী?’ অথবা ‘আমি এখানে কেন?’ প্রশ্ন দুইটি দিয়েও নিজের উদ্দেশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। তবে এর জবাব নিজের মাঝেই রয়েছে।

লেখক, দার্শনিক এবং আধ্যাত্মিক গুরু মানুষের জীবনের উদ্দেশ্যের বিষয়ে বলেন, পৃথিবীতে তুমি কতটা সময় কাটাচ্ছো বা কতটা অর্থের মালিক হয়েছো বা মানুষের কতটা মনোযোগ আকর্ষণ করতে পেরেছো তা বিষয় নয়, বরং জীবনে কতটা ইতিবাচক স্পন্দন ছড়িয়ে দিতে পেরেছো তাই আসল ব্যাপার।

আরও পড়ুন ::

Back to top button