জাতীয়

দেবতা রামকে নিয়ে রসিকতা, অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা

দেবতা রামকে নিয়ে রসিকতা, অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা

দেবতা রামকে নিয়ে ফেসবুকে নেতিবাচক মন্তব্য করার কারণে এক অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছেন হিন্দুত্ববাদী ছাত্র সংগঠনের এক সদস্য। তিনি ওই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনেছেন।

শিলচরে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিন্দ্য সেনের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। অযোধ্যায় যেদিন রামমন্দিরের ভূমিপূজা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, সেদিন রাতে ফেসবুকে চার লাইনের একটি ছোট্ট পোস্ট দিয়েছিলেন তিনি।

চার লাইনের ওই পোস্টে রসিকতার ছলে রামায়ণের পরিচিত আখ্যানের সেই অংশটি লিখেছেন ওই অধ্যাপক, যেখানে রামচন্দ্র তার স্ত্রী সীতাকে এক পর্যায়ে পরিত্যাগ করেছিলেন। এক পুরুষ ও এক নারীর মধ্যে কাল্পনিক কথোপকথনের মাধ্যমে ফেসবুকে তিনি যা লিখেছিলেন, বাংলায় তার অনুবাদ করলে দাঁড়ায়-‘এই নাটক সেই ব্যক্তির জন্য যিনি নিজের স্ত্রীকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র লোকে কী বলবে, সেই ভয়ে। শেষ লাইনে পুরুষ লোকটি বলছেন-‘ও, তুমি শ্রীরামচন্দ্রের কথা বলছ!’

এই পোস্টে হিন্দু দেব-দেবীদের অপমান করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে মামলা দায়ের করেছেন কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএসের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের এক সদস্য।

তবে অধ্যাপক অনিন্দ্য সেনের আইনজীবী সব্যসাচী চ্যাটার্জির দাবি, এই পোস্টে কোনোভাবেই রামচন্দ্রের অপমান করা হয়নি।

[ আরও পড়ুন : ফেসবুক পোস্ট নিয়ে ধুন্ধুমার বেঙ্গালুরুতে ]

এ বিষয়ে আইনজীবীর ভাষ্য, “যদি কোনো লেখা বা পোস্টে ‘শ্রীরামচন্দ্র’ শব্দটি থাকে আর বলা হয় যে, ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হচ্ছে, তাহলে তো খুব বিপজ্জনক ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত বলেছে, বাক-স্বাধীনতা কোনোভাবেই হরণ করা যায় না।” তিনি বলেছেন, যেসব ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলো মোটেও আমলযোগ্য নয়।

বাল্মীকি রচিত রামায়ণ হোক বা কৃত্তিবাসের বাংলা রামায়ণ, বেশিরভাগ রামায়ণেই উল্লেখ রয়েছে যে, ১৪ বছরের বনবাস থেকে ফিরে এসে সীতাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন রামচন্দ্র। তাই এটা কোনোভাবেই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হতে পারে না বলে মত দিয়েছেন বেদ-পুরাণ নিয়ে গবেষণা করেন এমন একজন অধ্যাপক রোহিণী ধর্মপাল।

তিনি বলেছেন, ‘স্বয়ং বাল্মীকিই তো লিখেছেন যে লোকের মুখের কথা শুনেই রাম সীতাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। এই কথাটাকে যদি ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত বলা হয়, তাহলে তো বাল্মীকির রামায়ণকেই অস্বীকার করতে হয়।’

একই মত দিয়েছেন ভারতের নারী আন্দোলন কর্মী শাশ্বতী ঘোষ। তিনি বলছেন, ‘রামচন্দ্রের সীতাকে পরিত্যাগ করার ঘটনাটি আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে কতটা প্রজাবাৎসল্যের নমুনা, তা নিয়েও অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। সীতাকে রাবণ অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল, তাই সীতা সচ্চরিত্র কি-না, তা নিয়ে কিছু মানুষ সন্দেহ প্রকাশ করল আর তিনি স্ত্রীকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিলেন!’ তাই তিনি মনে করেন, এই প্রশ্ন তোলা খুবই সঙ্গত।

অধ্যাপকের বিরুদ্ধে মামলা প্রসঙ্গে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সাবেক উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি যতটা বুঝেছি, ওই পোস্টটিতে কিছুটা শ্লেষ ছিল। সেটা নিয়ে এত বড় ইস্যু করার কোনো দরকার ছিল না।’

তবে যে ছাত্রটি অধ্যাপক অনিন্দ্য সেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন, তারই অভিযোগের ভিত্তিতেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেক শিক্ষককে কয়েক মাস আগে তিনদিন পুলিশ হেফাজতে থাকতে হয়েছিল।

আরও পড়ুন ::

Back to top button