ঝাড়গ্রাম

মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ক্রীড়া দফতরে চাকরি পেলেন বিশ্বকাপ জয়ী দৃষ্টিহীন ক্রিকেটার

স্বপ্নীল মজুমদার

Subhendu Mahato : মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে ক্রীড়া দফতরে চাকরি পেলেন বিশ্বকাপ জয়ী দৃষ্টিহীন ক্রিকেটার - West Bengal News 24

মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখে আর্জি জানানোর আড়াই মাস পরেই মিলল সরকারি চাকরি। ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ দফতরে চুক্তিভিত্তিক চাকরি পেলেন বিশ্বকাপ জয়ী ঝাড়গ্রামের দৃষ্টিহীন ক্রিকেটার শুভেন্দু মাহাতো। বৃহস্পতিবার দফতর থেকে শুভেন্দুকে নবমহাকরণে ডেকে পাঠিয়ে চুক্তিভিত্তিক গ্রুপ সি পদে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়। সেখানেই কাজে যোগ দেন শুভেন্দু।

দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভেন্দুকে পছন্দমত এলাকায় পোস্টিং দেওয়া হবে। গত বছর ডিসেম্বরে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে দৃষ্টিহীনদের টি-২০ বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতীয় দলে বাংলার একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন শুভেন্দু। বাংলাদেশকে হারিয়ে জয়ী হয় ভারত। জয়ী হয়ে ফেরার পর শুভেন্দুকে নিয়ে তাঁর গ্রামের লোকজন ও বিভিন্ন সংগঠন ঝাড়গ্রামে অভিনন্দনযাত্রা করেছিল।

তারপরই শুভেন্দু কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে চাকরির আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়ে এসেছিলেন। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়নি। চাকরি পেয়ে শুভেন্দু বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ। এর ফলে খেলাধুলার চর্চা আরও ভালভাবে করতে পারব।’’

বছর ছাব্বিশের শুভেন্দুর বাড়ি ঝাড়গ্রাম ব্লকের কয়েমা গ্রামে। পাঁচ বছর বয়সে রাস্তায় হেঁটে যাওয়ার সময়ে এক সাইকেল আরোহীর ধাক্কায় মাথায় ও চোয়ালে গুরুতর আঘাতের জেরে ডান চোখের দৃষ্টিশক্তি একশো শতাংশ নষ্ট হয়ে যায় তাঁর। কয়েক বছর পর বাঁ চোখেরও দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন তিনি।

কলকাতা ও ওড়িশার হাসপাতালে নাগাড়ে চিকিৎসা করিয়েও কোনও লাভ হয়নি। দরিদ্র চাষি পরিবারের ছেলেটিকে অবশেষে পড়াশোনার জন্য ভর্তি করানো হয় পূর্ব মেদিনীপুরের দৃষ্টিহীনদের আবাসিক স্কুল চৈতন্যপুর বিবেকানন্দ মিশন আশ্রমে। সেখান থেকে ২০১৪ সালে মাধ্যমিকে ৮৩ শতাংশ ও ২০১৬ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে ৮১ শতাংশ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। রাইটারের সাহায্য নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছিলেন শুভেন্দু। পরে ২০১৯-এ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম শ্রেণির স্নাতক হন। সেখান থেকেই প্রথম শ্রেণিতে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তরও উত্তীর্ণ হন।

এই মুহূর্তে নদিয়ার শান্তিপুরে একটি বেসরকারি কলেজে বিএড কোর্স করছেন শুভেন্দু। শুভেন্দু জানালেন, চৈতন্যপুরের আবাসিক স্কুলে পড়ার সময়ে ক্রিকেট খেলার তাঁর হাতেখড়ি। ২০১৪ সালে সিএবিবি-এর (ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য ব্লাইন্ড অফ বেঙ্গল) স্কুল ভিত্তিক প্রতিযোগিতায় স্কুল থেকে যোগ দিয়ে সফল হন। তখন তিনি দশম শ্রেণির পড়ুয়া। স্কুল টিম রানার্স হয়েছিল। ওই বছরের মে মাসে বেঙ্গল টিমে বাছাই হয়ে ইস্ট জ়োন টুর্নামেন্টে যোগ দেন। বেঙ্গল টিম রানার্স হয়। চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ওড়িশা টিম। ভাল পারফরম্যান্সের জন্য ২০১৫ সালে হায়দরাবাদে জাতীয়স্তরে বাংলা দলের হয়ে খেলেছেন। সেবার অবশ্য লিগ পর্যায়ে খেলার সময়ে বাংলা দল ছিটকে গিয়েছিল।

২০১৬ সালে গুজরাতে এবং ২০১৭ সালে দিল্লিতে জাতীয় স্তরেও বাংলা দলের হয়ে খেলেছেন। ২০১৮ সাল থেকে নাগেশ ট্রফিতে বাংলা দলের হয়ে খেলেছেন শুভেন্দু। শুভেন্দু জানালেন, ক্রিকেটই তাঁর প্রথম ভালবাসা। তাই ক্রিকেট খেলা নিয়েই থাকতে চান। তবে ব্যাট, বল সহ কিটসের দাম অনেক। কোনও স্পনসর নেই।

বিশ্বকাপে যোগ দেওয়ার সময় ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ তাঁকে অর্থ সাহায্য করেছিল। ঝাড়গ্রামের ব্যবসায়ী ইন্দ্রনীল ঘোষ, সমাজসেবী অশোক মাহাতোর মত কয়েকজন শুভেন্দুর পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। ২০১৩ সালে প্রয়াত হন শুভেন্দুর বাবা পেশায় চাষি বুদ্ধেশ্বর চাষি মাহাতো। বাড়িতে আছেন মা দীপালিদেবী।

দাদা দিব্যেন্দু মাহাতো বাগনানে সেলম্যানের কাজ করেন। শুভেন্দুর মা দীপালি মাহাতো বলছেন, ‘‘ছেলেটা অনেক কষ্ট করে আজ এই জায়গায় এসেছে। মুখ্যমন্ত্রী ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ছেলে চাকরির আর্জি জানিয়ে চিঠি দিয়েছিল। চাকরি হওয়ায় আমরা খুশি। তবে চাকরিটা যেন স্থায়ী হয়!’’

আরও পড়ুন ::

Back to top button