বিচিত্রতা

দেহব্যবসা করে পড়াশোনা, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জিতেছেন ৭টি আন্তর্জাতিক খেতাব

Naaz Joshi : দেহব্যবসা করে পড়াশোনা, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জিতেছেন ৭টি আন্তর্জাতিক খেতাব - West Bengal News 24

দেশের প্রথম রূপান্তরকার্মী সুন্দরী তিনি। দেশে তো বটেই বিদেশেও সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আন্তর্জাতিক খেতাব জিতেছেন। একবার নয় সাত বার। তবু উপার্জনের জন্য এখনও নিয়মিত রাস্তায় দাঁড়াতে হয় তাকে।

নাজ জোশী। তিনি ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ ফ্যাশন টেকনোলজির (এনআইএফটি) ছাত্রী। পোশাক ডিজাইনিংয়ে স্নাতক। নিজের ব্যাচে শীর্ষ স্থানে ছিলেন নাজ। তবে নিজের পড়াশোনার খরচ চালাতে বারে নাচতে হয়েছে। এমনকি যৌনকর্মীর কাজও করেছেন নাজ।

ছোটবেলাতেই বাবা-মা তাকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিলেন। তার মেয়েলি হাবভাবে লজ্জায় পড়তেন তারা। প্রতিবেশীদের ভয়ে মুম্বাইয়ের এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন তাকে। সেখানেই মানুষ হন নাজ।

তবে নিজের খরচ বরাবর নিজেই বহন করেছেন। পড়াশোনার ইচ্ছে ছিল প্রবল। ১২ বছর বয়স থেকে বারে নাচছেন। তাতে অবশ্য নাজের কোনও অসুবিধা হয়নি। বরং মেয়েদের মতো পোশাক পড়তে পেরে, মেক আপ করার সুযোগ পেয়ে ভালই লাগত তার।

Naaz Joshi : দেহব্যবসা করে পড়াশোনা, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জিতেছেন ৭টি আন্তর্জাতিক খেতাব - West Bengal News 24

এ ভাবেই উপার্জন করে আইএমটি থেকে এমবিএ-ও করেছেন নাজ। পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের লিঙ্গ পরিবর্তন সংক্রান্ত অস্ত্রোপচারের খরচও জোগাড় করেছিলেন নিজেই।

আরও পড়ুন : পাথর বের করতে গিয়ে গোটা কিডনিই কেটে নিলেন চিকিত্‍সক, তারপর যা হল

মডেলিং করবেন কখনও ভাবেননি। বরং ডিজাইনার হওয়ারই ইচ্ছে ছিল। পেশায় মডেল এক দূর সম্পর্কের বোনের মাধ্যমে মডেলিংয়ের দুনিয়ায় আসা তার। পরে সেই বোনেরই অকালমৃত্যুতে মডেলিংকে পেশা হিসেবে নেওয়ার কথা মাথায় আসে নাজের।

২০১২ সাল থেকে মডেলিং এজেন্সির কাজ করতে শুরু করেন। ২০১৪-এ প্রথম সৌন্দর্য্য প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন নাজ। তার সাম্প্রতিক সাফল্য এমপ্রেস আর্থের খেতাব জয়।

মে মাসে ভারতের হয়ে এই আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন নাজ। গত ১ জুন সেই প্রতিযোগিতায় জয়ী হন। ওই প্রতিযোগিতায় নাজ একাই ছিলেন রূপান্তরকার্মী।

Naaz Joshi : দেহব্যবসা করে পড়াশোনা, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জিতেছেন ৭টি আন্তর্জাতিক খেতাব - West Bengal News 24

আন্তর্জাতিক সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নারীদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে সেরা সুন্দরীর খেতাব ছিনিয়ে নেওয়া রূপান্তরকার্মী তিনিই প্রথম। তবে নাজকে তার জন্য অনেক গঞ্জনা সহ্য করতে হয়েছে। এমনকি কমবয়সীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ায় বয়স নিয়েও বিরূপ মন্তব্য শুনতে হয়েছে তাকে।

মোট ১৫টি দেশের প্রতিযোগী অংশ নিয়েছিলেন। নাজ জানিয়েছেন, একজন রূপান্তরকামীর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হবে জেনে অনেকে প্রতিযোগিতা থেকে নাম প্রত্যাহার করে নেন। তবে এই সব অপমান গায়ে মাখেননি নাজ। তিনি তার সেরাটা দিয়ে নিজেকে প্রমাণ করেছেন এবং সেরার খেতাবটি ছিনিয়ে নিয়েছেন।

নাজের সঙ্গে শেষ পাঁচে ছিলেন কলম্বিয়া, মেক্সিকো, ব্রাজিল এবং স্পেনের সুন্দরীরা। প্রতিযোগিতায় প্রথম রানার আপ হন কলম্বিয়ার প্রতিযোগী ভ্যালেন্টিনা। তৃতীয় স্থানে ছিলেন মেক্সিকোর অলিভিয়া। দু’জনেই নাজের বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করেছেন।

Naaz Joshi : দেহব্যবসা করে পড়াশোনা, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জিতেছেন ৭টি আন্তর্জাতিক খেতাব - West Bengal News 24

নাজ অবশ্য এর আগেও আরও বহু আন্তর্জাতিক শিরোপা জিতেছেন। ২০২০ সালে মিস ইউনিভার্স ডাইভারসিটির খেতাব পেয়েছেন। ২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত পর পর তিন বার মিস ওয়ার্ল্ড ডাইভারসিটির মুকুট উঠেছে তার মাথায়। এ ছাড়া মিস রিপাবলিক ইন্টারন্যাশনাল সৌন্দর্য রাষ্ট্রদূত হয়েছেন। রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফেও সৌন্দর্য দূত হিসাবে নির্বাচিত করা হয় তাকে।

তবে আন্তর্জাতিক খেতাব পেলেও ব্যক্তিগত জীবনে এখনও বেশ অসহায় নাজ। স্থায়ী উপার্জনের রাস্তা নেই। ফ্যাশন ডিজাইনের টপার, আইএমটি থেকে এমবিএ করা নাজ বহু চেষ্টা করেও একটি চাকরি পাননি। নাজ জানিয়েছেন, এর কারণ তিনি একজন রূপান্তরকামী আর সমাজ এখনও একজন রূপান্তরকার্মীকে আলাদা চোখেই দেখে।

Naaz Joshi : দেহব্যবসা করে পড়াশোনা, সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় জিতেছেন ৭টি আন্তর্জাতিক খেতাব - West Bengal News 24

মুসলিম মা এবং হিন্দু পাঞ্জাবী বাবার সন্তান নাজ। তবে বাবা এখনও কথা বলেন না তার সঙ্গে। মা-ও সুযোগ পেলেই গঞ্জনা দেন। নাজ জানিয়েছেন, রূপান্তরকার্মী হিসেবে অনেকরকম মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাদের। এর সঙ্গে পরিবারকে পাশে না পাওয়া আরও বেদনাদায়ক।

নাজের দু’টি মেয়ে সন্তান আছে। একটি আইভিএফ শিশু। অন্য জনকে তার মা ময়লা ফেলার পাত্রে ফেলে দিয়েছিল। সেখান থেকে তাকে তুলে এনে দত্তক নিয়েছেন নাজ। তাদের নিজের মতো করে মানুষ করছেন। নাজ জানিয়েছেন, ভালবাসা তার দুই সন্তানের কাছেই পেয়েছেন তিনি।

আরও পড়ুন ::

Back to top button