তাঁত শিল্পীদের করুণ দশা শান্তিপুরে, অভিযোগ সরকারি উদাসীনতার
নেই সঠিক মজুরি, নেই কোন সরকারি পদক্ষেপও। শান্তিপুরের ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প এখন ধ্বংসের পথে। এভাবে চলতে থাকলে কোন তাঁতি আর খুঁজে পাওয়া যাবে না আক্ষেপ তাঁত শিল্পীদের।
নদিয়ার শান্তিপুর এলাকার লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের ভরসা ছিল তাঁত শিল্প। মূলত তাঁতের ওপর ভরসা করে চলতো সংসার। দিন দিন পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার ফলে আজ হাতে গোনা কয়েকজন তাঁত বুনছেন। তাও কদিন আর তাঁত বুনে সংসার চালাবেন সেটাও বুঝে উঠতে পারছেন না। নতুন করে কেউ আর এই শিল্পের দিকে আগ্রহ করে এগিয়ে আসছেন না। তাঁত শিল্পীরা মূলত সরকারের উদাসীনতাকেই দায়ী করছেন। বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার যা তাঁত শিল্পের ধ্বংসের কারণ হিসাবেই দেখাচ্ছেন তারা।
শান্তিপুরের তাঁত শিল্পী অশোক প্রামানিক। প্রায় ৩৫ বছর ধরে তাঁত বুনছেন তিনি। তিনি বলেন, আগের মত তাঁত শিল্পে আর সেভাবে মজুরি নেই। একশ্রেণীর মহাজনরা তাদের মুনাফা বাড়ানোর জন্য তাঁতিদের মজুরী কমিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে তিনি বলেন, বাইরের রাজ্য থেকে যে সমস্ত কাপড় এরা আনছে সেই কাপড়ের কারণেই হস্ত চালিত তাঁত কাপড়ের চাহিদা অনেকটাই কমেছে।
তাঁত শিল্প বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারি উদাসীনতা এবং একাধিক যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তাকেই দায়ী করছেন শিল্পীরা। শিল্পীদের দাবি, এখন তাঁত বুনে দিনে ৫০ টাকা আয় হয়। সেই কারণেই সংসার চালাতে কার্যত নাজেহাল হচ্ছেন তাঁত শিল্পীরা। অন্যদিকে তিনি স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে বলেন, আমরা কখনো তাঁত শিল্পীদের ভাতা পায়না। যারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত তাদেরই বেছে বেছে এই সুবিধা গুলো দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে আরেক বর্ষিয়ান তাঁত শিল্পী শ্যামল বসাক বলেন, মূলত মহাজনদের অতিরিক্ত মুনাফা লাভের কারণে দিন দিন তাঁত শিল্প ধ্বংসের পথে চলেছে। অন্যদিকে সরকারি কোনও পদক্ষেপ নেই। দিনে ৫০ টাকা রোজগার করে কিভাবে সংসার চলে সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি।
তবে এ বিষয়ে শান্তিপুরের বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এর আগেও একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে তাঁত শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য। মূলত তাঁতিরা যাতে এই শিল্পের উপর নির্ভর করে সংসার চালাতে পারে সেই দিকটা নজর রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, প্রতিটি রাজনৈতিক দলের এজেন্ডা ছিল মূলত তার শিল্প বাঁচানো নিয়ে। যেহেতু কেন্দ্র সরকার এই তাঁত শিল্পের ক্ষেত্রে ভূমিকা নিয়ে থাকে। কিন্তু অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে আমরা নতুনভাবে কোনও ভাল পদক্ষেপ কেন্দ্র সরকারের তরফ থেকে পাইনি।