বর্ধমান

অভিষেকের বর্ধমান সফরের মাঝেই কলেজ প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ এনে মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন টিএমসিপি কর্মী

অভিষেকের বর্ধমান সফরের মাঝেই কলেজ প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ এনে মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন টিএমসিপি কর্মী

তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীর সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যেপাধ্যায় শুক্রবার পূর্ব বর্ধমান জেলায় এলেন। তারঠিক পরেই জেলার মেমারি কলেজের প্রিন্সিপাল দেবাশিষ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ এনে ফেসবুকে পোস্ট করলেন কলেজেরই ড্রপ আউট হওয়া ছাত্র কুনাল ভট্টাচার্য।

ওই ফেসবুক পোস্ট তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছাড়াও তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে ট্যাগ করেছেন। যা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে মেমারির রাজনৈতিক মহলে। ফেসবুক পোস্টে কুনাল ভট্টাচার্য লিখেছেন,’মেমারি কলেজের প্রিন্সিপাল মাসিক ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা বেতন পান। তবুও তিনি কলেজ না এসে পার্সোনাল ভাবে অ্যাড সহকারে বাড়িতে টিউশানি পড়ান। ছাত্র পিছু ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা মাইনে নিয়ে থাকেন। যেখানে কোর্ট থেকে পুরোপুরি ভাবে বলা আছে একজন স্কুল টিচার বা শিক্ষক প্রাইভেট টিউশনি পড়াতে পারবেন না, সেখানে একজন কলেজ প্রিন্সিপাল কিভাবে এইরকম ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন?এরাই আবার ডি এ-র (DA)জন্য আন্দোলনে বসে ।’

নিজের লেখা বক্তব্যের সাথে একটা ভিডিও ফেসবুক পোস্টে যুক্ত করে কুনাল সেটিকে প্রিন্সিপালের প্রাইভেট পড়া ভিডিও বলে দাবি করেছেন । এমনকি কুনার তাঁর গোটা ফেসবুকে পোস্টটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু কে দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অনুরোধও করছেন। এই ফেসবুক পোস্ট দেখার পর কুনাল ভট্টাচার্যর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান,তাঁর বাড়ি মেমারি থানার আমাদপুর গ্রামে। মেমারি কলেজের প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ এনে ফেসবুকে তিনিই পোস্ট করেছেন বলে কুনাল ভট্টাচার্য স্বীকার করে নেন।

‘নব জোয়ার’ কর্মসূচীকে সামনে রেখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পূর্ব বর্ধমান জেলার আসার প্রাক্কালেই এমন পোস্ট কেন? এর উত্তরে কুনাল দাবি করেন,মেমারি কলেজের প্রিন্সিপালের কীর্তি আমার দলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কাছে তুলে ধরায় এটাই যথার্থ সময় । তাই বৃহস্পতিবার সেটাই করেছি।

মেমারি কলেজের প্রিন্সিপাল দেবাশিষ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিয়ে কুনাল ভট্টাচার্য এদিন দাবি করেন,”তৃণমূল কংগ্রেসের কাউকেই প্রিন্সিপাল সহ্য করতে পারেন না। কলেজের কোন ছাত্র তৃণমূল ছাত্র পরিষদ টিএমসিপি)করলে তাকেও প্রিন্সিপাল বিষনজরে দেখেন। কুনালের দাবি,মেমারি কলেজে বি-এ পাস কোর্সে তিনি পড়তেন।কলেজে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ করতেন বলে তিনিও প্রিন্সিপাল দেবাশিষ চক্রবর্তীর বিষনজরে পড়েন ।.আর তার কারণেই তাঁকে ২০২০ সালে ড্রপ আউট হতে হয় । কুনালের আরো অভিযোগ,প্রিন্সিপাল বেশিরভাগ দিন কলেজে আসেন না।যেদিন প্রিন্সিপাল কলেজে আসেন সেদিন তৃণমূল সমর্থক কোন ছাত্রী কন্যাশ্রী বা রুপশ্রী প্রকল্পের সুবিধা পাবার জন্য ওনার কাছে কোন নথিতে সই করাতে গেলে তাদের হতাশ হয়েই ফিরতে হয়। হাতে ব্যাথা রয়েছে,এই অজুহাত খাড়া করে প্রিন্সিপাল সই করেন না । পাশাপাশি যে কোন বিষয়েই প্রিন্সিপাল তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সমর্থক ছাত্র ছাত্রীদের সঙ্গে অসহযোগীতা ও দুর্ব্যবহার করেন বলে কুনাল ভট্টাচার্যের অভিযোগ ।

যদিও এই সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেমারি কলেজের প্রিন্সিপাল দেবাশিষ চক্রবর্তী। পাল্টা অভিযোগ এনে দেবাশিষ বাবু বলেন,’এই কুনাল ভট্টাচার্য আসলে কলেজের প্রাক্তন টিএমসিপি নেতা তথা বর্তমান কলেজ কর্মী মুকেশ শর্মার সাগরেদ। চক্রান্ত করে তাই কুনাল ভট্টাচার্য্য আমার সন্মন্ধে নানা মিথ্যা কথা লিখে ফেসবুকে পোস্ট করছেন ।’ প্রিন্সিপাল এও বলেন,’আমি যখন রামপুরহাট কলেজে ছিলাম তখন প্রাইভেট পড়াতাম। মেমারি কলেজে প্রিন্সিপাল পদে দায়িত্ব নেবার পর থেকে আমি প্রাইভেট পড়াই না ।

আমি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে কলেজে আসি । বিকাল পাঁচটার পর কলেজ থেকে বের হই । আসলে সরকারী গাইড লাইন মেনে যথাযথ ভাবে কলেজ চালাচ্ছি, কোন অনৈতিক কাজ করতে দিচ্ছি না ,তাই অনেকের গাত্রদাহ হচ্ছে। তারই ফলশ্রুতি স্বরুপ ফেসবুকে আমাকে নিয়ে মিথ্যা কথা লেখা হয়েছে।এতে কিছু যায় আসে না ।’আদালত মাধ্যমেই এর জবাব দেবেন বলে প্রিন্সিপাল দেবাশিষ চক্রবর্তী মন্তব্য করেছেন।

মেমারি-১ ব্লক তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি রাহুলদেব ঘোষাল এই প্রসঙ্গে বলেন,’মেমারি কলেজের প্রিন্সিপাল বাড়িতে প্রাইভেট পড়ান কিনা সেটা আমায় জানা নেই।তবে এই সংক্রান্ত বিষয়ে ফেসবুকে যা লিখে পোস্ট করা হয়েছে তার তদন্ত কলেজের গভর্নিং বডি বা অন্য উচ্চ কর্তৃপক্ষ করবেন । যদি অভিযোগের সত্যতা মেলে তবে তারাই তাদের মত ব্যবস্থা নেবেন ।

মেমারির বিধায়ক মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন,’কুনাল ভট্টাচার্য ফেসবুকে তাঁর অভিযোগের কথা লিখে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী,সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিক্ষামন্ত্রীকে ট্যাগ করে তাঁদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন বলে জেনেছি। তাই প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্তাদের টপকে এই বিষয়ে এখন আমার কোন মন্তব্য করা সঠিক হবে না ।’

অন্যদিকে মেমারি-১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নিত্যানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,’মেমারি কলেজের প্রিন্সিপাল দেবাশিষ চক্রবর্তী কলেজের কথা,ছাত্র ছাত্রীদের কথা কিছুই ভাবেন না । উনি কলেজে স্বৈরাচারিতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর বিহিত হওয়া দরকার ।’

আরও পড়ুন ::

Back to top button