Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
বিচিত্রতা

পুরুষের দোষে সংসার ভাঙছে পাখিদের

পুরুষের দোষে সংসার ভাঙছে পাখিদের

সঙ্গীর প্রতি বিশ্বস্ততার উদাহরণ দিতে আমরা প্রায়ই পাখির উদাহরণ টানি। অনেকেই ধারণা করেন, পাখিরা একটি মাত্র সঙ্গী নিয়েই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত কাটিয়ে দেয়। তবে এই সমাজেও গোলমাল খুঁজে পেয়েছেন গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, পরকীয়া কিংবা দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার কারণে মনুষ্য দম্পতিদের মধ্যে যে ধরনের বিচ্ছেদ দেখা যায়, একই কারণে পাখিদের মধ্যেও বিচ্ছেদ ঘটছে অহরহ।

এ সম্পর্কিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কিছু একগামী পাখি তাদের আসল সঙ্গী জীবিত থাকার পরও পরবর্তী প্রজনন মৌসুমের জন্য অন্য সঙ্গীর কাছে চলে যায়। এ ধরনের ঘটনাকে বিচ্ছেদের সঙ্গে তুলনা করেছেন গবেষকেরা।

বেশ কয়েকটি জরিপে এই ধরনের বিচ্ছেদের সম্ভাব্য কারণগুলোও খুঁজে বের করেছেন গবেষকেরা। পাখির প্রজাতিভেদে বিচ্ছেদের নানা কারণ থাকলেও তাঁরা দুটি মূল কারণ চিহ্নিত করেছেন। এর মধ্যে প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে, পুরুষ পাখিটির বহুগামিতার কথা। অন্য কারণটি হল—অভিবাসনের ফলে পুরুষ ও স্ত্রী পাখিটির দূর-দুরান্তে অবস্থান কিংবা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা।

চীন ও জার্মানির বিজ্ঞানীদের সম্মিলিত এই গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রসিডিংস অফ দ্য রয়্যাল সোসাইটি-বি’ জার্নালে। এতে গবেষকেরা ২৩২ প্রজাতির পাখির মধ্যে বিচ্ছেদ, মৃত্যু আর অভিবাসন দূরত্ব সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেছেন। গবেষক দলটি পাখিদের আচরণ বিশ্লেষণ করে প্রতিটি প্রজাতির পুরুষ ও স্ত্রী পাখিটির মধ্যে কে কতটুকু বহুগামী তা নিয়ে স্কোরিংও করেছিলেন।

এ ক্ষেত্রে তাঁরা দেখেছেন—প্লোভার, সোয়ালো, মার্টিন, ওরিওল এবং ব্ল্যাকবার্ড পাখিদের মধ্যে বিচ্ছেদের হার বেশি এবং এই প্রজাতিগুলোর মধ্যে পুরুষ পাখিটির মধ্যে বহুগামিতাও বেশি। অন্যদিকে পেট্রেল, অ্যালবাট্রস, গিজ এবং রাজহাঁসের মধ্যে বিচ্ছেদের হার কম। এই প্রজাতিগুলোর পুরুষ পাখিটিও সঙ্গীর প্রতি অনেক বিশ্বস্ত আচরণ করে।

তবে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, পুরুষের বহুগামিতার জন্য বিচ্ছেদের হার বেশি দেখা গেলেও, স্ত্রী পাখিটির বহুগামিতা বেশির ভাগ সময় বিচ্ছেদ ডেকে আনে না। এর কারণ ব্যাখ্যা করেছেন জার্মানির ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউটের গবেষক ড. জিটান সং। তিনি দাবি করেন, যখন একটি পুরুষ পাখি বহুগামী হয়, তখন তার মনোযোগ বেশ কয়েকটি স্ত্রী পাখির মধ্যে ভাগ হয়ে যায়। এতে ওই পুরুষ পাখিটি তার সঙ্গী স্ত্রী পাখিটির কাছে আবেদন হারায় এবং পরবর্তী প্রজনন মৌসুম আসার আগেই পুরুষ পাখিটিকে তালাক দিয়ে দেয় স্ত্রী পাখিটি।

তবে স্ত্রী পাখিটি বহুগামী হলেও বেশির ভাগ সময় তা বিচ্ছেদের কারণ না হওয়ার জন্য সন্তানের পিতৃত্ব সম্পর্কে অনিশ্চয়তাকে দায়ী করেছেন জিটান সং। আর এ ধরনের অনিশ্চয়তার ফলে পিতা-মাতার যত্নের ক্ষেত্রে একাধিক পুরুষ সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ পায়।

দলটি আরও খুঁজে পেয়েছে, কোনো প্রজাতির অভিবাসন দূরত্ব বেশি হলে তাদের বিচ্ছেদের হারও বেশি। কারণ বহুদূরের গন্তব্যে প্রায় সময়ই একসঙ্গে পৌঁছাতে পারে না পাখি দম্পতিরা। এ ক্ষেত্রে যে পাখিটি আগে পৌঁছায় সেই পাখিটি প্রায় সময়ই অন্য সঙ্গীর দিকে ঝুঁকে পড়ে। আবার অভিবাসনের ক্ষেত্রে দুর্ঘটনাও বেশি দেখা যায়। ফলে একটি পাখি প্রায়ই তার সঙ্গীকে হারায় এবং নতুন সঙ্গী বেছে নেয়।

জিটান সং জানান, গন্তব্যে পৌঁছে পূর্বের সঙ্গীর জন্য অপেক্ষা করার চেয়ে অন্য কোনো সঙ্গীর সঙ্গে জোড় বেঁধে তাড়াতাড়ি প্রজননের দিকেই মনোযোগী হয় অভিবাসী পাখিরা।

আরও পড়ুন ::

Back to top button