এফআইআর নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন রিয়া (ভিডিও)
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে জট যেন কাটতেই চাইছে না। একের পর এক পাকে জড়িয়ে যাচ্ছে তদন্ত। মুম্বই পুলিশ থেকে বিহার পুলিশ, সুপ্রিম কোর্ট থেকে পটনা হাইকোর্ট, সুশান্তের একাধিক বন্ধুর বয়ান— সব মিলিয়ে রহস্য এখনও জমজমাট। তার মধ্যেই সুশান্তের বান্ধবী রিয়া চক্রবর্তীআজ প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের পর এই প্রথম। রিয়ার বক্তব্য, বিচার ব্যবস্থার প্রতি তাঁর যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। সত্যিটা অবশ্যই সামনে আসবে।
আজ সকালেই রিয়ার একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি ডন’’।সেই ভিডিয়ো যখন ‘টক অব দ্য টাউন’ হয়ে উঠছে, তখন বিহার পুলিশের জেরায় রিয়ার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ তুললেন সুশান্তের বন্ধু মহেশ শেট্টি। বিহার পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মহেশের বক্তব্য তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।সুশান্তের প্রাক্তন প্রেমিকা অঙ্কিতা লোখন্ডকে বৃহস্পতিবাররাতে জেরার পর আজ শুক্রবার মহেশকে জেরা করে বিহার পুলিশ।
[ আরও পড়ুন : সুশান্তের সঙ্গে লিভ ইনে ছিলেন রিয়া! ]
মারা যাওয়ার আগের রাতে সুশান্ত যে দু’জনকে ফোন করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে একজন রিয়া এবং অন্যজন মহেশ। যদিও মহেশ ঘুমিয়ে পড়েছিলেন, তাই সুশান্তের ফোন ধরতে পারেননি বলে মুম্বই পুলিশকে জানিয়েছিলেন আগে। কিন্তু আজকের জেরায়রিয়া-সুশান্তের সম্পর্ক নিয়ে মহেশ বিস্ফোরক কিছু তথ্য তাদের জানিয়েছেন বলে বিহার পুলিশ সূত্রে খবর।
জেরায় মহেশ তাদের জানিয়েছেন, সুশান্তকে তাঁর পরিবারের সঙ্গে রিয়াযোগাযোগ রাখতে দিতেন না। রিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হওয়ার পর বন্ধুদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎও কমিয়ে দিয়েছিলেন সুশান্ত, বিহার পুলিশের কাছে এমন দাবিই করেছেন মহেশ। এখানেই শেষ নয়। বিহার পুলিশের কাছে মহেশ আরও দাবি করেছেন, নিজের মায়ের সঙ্গে পরামর্শ করেই সুশান্তের দেহরক্ষী বদলের পাশাপাশি গোটা টিমকে পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেনরিয়া।
#WATCH: Rhea Chakraborty releases video on #SushantSinghRajputDeathCase.
She says, “I’ve immense faith in God & the judiciary. I believe that I’ll get justice…Satyameva Jayate. The truth shall prevail.” pic.twitter.com/Fq1pNM5uaP
— ANI (@ANI) July 31, 2020
মহেশ রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুললেও, সুশান্তের আর এক বন্ধু সিদ্ধার্থ পিঠানি কিন্তু তাঁর হয়েই কথা বলেছেন। সিদ্ধার্থের অভিযোগের আঙুল সুশান্তের পরিবারের দিকে। ইমেল করে মুম্বই পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, রিয়ার বিরুদ্ধে বয়ান দেওয়ার জন্য তাঁকে নাকি রীতিমতো জোর করা হচ্ছে সুশান্তের আত্মীয়দের তরফে। ওই ইমেলে সিদ্ধার্থ লিখেছেন, “আমাকে বলা হয়েছিল, একটা ফোন কল আসবে।
[ আরও পড়ুন : সুশান্তের আত্মহত্যার কারণ তদন্ত করবে না সিবিআই ]
তার কিছুক্ষণ পরেই আমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি কল আসে। ৪০ সেকেন্ডের মাথায় সেই ফোন কেটেও যায়। রিয়ার বিরুদ্ধে কথা বলার জন্যআমায় ক্রমাগত জোর করা হচ্ছে।” সিদ্ধার্থকে আজ জেরা করা হবে বলে বিহার পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
