বর্ধমান

কালনায় বাড়ি থেকে উদ্ধার শিক্ষিকার ঝুলন্ত দেহ, মৃতার ছেলের ভূমিকায় রহস্য

কালনায় বাড়ি থেকে উদ্ধার শিক্ষিকার ঝুলন্ত দেহ, মৃতার ছেলের ভূমিকায় রহস্য - West Bengal News 24

বাবার মৃত্যু হয়েছে রেল দুর্ঘটনায়। তাও বছর চারেক হয়ে গিয়েছে। এরপর থেকে মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করেই ছেলেকে বড় করছিলেন বছর পঁয়তাল্লিশের সুনন্দা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ছেলের সঙ্গে প্রায়শই ঝামেলা লেগে থাকত তাঁর। তার মূল কারণ ছেলের পড়াশোনা। আর ঝামেলা হলেই রাগ করে দরজা বন্ধ করে একটা ঘরে নিজেকে আলাদা রাখতেন তিনি। তারপর রাগ পড়লে নিজেই বেরিয়ে আসতেন ঘর থেকে।

মাকে ঠিক এই ভাবেই দেখে অভ্যস্ত ছেলেও! সোমবার রাতেও ঠিক তেমনটাই হয়। এরপর সুনন্দা চলে গিয়েছিলেন নিজের ঘরে। আর ছেলে রাগ করে চলে গিয়েছিল মামাবাড়ি! ব্যস, যোগাযোগ হয়নি আর। বৃহস্পতিবার সকালে পচা গন্ধ পেয়ে প্রতিবেশীরাই উদ্ধার করলেন সুনন্দাকে। তখন তাঁর সারা শরীরে পচন ধরেছে। ওই অবস্থাতেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছিলেন তিনি। মর্মান্তিক ঘটনা কালনা শহরের প্রফেসর কলোনিতে।

প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, মাঝেমধ্যেই ওই বাড়ি থেকে চিত্কার চেঁচামেচি শুনতে পারতেন তিনি। বাড়িতে থাকতেন কেবল মা আর ছেলে। পড়াশোনা নিয়ে দু’জনের মধ্যে ঝামেলা লেগেই থাকত। অশান্তি হত নিত্য। তাই সোমবার সন্ধ্যার চেঁচামেচিতেও বিশেষ আমল দেননি তাঁরা।

আরো পড়ুন : ভবানীপুর উপনির্বাচন নিয়ে মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা হাইকোর্টে

প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিস্থিতি এক্কেবারে স্বাভাবিক ছিল। বাড়িতে কোনও সাড়া শব্দ ছিল না। প্রতিবেশীরা ভেবেছিলেন. হয়তো ছেলে শুধরে গিয়েছে আর মা কাজে চলে গিয়েছেন। তখনও তাঁরা জানতেন না গোটা বিষয়। এই ভাবেই কেটে যায় আরও একটা দিন। কিন্তু বুধবার রাত থেকে একটা কটু গন্ধ আসতে থাকে প্রতিবেশীদের নাকে।

গন্ধের উত্স সন্ধানে প্রতিবেশীরা নিজেরাই তত্পর হন। তারপর বুঝতে পারেন সুনন্দার বাড়ির ভিতর থেকেই গন্ধ আসছে। প্রথমে তাঁরা ডাকাডাকি করতে থাকেন। সাড়া না পেয়ে নিজেরাই তালা ভেঙে ভিতরে ঢোকেন। তখনই বিপদ আঁচ করতে পেরেছিলেন তাঁরা। একটা ঘর থেকে বিশেষ গন্ধ নাকে আসে। ততক্ষণে খবর যায় থানায়। দরজা ভেঙে ভিতর ঢুকে কার্যত স্তম্ভিত পুলিশ-প্রতিবেশীরা।

দেখা যায়, সুনন্দার শরীর গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় ঝুলছে। শরীরে পচন ধরেছে। পুলিশ গিয়ে দেহ উদ্ধার করে। খবর যায় সুুনন্দার ছেলে সম্ভ্রমের কাছেও।

আরো পড়ুন : চার মাস পর অবশেষে নিহত বিজেপি কর্মী অভিজিত্‍ সরকারের দেহ পাচ্ছে পরিবার

সম্ভ্রমের বয়ান অনুযায়ী, “পড়াশোনা নিয়ে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই ঝামেলা হত। বহু বার মা রাগ করে ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দেয়। গত মঙ্গলবার দীর্ঘক্ষণ দরজা খোলে না মা। আমি তখন মামার বাড়ি চলে যাই। ভেবেছিলাম মার রাগ এমনিতেই কমে যাবে। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে। এমনটা হবে ভাবিনি।”

পুলিশের অনুমান, দুদিন আগেই মৃত্যু হয়েছে। তার ফলে শরীরে পচন ধরেছে। প্রতিবেশীদের কথায়, “মা-ছেলের তো অশান্তি হত। পরে আবার স্বাভাবিকও হয়ে যেত। এমনটা হবে বুঝতে পারিনি।” তবে সম্ভ্রমের বক্তব্য খতিয়ে দেখছে পুলিশ। কেন এই দুই দিনে একবারও মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করল না ছেলে, কেন একবারও ফোন করেও খোঁজ নিল না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

সূত্র: টিভি ৯

আরও পড়ুন ::

Back to top button