রাজ্য

ক্রমশ কমে আসছে বাংলা ক্যালেন্ডারের চাহিদা; পয়লা বৈশাখের আগে চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

ক্রমশ কমে আসছে বাংলা ক্যালেন্ডারের চাহিদা; পয়লা বৈশাখের আগে চিন্তায় ব্যবসায়ীরা

বাঙালির জীবনে পহেলা বৈশাখ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তা আমরা সকলেই জানি। এই দিনটিতে নতুন করে ঘর সাজানো থেকে শুরু করে নিজেদেরকে সাজানো থেকে শুরু করে বিভিন্ন রকমের পদ রান্না করা হয় যা প্রতিটি ঘরে কম বেশি হয়। আর এই দিন থেকে বাংলার নতুন খাতা, নতুন বছরের সূচনা হয়ে থাকে।ছোটবেলা থেকেই পহেলা বৈশাখের দিনটি শৈশবকে অনেক বেশি আনন্দ মুখর করে তুলতো। তার পাশাপাশি বড়দেরও খুশির আমেজ কম থাকতো না। এই পয়লা বৈশাখ নতুন বছরের শুরু তার সাথে সাথে বাঙালিরবড় উৎসব বলা যেতে পারে ।

কবিগুরুর ভাষায়, বৎসরের আবর্জনা দূর করে নতুনকে আবাহনের সময়। ১৪২৯ সালকে বিদায় জানিয়ে ১৪৩০-কে স্বাগত জানাবে বাঙালি। বাংলা নববর্ষের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে বেশ কিছু রীতিনীতিও। বাংলা নববর্ষের দিন আজ‌ও বেশিরভাগ বাঙালি দোকানে হালখাতা হয়। আর এই হালখাতার সঙ্গে মিষ্টির পাশাপাশি জড়িয়ে আছে বাংলা ক্যালেন্ডারের ঐতিহ্য। এই দিন দোকানে এলে গ্রাহকের হাতে মিষ্টির প্যাকেটের পাশাপাশি তুলে দেওয়া হয় নতুন বছরের বাংলা ক্যালেন্ডার। কিন্তু সময়ের নিয়মে অনেক কিছুই বদলে যেতে বসেছে।

আজও হালখাতা হলেও মিষ্টির বাক্সে মিষ্টির থেকে বেশি জায়গা দখল করে থাকছে মুচমুচে স্ন্যাক্স, ভাজাভুজি, নানান ধরনের কেক-পেস্ট্রি। তেমনই প্রয়োজন কমায় বাংলা ক্যালেন্ডারের আকর্ষণ‌ও কমেছে গ্রাহকদের মধ্যে। আর তাই দোকানগুলি থেকেও ধীরে ধীরে উঠে যেতে শুরু করেছে বাংলা ক্যালেন্ডার। ফলে আজকাল হালখাতায় মিষ্টির বাক্স বা ফুট প্যাকেট দেওয়া হলেও অনেক দোকানই আর বাংলা ক্যালেন্ডার দেন না। যার অবধারিত প্রভাবে বিপুলভাবে কমে গিয়েছে বাংলা ক্যালেন্ডারের চাহিদা।

তবে করোনার পরবর্তী পর্যায়ে গোটা ছবিটা যেন অনেক দ্রুত বদলে যায়। আর্থিক সঙ্কটে পড়ে বহু বাঙালি ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হোন। অনেকে টিমটিম করে দোকান চালিয়ে নিয়ে গেলেও আর্থিক সঙ্কটের কারণে হালখাতার বিপুল খরচ কমিয়ে ফেলেছেন। এইসবেরই প্রভাব পড়েছে বাংলা ক্যালেন্ডারের চাহিদার উপর। এমনিতেই আমাদের সমস্ত কাজকর্ম ইংরেজি ক্যালেন্ডারের দিন ধরে হয়। ধর্মীয় আচার-আচরণ, তিথি নক্ষত্র দেখার কাজেই মূলত ব্যবহৃত হয়ে থাকে বাংলা ক্যালেন্ডার। সব মিলিয়ে বাংলা ক্যালেন্ডার চাদিহা বিপুলভাবে কমে যাওয়ায় এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্তদের অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়ে গিয়েছে।।

এই প্রসঙ্গে এক ক্যালেন্ডার ব্যবসায়ী বলেন, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি বাংলা ক্যালেন্ডার ছাপাতে দেয় সোনার দোকানিরা। কিন্তু বর্তমানে তাতেও ভাঁটা পড়েছে। আর কতদিন ক্যালেন্ডার ছাপার ব্যবসা চালানো যাবে তা নিয়েই সংশয়ে এই ব্যবসায়ী। সময়ের বিবর্তনের ধারায় বাঙালির নানান ঐতিহ্য ক্রমেই বিলীন হচ্ছে। পুরনো বহু কিছুর জায়গা নিয়েছে আধুনিক জিনিসপত্র। সেই তালিকায় নব্য সংযোজন হিসেবে বাংলা ক্যালেন্ডার হয়ত জায়গা করে নিতে চলেছে। একসময় তা কেবলই নস্টালজিয়া হিসেবে থেকে যাবে!

আরও পড়ুন ::

Back to top button