জাতীয়

দিনে ৫ টাকা আয় থেকে এখন শত কোটির মালিক তিনি

দিনে ৫ টাকা আয় থেকে এখন শত কোটির মালিক তিনি - West Bengal News 24

বাধা সত্ত্বেও নিজের উপর কখনো আস্থা হারাননি জ্যোতি রেড্ডি। জীবনের রেখাচিত্র এঁকেছেন নিজের হাতেই। দিনে ৫ টাকা উপার্জন করা জ্যোতি আজ কোটিপতি। দিনে দু’বেলা খাবার জোটাতে যাকে ভাবতে হত, তার বর্তমান সম্পত্তির পরিমাণ জানলে সকলেরই চোখ কপালে উঠবে!

১৯৭০ সালে তেলঙ্গানার ওয়ারাঙ্গলের অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে জন্ম জ্যোতির। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ৯ বছর বয়সে তাঁকে অনাথ-আশ্রমে রেখে এসেছিলেন বাবা। সঙ্গে তাঁর এক বোনও ছিল। দুই মেয়ের দু’বেলা সামান্য খাবারের আশাতেই আশ্রমে রাখতে বাধ্য হয়েছিলেন তাদের বাবা।

কিন্তু কিছু দিন পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন জ্যোতির বোন। আশ্রম কর্তৃপক্ষ তাকে পাঠিয়ে দেন মা-বাবার কাছে । কিন্তু জ্যোতি রয়ে যান সেখানেই। অনাথ হওয়ার অভিনয় করে যেতেন তিনি।

আরো পড়ুন : আসামে ক্রমাগত গুলি ছোঁড়ার পর ৫ জনকে পুড়িয়ে হত্যা

ওই আশ্রমে থেকেই পড়াশুনা চালিয়ে যান জ্যোতি। দশম শ্রেণি পাশ করেন সেখান থেকেই। তারপর ১৬ বছর বয়সে স্যামি রেড্ডি নামে এক যুবকের সঙ্গে তার বিয়ে হয়।কিন্তু জ্যোতির থেকে দশ বছরের বড় ছিলেন স্যামি। নিজের বলতে ছোট একখান জমি ছিল স্যামির। সেই জমিতে ফসল ফলিয়েই কোনরকম সংসার চালাতেন। দুই সন্তানের ভরণপোষণের দায়িত্ব স্বামীর সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছিলেন জ্যোতিও।

নিজেও মাঠে কাজ করতে শুরু করেছিলেন। টানা ১০ ঘণ্টা কাজের বিনিমিয়ে দিনে ৫ টাকা উপার্জন ছিল তার। এর পর কেন্দ্রীয় সরকারের নেহরু যুব কেন্দ্রের শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন তিনি। দিনভর ছেলে-মেয়েদের পড়াতেন আর রাতে সেলাই করে উপার্জন করতেন। সংসার, স্বামী-সন্তানদের দেখভালের পরও দশম শ্রেণি পাশ জ্যোতি চাইলেন আরও পড়াশোনা করতে ।

সব কিছু সামলে ডক্টর বিআর আম্বেডকর মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক পাশ করেন তিনি। এরপর একটি স্কুলে মাসে ৩৯৮ টাকায় শিক্ষক হিসাবে যোগ দিলেন। স্কুলে যাতায়াত মিলিয়ে সময় লাগতো চার ঘণ্টা।

আরো পড়ুন : রেললাইনে পড়ে ৫০০ ও ২ হাজার টাকার নোটের বান্ডিল, দেখে জ্ঞান হারলেন রেলকর্মী

এই চার ঘণ্টা সময় নষ্ট না করে কাজে লাগান তিনি।গাড়িতেই শাড়ি বিক্রি শুরু করেন। প্রতি শাড়িতে তার লাভও হতো ২০ টাকা করে।

এরপর ১৯৯৫ সালে ২ হাজার ৭৫০ টাকা বেতনে মণ্ডল গার্ল চাইল্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসার হিসাবে কাজে যোগ দেন। তার কাজ ছিল স্কুলে স্কুলে পরিদর্শন করে কন্যাশিশুর শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখা। এই কাজ করতে করতে ১৯৯৭ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও অর্জন করেন তিনি।

সব কিছু চলছিল ঠিকঠাক মতোই। সংসারে তেমন কোন অভাবও ছিল না। কিন্তু মন মানছিল না জ্যোতির। আরও কিছু করতে চাইছিলেন তিনি। এর এক বছর পর আমেরিকা থেকে তার স্বামীর এক তুতো বোন দেশে ফেরেন। তার পোশাক, জীবনযাত্রা দেখে মুগ্ধ হতে শুরু করেন তিনি। একটু একটু করে টাকা জমিয়ে আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে থাকেন জ্যোতি।এজন্য কম্পিউটার শেখা শুরু করলেন। বিষয়টি স্বামীর ভাল না লাগায় জ্যোতিকে অনেক বারণও করেছিলেন। কিন্তু জ্যোতি নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।

২০০১ সালে অফিস থেকে ছুটি নিয়ে আমেরিকা পাড়ি দিলেন জ্যোতি। স্বামীর তুতো বোনের সঙ্গে সেখানে থাকতে শুরু করলেন। পেট চালানোর জন্য তুতো বোনই তাকে ১২ ঘণ্টার একটি কাজের ব্যবস্তা করে দিয়েছিলেন। বেতন ছিল ৬০ ডলার। এর বাইরে বাড়তি উপার্জনের জন্যও বিভিন্ন কাজ করতেন।

আরো পড়ুন : অনেকটা বাড়ল দেশের অ্যাকটিভ কেস, তৃতীয় ঢেউয়ের চোখরাঙানি কেরলে

এ ভাবে দেড় বছর কাটানোর পর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে আসেন সন্তানদের দেখার জন্য। তারপর এক সন্ন্যাসীর কথায় জমানো পুঁজি নিয়ে নিজের ব্যবসা শুরু করলেন। একটি কনসাল্টিং কোম্পানি খুললেন। আমেরিকার ভিসা পেতে সাহায্য করে তার সংস্থাটি। আমেরিকাতেও এই সংস্থা চালু করেছিলেন তিনি।

আমেরিকায় যেতে ভিসা, সেখানে গিয়ে চাকরির খোঁজ, বাসস্থানের খোঁজ—সবই খুব সহজে করতে পেরেছিলেন তার সংস্থাটির কল্যাণে। ওই তুতো বোনও তার ব্যবসার অংশীদার হয়ে যান। দু’জনে মিলে জোরকদমে চালাতে শুরু করেন ব্যবসা।

প্রথম বছরেই ১ কোটি ২৪ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯৯ টাকার ব্যবসা করেন। আমেরিকায় কাজ করার স্বপ্ন দেখা মধ্যবিত্ত এবং গরিবদের কাছে এই সংস্থা হয়ে ওঠে সমস্ত সমস্যার সমাধান। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আরও বেশি অর্থ উপার্জন করতে শুরু করেন তিনি।

আরো পড়ুন : পুজোয় সতর্ক না হলেই বাড়বে সংক্রমণ, হুঁশিয়ারি স্বাস্থ্যমন্ত্রকের

বর্তমানে ১০০ কর্মী রয়েছে তার অধীনে। হায়দরাবাদে একটি এবং আমেরিকায় চার-চারটি বাড়ি করেছেন জ্যোতি। বছরে তার সংস্থার লেনদেন ১১১ কোটি টাকার বেশি।

আরও পড়ুন ::

Back to top button