গোবরডাঙা জীব-বৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা সমিতির ব্যবস্থাপনায় ৯-১১ ডিসেম্বর ২০২২ গোবরডাঙা রেনেসাঁস ইন্সটিটিউটে বসেছিল জৈব মেলা। উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা তার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য এমনিতেই বিশেষভাবে পরিচিত। সেখানেই বসেছিল তিন দিনের জৈব মেলা। গোবরডাঙা গবেষণা পরিষদের উদ্যোগে প্রতি বছরই এই জৈব মেলার আয়োজন করা হয়। এবছরও তার ব্যতিক্রম ছিল না। গোবরডাঙা রেনেসাঁস ইন্সটিটিউটের সহযোগিতায় এই মেলার আয়োজন করা হয়েছিল।
জৈব মেলায় জৈব চাষ সম্পর্কিত একাধিক স্টল বসেছিল। সেখানে প্রদর্শিত হয় বিভিন্ন জাতের দেশি চাল, ডাল, সরিষার তেল, মশলা, চিঁড়ে, মুড়ি, মধু, সবজি প্রভৃতি। সেগুলি বিক্রির ব্যবস্থাও ছিল। তিন দিনের এই জৈব মেলায় জৈব চাষের সঙ্গে যুক্ত বহু কৃষি ব্যক্তিত্ব ও কৃষক ভাইয়েরা উপস্থিত হয়েছিলেন।
জৈব চাষ প্রশিক্ষকগণ বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন। বিশিষ্ট কৃষি বিজ্ঞানী, বিজ্ঞানকর্মী, পরিবেশ বিজ্ঞানী, পরিবেশ কর্মীরা এই জৈব মেলায় অংশগ্রহণ করেন। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি কয়েকটি বিষয়ে প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। কম্পোস্ট সার তৈরি, কেঁচো সার তৈরি করে দেখানো হয়। মৌমাছি পালন, কচুরিপানা থেকে কাগজ ও ব্যবহার্য সৌখিন দ্রব্য প্রস্তুত বিষয়েও হাতে কলমে জানতে পারা যায়। এছাড়াও এই তিন দিনের জৈব মেলায় ছিল পরিবেশ ও বিজ্ঞান বিষয়ক একাধিক গ্রন্থাদি, পত্র-পত্রিকার স্টল।
মেলায় গোবরডাঙা জীববৈচিত্র্য ব্যবস্থাপনা সমিতির মুখপত্র ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’ (Bio-diversity Conservation News Letter) পত্রিকার বিগত সংখ্যাগুলি প্রদর্শিত হয়। বিজ্ঞান মেলা, গোবরডাঙা, মুক্তমন মুক্তচিন্তা, গণিত ভাবনা, কুশদহ বার্তা, বিজ্ঞান অন্বেষক প্রভৃতি পত্রিকাগুলিও জৈব মেলায় ছিল। ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’-র প্রকাশক এবং জৈব মেলা ২০২২-এর প্রধান আয়োজক দীপককুমার দাঁ তাদের এই মেলা সম্পর্কে বলেন, “জৈব মেলার আয়োজন আমরা প্রতি বছরই করে থাকি। এই মেলার উদ্দেশ্যই হল জৈব চাষ এবং বিষমুক্ত শাকসবজি, খাবারের প্রতি মানুষকে আরো বেশি আগ্রহী করে তোলা।”
শান্তিপুরের বিশিষ্ট জৈব কৃষি প্রচারক শৈলেন চন্ডীও জৈব মেলায় এসেছিলেন। তাদের বিষমুক্ত খাবার সামগ্রীর একটি স্টলও জৈব মেলায় ছিল। বলাগড় থেকে উজ্জল কাঞ্জিলাল জোয়ার, বাজরা, রাগি প্রভৃতি দানাশস্যের সম্ভার নিয়ে এসেছিলেন জৈব মেলায়। ভেষজগুণ সম্পন্ন একাধিক সামগ্রীর স্টল তিনদিনের এই জৈব মেলায় দেখতে পাওয়া যায়। পরিবেশ ও বিজ্ঞান সংগঠনের একাধিক কর্মী জৈব মেলায় অংশগ্রহণ করতে এসেছিলেন।
কাঁচরাপাড়া বিজ্ঞান দরবারের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন বরিষ্ঠ বিজ্ঞানকর্মী জয়দেব দে। তাদের ‘বিজ্ঞান অন্বেষক’ পত্রিকার পক্ষ থেকে জৈব মেলায় একটি স্টল দেওয়া হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ্য বিজ্ঞানী শতাব্দী দাশ, বিজ্ঞানী সৈকতকুমার বসু, সমাজকর্মী সুনীল বিশ্বাস, কবি মণিমোহন ধর, লেখক সুকুমার মিত্র-সহ বহু বিশিষ্টজন জৈব মেলার মূল মঞ্চে বক্তব্য রাখেন।
সমগ্র অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন বরিষ্ঠ বিজ্ঞানকর্মী দীপককুমার দাঁ। তিন দিনের জৈব মেলা বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। সারাদিনব্যাপী মেলা চলে। সন্ধ্যায় বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
লেখক: সম্পাদক, ‘জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা বার্তা’।