আন্তর্জাতিক

ক্ষমতাবান চার ভাই যেভাবে শ্রীলঙ্কাকে ডুবিয়েছে

ক্ষমতাবান চার ভাই যেভাবে শ্রীলঙ্কাকে ডুবিয়েছে - West Bengal News 24

এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপভাবে অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে দুই কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশ শ্রীলঙ্কা। দেশটিতে সার নিষেধাজ্ঞার ফলে ফসল উৎপাদনে বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে।

চাল ও চা উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যমাত্রায়ও ধস নেমেছে। সে কারণে বর্তমানে জরুরি মানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে দেশে।

এই সঙ্কট দেশটির সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

দেশটি এখনো তার প্রধান দুই শুভাকাঙ্ক্ষী দেশ ভারত ও চীনের সাহায্যের ওপর নির্ভর করছে এবং বৈশ্বিক সাহায্য প্রত্যাখ্যান করে কলম্বো এখন অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের দ্বারপ্রান্তে।

গত মঙ্গলবার কলম্বোতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছিল। অন্তত ১০ হাজার বিরোধী সমর্থকরা প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বাইরে জমায়েত হয়ে তাঁর পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দিয়েছে।

দেশটিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি চরমে উঠেছে। দিনমজুর থেকে শুরু করে অন্য পেশাজীবীদের জন্যও এটি চরম ভোগান্তির কারণ। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে গত দুই বছর ধরে সবকিছু স্থবির হয়ে ছিল। এছাড়া ২০১৯ সালের ইস্টার সানডের দিন বোমা হামলায় ২৭০ জন নিহতের ঘটনায় গির্জা এবং বিলাসবহুল হোটেলগুলো চরম সঙ্কটে আছে। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠে মূল পর্যটন শিল্প নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন :: পুতিনকে পাগল বলা সেই রুশ মডেলকে যেভাবে হত্যা করা হয়!

দেশটিতে মুদ্রাস্ফীতি ১৫ শতাংশ বেড়েছে; যা এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে খারাপ। এসবের পেছনে রাজাপাকসের প্রভাব ছোট করে দেখা কঠিন। গোতাবায়া রাজাপাকসে ২০১৯ সালে দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ভাই মাহিন্দাকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। যদিও মাহিন্দা ২০০৪ সালেই ক্ষমতায় এসেছিলেন। প্রথমে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতা নিলেও পরে প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। ওই সময় গোতাবায়া রাজাপাকসে ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। তামিল বিদ্রোহীদের সঙ্গে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটাতে ২০০৯ সালের অপারেশনে নিজের ভূমিকার জন্য তিনি কুখ্যাত ছিলেন।

তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী, সাংবাদিক এবং ভিন্নমতাবলম্বীদের নির্যাতন, ধর্ষণ, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং অপহরণের পর হত্যার অভিযোগ রয়েছে। ওই সময় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে কিংবা নিখোঁজ হয়েছে। যদিও গোতাবায়া সেইসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

রাজাপাকসে ভাইয়েরা ২০১৫ সাল থেকে কয়েক বছর ক্ষমতার বাইরে ছিলেন। তখন মাইথ্রিপালা সিরিসেনা এবং রনিল বিক্রমাসিংহে সে দেশের নেতৃত্ব দিয়েছেন। তবে ২০১৮ সালে বিক্রমাসিংহকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করা হলে সাংবিধানিক সঙ্কটের সূচনা দেয়।

২০২০ সালের আগস্টের নির্বাচনে তাঁদের দল নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। প্রেসিডেন্ট পদের ক্ষমতা আগে কমানো থাকলেও তা পুনরায় চালু করা হয়। ২০২১ সালে এসে আরেক ভাই বাসিলকে অর্থমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়।

তাঁদের বড় ভাই কমল পূর্ণ মন্ত্রী এবং তাঁর ছেলে প্রতিমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর এক ছেলেও মন্ত্রীসভার সদস্য, আরেকজন প্রধান কর্মকর্তা, আরেক ভাতিজা সংসদ সদস্য।

অভিযোগ রয়েছে, সে দেশের বাৎসরিক বাজেটের প্রায় ৭৫ শতাংশ রাজাপাকসের মন্ত্রীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি বংশবাদী রাজনীতি করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে শ্রীলঙ্কা বর্তমানে যে সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে, ক্ষমতাধর রাজাপাকসে ভাইয়েরা তা থেকে উত্তোরণে সহায়তা করছেন না।

গত ১৬-১৭ মার্চ ভারতে ছিলেন বাসিল। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের জেরে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে সংকট থেকে বাঁচতে সহায়তার জন্য এক বিলিয়ন ডলার সুরক্ষিত করেছিলেন তিনি। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন পরিবহণ খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।

এ বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০ শতাংশ পর্যটক রাশিয়া, ইউক্রেন, পোল্যান্ড এবং বেলারুশ থেকে শ্রীলঙ্কায় এসেছেন। শ্রীলঙ্কার চায়ের অন্যতম বড় ক্রেতা রাশিয়া। আইএমএফ-এর কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার জন্য রাজাপাকসে ভাইদের নমনীয়তার প্রভাব পড়ছে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে। ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কার কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই আইএমএফ-এর সঙ্গে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। সামনের মাসের মধ্যে নীতি-নির্ধারণী প্রস্তাব তারা দিয়ে দিতে পারে।

এদিকে শ্রীলঙ্কা পুলিশ গতকাল রবিবার জানিয়েছে, সস্তায় কেরোসিন এবং পেট্রোল কেনার জন্য লম্বা সারিতে অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়ে অন্তত দু’জন মারা গেছেন।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল রবিবার শ্রীলঙ্কার পৃথক দুটি স্থানে প্রাণহানির ঘটনাটি ঘটেছে বলে দেশটির পুলিশ জানিয়েছে।

শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বো পুলিশের মুখপাত্র নালিন থালদুওয়া বলেছেন, পৃথক দু’টি স্থানে পেট্রোল এবং কেরোসিন তেল কেনার জন্য সারিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন বহু মানুষ। ওই সময় বয়স্ক দুই ব্যক্তি মারা গেছেন।

জানা গেছে, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির কারণে খাদ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম আকাশচুম্বি হয়েছে শ্রীলঙ্কায়। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটির বিভিন্ন স্থানে তেলের পাম্পে মানুষকে দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে সারিতে দাঁড়িয়েও অনেক সময় লোকজন প্রয়োজনীয় তেল এবং পেট্রোল না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। জ্বালানির সঙ্কটের কারণে দেশটিতে বিদ্যুৎ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

কলম্বো পুলিশের মুখপাত্র বলেছেন, নিহতদের মধ্যে একজন ৭০ বছর বয়সী থ্রি-হুইলার চালক। তিনি ডায়াবেটিক এবং হার্টের রোগী ছিলেন। অন্যজন ৭২ বছর বয়সী। দু’জনই জ্বালানি তেলের জন্য প্রায় চার ঘণ্টা ধরে সারিতে অপেক্ষা করছিলেন।

সূত্র: ইকোনমিক টাইমস।

আরও পড়ুন ::

Back to top button