পূর্ব মেদিনীপুর

ভবঘুরের রহস্যময় জীবন থাকল অন্ধকার, পেয়েও পেলো না তাঁর পরিবারের সাথে থাকার সুযোগ

ভবঘুরের রহস্যময় জীবন থাকল অন্ধকার, পেয়েও পেলো না তাঁর পরিবারের সাথে থাকার সুযোগ
প্রতিবেদকের তোলা ছবি

নিজস্ব সংবাদদাতা, মেছোগ্রাম: পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া থানার অন্তর্গত মেছোগ্রাম স্ট্যান্ডে দীর্ঘ তিনবছর ধরে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় এক ভবঘুরেকে। কখনও রাস্তার পাশে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট থেকে খাবার খুঁজেও খেতে দেখা গিয়েছে, কখনও আনমোনা হয়ে চুপচাপ আপন মনে বসে থাকতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।

তাঁর পরনে পোশাখ একটাই ছেঁড়া জামা ও প্যান্ট , উস্খসুস্খ মাথার চুল ও গাল ভর্তি দাঁড়ি তাঁকে পাগলের রূপ দিয়ে ফেলে। তবে সত্যিই সে মানসিক ভারসাম্যহীন। দীর্ঘদিন তাঁকে মেচোগ্রামের বাইপাসের ধারে, কখনও মেচোগ্রাম বাসস্ট্যান্ডে ওভারব্রিজের নিচে রাত কাটাতে দেখা গিয়েছিল বছর ২৮ শের এই ভবঘুরেকে।

ব্যস্ততম বাজারে কে চেনে এই কথা না বলা মানুষটাকে ? কে বা তাঁকে একটু খাবার পৌঁছে দিয়ে তাঁর ক্ষুধার জ্বালা মেটানোর মতো মানবিকতা দেখিয়ে তাঁর ক্ষুধা নিবারণ করে ? সকলেই জানত তাঁর একুলে ওকুলে কেউ নেই, নেই তাঁর পরিবার পরিজন। বাকি ভবঘুরেদের মতোই তাঁর জীবন কেটে আসছে দীর্ঘ তিনবছর। রাস্তায় রাস্তায় একাকীত্ব কষ্টের জীবন কাটিয়ে চলে আসছিল এই ভবঘুরে।

আর সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই দশভুজা দেবি মন্ডপে বিরাজ করবেন ,শুরু হবে বোধনের পূজো, করোনা আবহের মধ্যেও কিছুটা হলেও খুশি বাঙালির প্রান। তাঁর মাঝে ঘটতে যাচ্ছিল এক মীরাক্কেলের মতো ঘটনা।

পাঁশকুড়ার মেচোগ্রাম মোড়ে দীর্ঘ জীবন কাটানো ভবঘুরে খুঁজে পেলো তাঁর পরিবারকে। তাঁর পরিবার পরিজন তাঁকে তিনবছর পর তাঁর খোঁজ পেয়ে যোগাযোগ করে পাঁশকুড়া থানার পুলিশের সাথে, তাঁদের হারিয়ে যাওয়া ছেলের ছবি পুলিশকে দেখাতেই ছবির সাথে এই ভবঘুরে মানুষটির মিল খুঁজে পায়।

আরও পড়ুন: অজ্ঞাত পরিচয়ের যুবতীর মৃতদেহ উদ্ধার

তাঁর পরনের পোশাখ ছিল একই, তাঁর মুখের ছবিও একই, কোথাও অমিল নেই,এক কথায় ঘরের ছেলে ঘরেই ফিরল বলা যায়। পাঁশকুড়ার মেচোগ্রামে কর্তব্যরত দুই সিভিক ভলেন্টিয়ার তাঁকে প্রায় তুলে দিতে যাচ্ছিল তাঁর পরিবারের হাতে। কিন্তু হঠাৎ ঘটল বিপর্যয়।

যে পরিবার তাঁদের ছেলে বলে দাবি করে ছুটে এসেছিল, তাঁরা বলল ওর পিঠে না কি একটা জন্মদাগ রয়েছে। বলা যা কাজ তা তবে দেখা হোক জন্মদাগ, কিন্তু অসহায় নির্বোধ পাগলটি জামা খুলতে নারাজ, এমন তাজ্জব ঘটনা দেখতে ওখানে জমা হয়েছিল বহু মানুষ, তাঁরাই জোর করে জামা খুলে সে পরিবারকে দেখানো হয়।

কিন্তু পিঠে যে জন্মদাগ সেটা কোথায় ? তা তো নেই! তাঁর পোশাখ তাঁর শারীরিক গঠন সহ তাঁর মুখের মিল পাওয়া গেলেও ওই জন্মদাগ না থাকার কারনে তাঁকে তাঁদের পরিবারের সন্তান হিসেবে অস্বীকার করে তাঁকে সঙ্গে না নিয়ে ফিরে গেল তমলুকের ওই পরিবার।

মেচোগ্রামে কর্তব্যরত এক সিভিক কর্মী কৃষ্ণ অধিকারী বলেন, আমরা ফোনে যোগাযোগ করে জানতে পারি তমলুকের বাসিন্দারা তাঁদের ছেলেকে কোনো এক সময় মেচোগ্রামেই দেখে চিনতে পারে, সেই মোতাবেক শুক্রবার রাতে তাঁরা বাড়ি থেকে তাঁদের হারিয়ে যাওয়া ছেলেকে নিতে আসে।

তবে তাঁরা ওই ছেলেটির সাথে তাঁদের পরিবারের ছেলের ছবি মিলিয়ে দেখে সব কিছু চিনতে পারে কিন্তু তাঁদের ছেলের পিঠে জন্মদাগ ছিল, কিন্তু এর সাথে তাঁদের হারিয়ে যাওয়া ছেলের সব মিল থাকলেও, জন্মদাগ না থাকার কারনে তাঁরা ফিরে যায় আমরা চেষ্টা করেছিলাম তাঁকে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে।

কিন্তু জন্মদাগ না থাকার কারনে তাঁকে তমলুকের ওই পরিবার অস্বীকার করে। তবে তমলুকের ওই পরিবারের সাথে ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করা হলে, ফোনের অপর প্রান্ত থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।

তবে দুর্ভাগ্যবশত নিজের পরিবার ফিরে পেয়েও পেলো না ভাগ্যহীন ওই ভবঘুরে। যেমন ছিল তেমনই তিনবছরের দীর্ঘ ভবঘুরে জীবনে আবার ফিরে গেল সে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button