জানা-অজানা

যে ৬টি কারণে নারী বিজ্ঞানীর সংখ্যা কম!

যে ৬টি কারণে নারী বিজ্ঞানীর সংখ্যা কম! - West Bengal News 24

সাম্প্রতিক সময়ে নারীরা অনেক শিক্ষিত এবং আধুনিক হয়ে উঠেছেন। পড়াশোনা, চাকরি, ব্যবসা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সক্রিয় হয়ে উঠলেও একটি ক্ষেত্রে বেশ কম দেখা যায় নারীদের পদচারণা আর তা হলো বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্র। বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনার ক্ষেত্রে তারা অনেক উৎসাহী হলেও বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে তাদের উৎসাহে যেন ভাঁটা পড়ে যায়। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশলবিদ্যা এবং গণিত- এসব বিষয়ে এ ব্যাপারটা বেশি দেখা যায়। ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য দিলেও দেখা যায়, যুগে যুগে পুরুষ বিজ্ঞানীর তুলনায় নারী বিজ্ঞানীর সংখ্যা নিতান্তই কম। কি কারণে নারীদের মাঝে দেখা যায় গবেষণার ব্যাপারে অনাগ্রহ?

১) শিক্ষা ক্ষেত্রে বিরূপ আচরণঃ
স্কুল এবং কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে মেয়েরা ছেলেদের সাথে সমানে সমানে পড়াশোনা করলেও এর পরেই তাদের মাঝে পিছিয়ে যাবার প্রবণতা দেখা যায়। পরিবার থেকে, স্কুল পর্যায়ে সহপাঠী এবং শিক্ষকদের কাছে থেকেও নারীরা বিরূপ আচরণের শিকার হন। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হওয়া মেয়েদের উদ্দেশ্য করে ছেলেরা কটু মন্তব্য করেই থাকে এবং তা নিরসনে শিক্ষকেরাও কোনও ব্যবস্থা নেন না।

আরও পড়ুন : মেজ সন্তানরা ব্যক্তিগত এবং কর্ম জীবনে বেশি সফলতা লাভ করেন

২) উৎসাহের অভাবঃ
উৎসাহ দেবার পরিবর্তে অনেক শিক্ষকই মেয়েদেরকে বিজ্ঞান পড়াতে অবহেলা করেন। আর উৎসাহ না পাবার কারণে মেয়েরাও পরে আর বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক হয় না। শুধু পড়াশোনা নয়, চাকরি ক্ষেত্রেও এমনটাই দেখা যায়। বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার আডা বায়রনের বাবা ছিলেন বিশ্বখ্যাত কবি লর্ড বায়রন। মেয়ে যাতে বাবার মতো কবিতা লেখা শুরু না করে এ জন্য লর্ড বায়রনের স্ত্রী আডাকে গণিতে পড়াশোনা করতে উৎসাহ দেন। ফলে আডা এমন এক সময়ে কম্পিউটার প্রোগ্রাম তৈরি করেন যে সময়ে কম্পিউটার আবিষ্কারই হয়নি। এমন ধরণের উৎসাহ দেওয়া হলেই মেয়েদের মাঝে বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়বে।

৩) গৎবাঁধা চিন্তাধারাঃ
আমরা ধরেই নেই মেয়েরা বিজ্ঞানে পড়াশোনায় ভালো করবে না। বাংলাদেশে দেখা যায়, বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসি পাশের পর বেশিরভাগ মেয়ে ডাক্তারি পেশার স্বপ্ন দেখে। সে তুলনায় ইঞ্জিনিয়ার হবার স্বপ্ন দেখেন কয় জন? মেয়েদের পেশা কি হতে পারে এ সম্পর্কে আমাদের মনে গৎবাঁধা ধারণা রয়ে গেছে এখনও। বৈজ্ঞানিক গবেষণা করতে গেলে যে পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয়, অনেক পরিবারই চায় না তাদের মেয়ে সে পরিশ্রম করুক বা বাসার বাইরে এত সময় দিক। এসব বস্তাপচা ধারণা মেয়েদের বিজ্ঞানী হবার অন্তরায়।

আরও পড়ুন : মহিলারা কেন আবেদনময় সেলফি তোলেন? জানাল গবেষণা

৪) সন্তানধারণঃ
নারীর জীবনের একটা খুব স্বাভাবিক পর্যায় হলো সন্তানধারণ। বিজ্ঞানী হোক আর গৃহিণী হোক, সবার ক্ষেত্রে একই কথা প্রযোজ্য। আমাদের দেশে বেশ দুঃখজনক একটা ব্যাপার দেখা যায় আর তা হল, সন্তানের যত্নের ভার শুধুমাত্র মাকেই বহন করতে হয়। বাবা-মা দুজনেই যদি চাকুরীজীবী হন তাহলে দেখা যায় বাবা সন্তানের যত্নে কোনও সময় দিচ্ছেন না এবং মাকে বাধ্য হয়ে কাজে ইস্তফা দিতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে মায়ের সাথে সাথে বাবা এবং পরিবারের অন্যরা সাহায্য করলেও সেটা কমই দেখা যায়। গবেষক পেশার মাঝপথে অনেক নারীকেই এই জন্য কাজ ছেড়ে দিতে হয়।

৫) প্রতিযোগিতাঃ
বিজ্ঞানভিত্তিক পেশায় রয়েছে যথেষ্ট প্রতিযোগিতা। আর নারীরা স্বভাবগতভাবেই কম প্রতিযোগী মানসিকতার হয়ে থাকেন। এ কারণে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতার মুখে অনেকেই হাল ছেড়ে দেন। আবার সাফল্যের মুখ না দেখলেও তারা অনেক সময়ে হতাশ হয়ে বিজ্ঞানে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন।

৬) বৈষম্যঃ
শিক্ষাক্ষেত্রে ঝামেলা পার হয়ে যদিও বা গবেষক পদে নিয়োগ পাওয়া যায়, তার পরে কর্মক্ষেত্রেও বৈষম্যের মাঝে পড়তে হয় নারীদের। পুরুষ গবেষকদের তুলনায় কম বেতন, কম সুযোগসুবিধা, বিরূপ আচরণ, কাজের স্বীকৃতি না পাওয়া ইত্যাদি কারণে নারীরা কর্মক্ষেত্রেও বেশিদিন টিকতে পারেন না এবং ভালো ফলাফল দেখানরও সুযোগ পান না।

তবে আশার কথা হলো, একটু একটু করে হলেও এসব সমস্যা কমে আসছে এবং সক্রিয়ভাবে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রে নারীদের প্রবেশের পরিমাণ বাড়ছে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button

দয়া করে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিন

দেখে মনে হচ্ছে আপনি কোনও বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমরা বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করি ওয়েবসাইটের ফান্ডের জন্য