আজ রিয়াকে জেরা করতে বিহার পুলিশ তাঁর মুম্বইয়ের বাড়িতে পৌঁছয়। কিন্তু পুলিশ তাঁর দেখা পায়নি বলে সূত্রের খবর। তদন্তে পুলিশ আরও জানতে পেরেছে, সুশান্তের মোট তিনটি কোম্পানির মধ্যে দু’টিতে পার্টনার ছিলেন রিয়া। ২০১৮ থেকে ২০২০-র মধ্যে তিনটি কোম্পানি খুলেছিলেন সুশান্ত। এর মধ্যে ‘ভিভিডরেজ রিয়ালিটিক্স প্রাইভেট লিমিটেড’ গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর পথ চলা শুরু করে। এই কোম্পানির মোট তিনজন ডিরেক্টর— সুশান্ত সিংহ রাজপুত, রিয়া চক্রবর্তী এবং সৌয়িক চক্রবর্তী (রিয়ার ভাই)। অন্য একটি কোম্পানি ‘ফ্রন্ট ইন্ডিয়া’গত জানুয়ারিতে চালুহয়। সমাজসেবা মূলক কাজের জন্যই গঠিত হয়েছিল ওই কোম্পানি।
এই আবহে আজ প্রথম বার মুখ খুলেছেন রিয়া চক্রবর্তী। বিহার পুলিশের কাছে তাঁর নামে দায়ের হওয়া এফআইআরের পর এই প্রথম সুশান্তের অস্বাভাবিক মৃত্যু প্রসঙ্গে কথা বললেন তিনি। রিয়ার বক্তব্য, ‘‘আমার সম্পর্কে সংবাদমাধ্যমে ভয়ানক সব কথাবার্তা বলা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমার আইনজীবী কিছু বলতে বারণ করেছেন।
[ আরও পড়ুন : সুশান্তের প্রাক্তন প্রেমিকা অঙ্কিতা বলেন সত্যের জয় হবেই ]
দেশের বিচার ব্যবস্থার উপর যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। আমি বিচার পাব। সত্যিটা অবশ্যই সামনে আসবে।’’ শুক্রবার বিকেলে রিয়া যখন এ কথা বলছেন, তার কয়েক ঘণ্টা আগে এ দিন সকালে তাঁরই একটি ব্যক্তিগত ভিডিয়ো সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে।
সেই ভিডিয়োতে হাসতে হাসতে রিয়াকে বলতে শোনা গিয়েছে, “আমি ডন। ছোটখাটো গুন্ডাদের কী করে নিয়ন্ত্রণ করতে হয় তা আমি জানি।” কীভাবে ওই ভিডিয়োটি ভাইরাল হল তা জানা যায়নি। তবে ভিডিয়োটি ভাল করে দেখলে একটা জিনিস স্পষ্ট হয়— যিনি ভিডিয়োটি তুলছিলেন, রিয়া তাঁকে বারবারই রেকর্ড করতেবারণ করছিলেন।
এ সবের মধ্যেই আজশুক্রবার সুশান্তের বাবা কেকে সিংহের পাশে দাঁড়াল বিহার সরকার। অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্ত মুম্বইয়ে নিয়ে আসার জন্য রিয়া চক্রবর্তী সর্বোচ্চ আদালতে যে পিটিশন দাখিল করেছিলেন, তার প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার সুশান্তের পরিবারের তরফে আগাম একটি ক্যাভিয়ট জমা করা হয়। সেখানে সুপ্রিম কোর্টের কাছে আর্জি জানানো হয়, রিয়ার আবেদনের ভিত্তিতে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার আগে আদালত যেন তাদের কথাও শোনে।
[ আরও পড়ুন : সুশান্তের বাবার রিয়ার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ ]
আজ বিহার সরকারের তরফেও ক্যাভিয়ট জমা করে একই আর্জি জানানো হয়েছে শীর্ষআদালতে। পাশাপাশি, সুশান্ত-মামলায়প্রাক্তন অ্যাটর্মি জেনারেল মুকুল রোহতগিকে আইনজীবী হিসাবে নিয়োগ করার কথাও ভাবছে বিহার সরকার।
সুশান্ত সিংহ রাজপুতের অস্বাভাবিক মৃত্যুর তদন্তে বিহার পুলিশের সাত সদস্যের যে দল মুম্বই পৌঁছেছে, তাদের নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে। গত বৃহস্পতিবার অঙ্কিতার বাড়িতে তাঁরা গিয়েছিলেন অটোরিকশা করে। কিন্তু অঙ্কিতার বাড়ি থেকে তাঁরা বেরিয়েছিলেন জাগুয়ার চেপে। আজ সকালে মুম্বইয়ের রাস্তায় বিএমডব্লিউ করেও ঘুরতে দেখা গিয়েছে ওই দলকে। কেন বার বার গাড়ি বদল? তদন্তের স্বার্থে? উঠেছে প্রশ্ন।