জানা-অজানা

বিয়ের কয়েক ঘণ্টা পরই স্ত্রীসহ আত্মহত্যা করেছিলেন হিটলার! কারন জানলে অবাক হবেন

বিয়ের কয়েক ঘণ্টা পরই স্ত্রীসহ আত্মহত্যা করেছিলেন হিটলার! কারন জানলে অবাক হবেন

অ্যাডলফ হিটলার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত তিনি জার্মানির চ্যান্সেলরের দায়িত্ব পালন করেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনিই নাৎসি বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। তবে এতবড় নাৎসি বাহিনীর সর্বাধিনায়ক বিয়ের কয়েক ঘণ্টা পরই সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেন।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি পরাজিত হয়েছিল। রীতিমতো বাধ্য হয়ে ভার্সাই (একটি শান্তিচুক্তি, যা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপর যুদ্ধের মিত্রশক্তি ও তৎসংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহ এবং জার্মানির মধ্যে সম্পাদিত হয়) চুক্তিতে সই করতে হয়েছিল তাদের। অপমানজনক সেই চুক্তিতে যুদ্ধাপরাধীর তকমা দেওয়া হয় জার্মানিকে। যুদ্ধে জখমও হয়েছিলেন করপোরাল পদে থাকা হিটলার।

যুদ্ধশেষে হিটলার যোগ দিয়েছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টিতে। এরপরই চমকপ্রদ উত্থান হয় তার। পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান তিনি। মূলত বক্তব্য দিয়ে তিনি জনগণকে মুগ্ধ করা শুরু করেন। জার্মানির অধঃপতনের জন্য দায়ী করতে থাকেন ইহুদি ও বলশেভিকদের। তিনি বলতে শুরু করেন, নর্ডিক জার্মানরাই বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জাতি এবং গোটা বিশ্ব তাদের হাতের তালুতে বন্দি হবে। তার কথা অযৌক্তিক হলেও বলার ভঙ্গিতেই বাজিমাত হয়ে যেত। লোক পাগল হয়ে তার কথা শুনতো। ক্রমেই তিনিই হয়ে উঠলেন জার্মানির মুখ। যেভাবে ইতালিকে স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেছিলেন আরেক একনায়ক মুসোলিনি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে হিটলারের সাফল্যে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে ওঠে ইউরোপ। তবে এই যুদ্ধের সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ছিল রাশিয়া ও জার্মানির মধ্যে হওয়া অনাক্রমণ চুক্তি। এক ফ্যাসিস্ট শক্তির সঙ্গে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নের সমঝোতায় যেন সিঁদুরে মেঘ দেখেছিল পশ্চিমা শক্তি। একে একে পোল্যান্ড, নরওয়ে, ডেনমার্ক সব দখল করে নিয়েছিল নাৎসিরা। হল্যান্ড, বেলজিয়াম কিংবা ফ্রান্সও টিকতে পারেনি না তাদের সামনে। তাদের সঙ্গে লড়াই হয় ব্রিটেনের।

এমন পরিস্থিতিতে হিটলারের মুখোশ খুলে যায়। বন্ধু দেশ রাশিয়ার দিকেই ঘুরে যায় জার্মানের কামান। স্তম্ভিত হয়ে গেলেন সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট জোসেফ স্টালিন। এভাবে হিটলার বিশ্বাসঘাতকতা করবেন এটা ভাবতেও পারেননি তিনি। তবে এই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত কাল হয় দাঁড়িয়েছিল হিটলারের জীবনে। শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার পাল্টা রণনীতিতে জার্মানির সেনাবাহিনী মুখ থুবড়ে পড়তে লাগল। আমেরিকা ও ব্রিটেনের জোট অর্থাৎ মিত্রশক্তি যে শেষ হাসি হাসবে তা পরিস্কার হয়ে উঠল। ক্রমেই কোণঠাসা হতে শুরু করল জার্মানি। ফলে যতই সময় এগোচ্ছিল, ততই ঘনিয়ে আসছিল হিটলারের শেষ দিন। যে দিনটির কথা জোনাথন মায়ো ও এমা ক্রেইগির লেখা ‘মিনিট বাই মিনিট’ বইয়ে রয়েছে খুঁটিনাটি।

