আন্তর্জাতিক

চীনের ঋণ-ফাঁদে মালদ্বীপ, কী করবেন প্রেসিডেন্ট মুইজু ?

চীনের ঋণ-ফাঁদে মালদ্বীপ, কী করবেন প্রেসিডেন্ট মুইজু ?

শুধু ‘ইন্ডিয়া আউট’ আন্দোলনের ওপর ভর করে ২০২৩ সালে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হন মোহাম্মদ মুইজু। যদিও পিপলস ন্যাশনাল কংগ্রেসের (পিএনসি) এই প্রার্থী তার আগের প্রতিপক্ষের চেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন। ভারত বিরোধী অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গে দেশে কর্মসংস্থানের হার কমে যাওয়া এবং টালমাটাল অর্থনৈতিক অবস্থায় মনে হচ্ছে একের পর এক সংকট মোকাবিলায় হাত গুটিয়ে নিয়েছে দেশটির রাজনৈতিক সরকার।

দ্য হংকং পোস্ট সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ইতোমধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে মালদ্বীপ অর্থনৈতিক মন্দার কারণে নতুন কোনো উন্নয়ন প্রকল্প শুরু করবে না। এর মধ্যে দেশটির সংসদে অধিবেশন চলাকালে সদস্যদের মধ্যে সহিংসতার যে চিত্র উঠে এসেছে তা মালদ্বীপের বৈশ্বিক ভাবমূর্তি আরও ক্ষুণ্ন করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, চীনের দিকে ঝুঁকে পড়া দেশটির অর্থনৈতিক সংকটের জন্য প্রেসিডেন্ট মুইজুর দল এখনও প্রস্তুত নয়।

সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে দক্ষিণ এশিয়ায় নিযুক্ত এক মার্কিন কূটনীতিক জানান, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ের বিনিয়োগ আসন্ন অর্থনৈতিক মন্দা থেকে মালদ্বীপকে টেনে তুলতে পারে। ওয়াশিংটনের এমন চাওয়ার বড় কারণ বিপুল চীনা ঋণ এবং অন্যান্য অর্থায়নের ফলে মালদ্বীপ যাতে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের মতো একই পরিস্থিতির মুখোমুখি না হয়। তবে বিস্ময়কর ঘটনা হলো মালদ্বীপের বর্তমান সরকারের কাছ থেকে এ বিষয়ে কোনো স্বীকৃতি মেলেনি। তারা বেইজিংয়ের পক্ষ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বর্তমান ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ওপর চীনের প্রভাব উন্মোচিত করে।

চীনের ঋণ-ফাঁদে মালদ্বীপ, কী করবেন প্রেসিডেন্ট মুইজু ?

২০২০ সালে আইএমএফের কাছ থেকে ১৯৬ মিলিয়ন ডলার ঋণ, ২৯ মিলিয়ন ডলার অনুদান এবং ৫৬ মিলিয়ন ডলার সহায়তা পেয়েছে মালদ্বীপ। ২০২৩ সালে দেশটিকে সতর্ক করে আইএমএফ; যেহেতু সংস্থাটি চীনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার কারণে দেশটিকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করেছিল। তবে এই সতর্কতা দেশটিকে বেইজিংয়ের কাছ থেকে আরও অর্থ নেওয়া থেকে বিরত রাখতে পারেনি। চলতি বছরের শুরুতে প্রেসিডেন্ট মুইজুর চীন সফরের সময় এ বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছিল।

দ্য হংকং পোস্ট জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট মুইজুর চীন সফরে প্রায় ২০টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এসব চুক্তির মধ্যে রয়েছে বিআরআই ও অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প। তবে চীন থেকে আরও বেশি পর্যটক মালদ্বীপে আনার প্রচেষ্টার মাধ্যমে দেশটি ঋণ-ফাঁদে পড়ছে, যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলো মুখোমুখি হয়েছে।

মালদ্বীপের অর্থনীতি বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ ঋণের কারণে ব্যাপকভাবে বিপর্যস্ত। বেইজিংয়ের ঋণের পরিমাণ ১.৩ বিলিয়ন ডলার, যা বর্তমানে দেশটির মোট বৈদেশিক ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ। এছাড়া চীনা ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড কমার্শিয়াল ব্যাংক অব চীন এবং এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চীন দেশটির সার্বভৌম ঋণের ৬০ শতাংশেরও বেশি মালিকানাধীন। অবশ্য এই প্রবণতা প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের শাসনামলেও ছিল।

সে সময় তার সরকার উন্নয়নমূলক প্রকল্পের জন্য চীন থেকে প্রচুর ঋণ নিয়েছিল যা শেষ পর্যন্ত দেশটিকে অর্থনৈতিক মন্দার দিকে নিয়ে যায়। বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে এটা স্পষ্ট, বেইজিংয়ের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত মালদ্বীপের নাগরিকদের স্বার্থের ক্ষতি করবে।

বিশ্বব্যাংকের গবেষণায় দেখা গেছে, মালদ্বীপের মোট ঋণ তার জিডিপির ১১৫% এরও বেশি ছিল। এটি দেশটিকে বিনিয়োগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বানিয়েছে। মালদ্বীপের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে অবশ্যই পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে হবে কীভাবে চীনের ক্ষতিকারক সহায়তা এবং ঋণ এড়ানো যায়। মালদ্বীপ অবশ্য শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি এড়াতে পারবে যদি তারা তার অগ্রাধিকারগুলো সঠিক পথে পরিচালিত করে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button