মা বিড়ি বাঁধেন, বাবা দিনমজুর, সংসার এবং পড়াশোনার খরচ জোগাতে ঝালমুড়ি বিক্রি পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রীর
রবি ঠাকুরের ছুটি কবিতার একটা লাইন ছিল আছে -“মা গো আমায় ছুটি দিতে বল সকাল থেকে পড়ছি যে মেলা, এখন আমি তোমার ঘরে বসে করবো শুধু পড়াপড়া খেলা “।হ্যাঁ ছোটোবেলায় আমরা সবাই এই ভাবেই সবসময় খেলার দিকে বেশি আগ্ৰহী থাকি।আর বিকেল বেলা হলে তো কথাই নেই। বিকেল বেলা মানেই প্রত্যেক শিশুর কাছেই তার সবচেয়ে প্রিয় সময়। কিন্তু অনেক সময় সংসারের অভাব অনটন কেড়ে নেয় বহু শিশুদের শৈশবকে।
আজ আমরা কথা বলবো এমন একটি শিশুর কথা ।তার বয়সের অন্য ছেলেমেয়েরা যখন বিকেল হলেই খেলায় মাতে, তখন সংসার চালাতে আর নিজের টিউশন খরচ তুলতে ঝালমুড়ি বেচে পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী। গুসকরা পুর-এলাকার বাসিন্দা ওই বালিকার অভাবের সংসারে রয়েছেন তার বাবা-মা, দুই বোন এবং ঠাকুমা।
শিশুটির মা বলেন, ‘আমি বিড়ি বাঁধি। ওর বাবা দৈনিক মজুরিতে মেলায় খাবারের দোকানে কাজ করেন। যখন মেলা থাকে না, তখন দিনমজুরি করেন। সবসময় আমাদের কাজ থাকে না। যেটুকু উপার্জন হয়, তাতে পাঁচজনের সংসারে অভাব মেটে না। এর সঙ্গে রয়েছে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ।” সঙ্গে যোগ করেন, ”মেয়ে নিজেই ঝালমুড়ি বিক্রি করবে জানিয়েছিল। সংসারের কথা ভেবে সায় দিতে হয়েছে আমাদের।” তাঁর আক্ষেপ,’তিন বার আবেদন করেও লক্ষ্মীর ভান্ডারের টাকা মেলেনি।”
ঝালমুড়ি বিক্রির পরামর্শ তাকে দিয়েছিল পরিচিত এক দাদা, জানাচ্ছে ওই নাবালিকা। তার কথায়, ”টিফিনের জমানো টাকা দিয়ে মুড়ি, ছোলা-বাদাম ভাজা এবং অন্য উপকরণ কিনি। স্কুল থেকে এসে সন্ধ্যা পর্যন্ত রাস্তারমোড়ে চট বিছিয়ে বিক্রি করি। হাতে আসে ১৫০-২০০ টাকা।”
নাবালিকার দিদিমা বলেন, ‘সকালে উঠে নাতনি নিজেই দোকানের জিনিসপত্র কিনে আনে। তার পরে স্কুল যায়। স্কুল থেকে ফিরে দোকানে বসে। যখন ওর সমবয়সিরা মাঠে খেলা করে, তখন আমার নাতনি ঝালমুড়িবিক্রি করে। তাতে যেটুকু টাকা আসে, তা মায়ের হাতে তুলে দেয়। এ ভাবেই নিজের টিউশন ফি, পোশাক, খাতা-কলমের খরচ তোলে নাতনি। প্রয়োজনে ওকে সাহায্য করি।” তাঁদের প্রতিবেশীদের মধ্যে কয়েক জন বলেন, ”অভাবের সংসারে কাজ না করলে উপায় নেই। মেয়েটি পড়াশোনায় ফাঁকি দেয় না।” নাবালিকার স্কুলের এক শিক্ষক বলেন, ”ও নিয়মিত স্কুলে আসছে কিনা সে দিকে লক্ষ্য রাখব। ওর কোনও অসুবিধা যাতে না হয়, তা দেখব।”
গুসকরার পুরপ্রধান কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, ”জীবনে দাঁড়াতে গেলে কিছু করতে হবে, এই ভাবনা থেকে একরত্তি মেয়েটি লড়াই শুরু করেছে। পুরসভা ওর পাশে আছে।” নাবালিকার মাকে লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত করার আশ্বাসও দেন পুরপ্রধান।