মৃত্যুর ঠিক একদিন আগে ২৯ এপ্রিল দুপুর ৩টার দিকে নিজের পরম আদরের পোষ্য জার্মান শেফার্ড ব্লন্ডিকে পটাশিয়াম সায়ানাইড খাইয়ে হত্যা করেছিলেন হিটলার। বলা হয় হিটলারের নিজের মৃত্যুর প্রস্তুতিতে এটাই তার প্রথম পদক্ষেপ। আসলে হিটলার চাননি ব্লন্ডিকে প্রভুর মৃত্যুশোক দিতে। তিনি চাননি তাকে না পেয়ে তার কুকুরটির ওপর অত্যাচার চালাক সোভিয়েত সেনারা। ব্লন্ডির সঙ্গে মেরে ফেলা হয় আরও পাঁচটি পোষ্য কুকুরকে। তাদের মৃতদেহ পুঁতে ফেলা হয় চ্যান্সেলারির বাগানে। যে বাগানে এতদিন ওই কুকুরদের সঙ্গে খেলাধুলা করতেন হিটলার। পোষ্যদের কবর দেওয়ার সময় ভেজা চোখে সেদিকে নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন হিটলার বলে জানা যায়।

২৯ এপ্রিল রাতে হিটলার তার উইল তৈরি করেন। সেখানেই তিনি তার ইচ্ছার কথা জানিয়ে যান। তিনি লিখেন, ‘তার মৃত্যুর পরে তাকে ও ইভাকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।’

যখন হিটলার তার চেম্বারে বসে এটি লিখছিলেন তখন ইভা নিজের বিয়ের পোশাক পছন্দ করতে ব্যস্ত ছিলেন। যদিও ততক্ষণে তিনি জেনে গিয়েছিলেন এই বিয়ের পরিণতি হবে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। ২৯ তারিখ দুপুরের খাওয়ার সময় হিটলার তার পরিকল্পনার কথা খুলে বলেছিলেন স্ত্রীকে। জানিয়েছিলেন, তিনি বন্দুকের সাহায্যে আত্মহত্যা করবেন।

তখন ইভা জানিয়েছিলেন, তিনি জীবনের শেষ দৃশ্যে কোনো রক্তারক্তি চান না। তাই পটাশিয়াম সায়ানাইডের স্পর্শেই মৃত্যুর নীল রং কে প্রত্যক্ষ করবেন। রক্তমাখা মৃতদেহ নয় সুন্দর এক লাশ হয়ে ওঠতে চেয়েছিলেন ইভা।

অবশেষে ৩০ এপ্রিল রাত ১টার দিকে হিটলার বিয়ে করলেন ইভাকে। তারপর রাত আড়াইটার দিকে শুরু হলো এক পার্টি। সেখানে ছিলেন হিটলারের দুই সেক্রেটারি ও ডাক্তার-নার্সরা। শোনা যায়, মদ্যপ অবস্থায় হিটলার জানিয়ে দেন, ইভা ও তিনি একইসঙ্গে মৃত্যুবরণ করবেন।

এরপর সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে একটি ঘরে ঢোকেন ইভা ও হিটলার। ভোর ৬টার দিকে খবর আসে লালফৌজের দখলে চলে গেছে রিখস্ট্যাগ। তারও কিছুক্ষণের মধ্যেই খবর আসে বার্লিনে দুদ্দাড়িয়ে ঢুকে পড়তে চলেছে রুশ সেনা। হিটলার বুঝে গেলেন শেষ আশাও আর নেই। এরপরই প্রস্তুতি শুরু নেন আত্মহত্যার। বেলা পৌনে একটার দিকে নিজের সেনানায়কদের ধন্যবাদ জানিয়ে নিজের টেবিলে বসে স্প্যাগেটি ও স্যালাড খান তিনি। তখন ইভা নিজের ঘরেই বন্দি ছিলেন। ইভা নিজেকে সাজাচ্ছেন প্রেমিকের প্রিয় সাদা গোলাপ বসানো কালো পোশাকে।

অন্যদিকে, হিটলার ভাবলেশশূন্য মুখে শেষ খাওয়া সারছেন। এরপরই হিটলার ও ইভার ঘর থেকে ভেসে আসে গুলির শব্দ। কিছুক্ষণ পরে গোয়েবলস ও অন্যরা ঘরে ঢুকে দেখতে পান হিটলার ও ইভার মরদেহ। বাইরে তখন গোলাবর্ষণের কর্কশ শব্দ। এর মধ্যেই দ্রুত মরদেহ দুটি পেট্রোল ঢেলে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। আর তারপর সেই ছাই ছড়িয়ে দেওয়া হয় চ্যান্সেলারির বাগানে। যে বাগানে নিজের পোষ্যদের দেহ আগের দিন পুঁতে দিয়েছিলেন হিটলার। গোটা পৃথিবীর মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠা ভয়ংকর এক নেতার পরিণতি! তবে মুসোলিনির মতো ধরা পড়ে চরম লাঞ্ছনার মুখে পড়তে হয়নি এটিই হয়তো হিটলারের সান্ত্বনা ছিল।

সূত্র: ডেইলি মিরর ও সংবাদ প্রতিদিন

আরও পড়ুন ::

Back to top button