বিচিত্রতা

পরিত্যক্ত আমের বিচিতে বছরে আয় ৫ লক্ষাধিক টাকা

পরিত্যক্ত আমের বিচিতে বছরে আয় ৫ লক্ষাধিক টাকা

সুস্বাদু মৌসুমি ফল আম। ছোট বড় সবাই আম খেতে পছন্দ করেন। কিন্তু খাওয়ার পর আমের বিচির শেষ ঠিকানা হয় আবর্জনার ভাগাড়ে। আর এই ময়লা-আবর্জনার ভাগাড় থেকে পরিত্যক্ত আমের বিচি কুড়িয়ে আয়ের উৎস বানিয়েছেন গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার রোস্তম আলী। তিনি এসব আমের বিচি থেকে চারা উৎপাদন করে বিক্রি করেন বিভিন্ন স্থানে। এতে তার বছরে আয় ৫ লক্ষাধিক টাকা। সবুজ প্রকৃতি গড়তে সহায়তাকারী রোস্তম আলীর এই টাকায় চলে ৫ সদস্যের পরিবার।

সাদুল্যাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের তরফবাজিত গ্রামের মরহুম খাজা মিয়ার ছেলে রোস্তম আলী (৪৮)। অভাবী পরিবারের সন্তান হওয়ায় তিনি এক সময় অন্যের বাড়িতে দিনমজুরি করতেন। তবে বর্তমানে তাকে আর অন্যের বাড়িতে কাজে যেতে হয় না। এখন তিনি নিজেই দিনমজুর খাটান। গাছের চারা উৎপাদন এবং বিক্রির জন্য ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী হিসেবে তার সুনাম ছড়িয়েছে গোটা এলাকা জুড়েই। তাই বর্তমানের করোনাকালেও থেমে নেই তার চারা বিক্রির ব্যবসা।

রোস্তম আলী জানান, প্রতি বছর আমের মৌসুম আসলেই তিনি বিচি সংগ্রহ শুরু করেন। মানুষের বাড়ির ময়লা-আবর্জনার ভাগার থেকে আমের পরিত্যক্ত বিচি কুড়িয়ে আনেন। নিজে এবং দিনমজুর নিয়ে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে কুড়িয়ে বেড়ান আমের বিচি। এসব পরিত্যক্ত বিচি কুড়িয়ে আনার পর নিজ বাড়িতে মজুদ গড়েন। বিচি সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলে সেগুলো চারা হিসেবে রোপণ করেন।

আরও পড়ুন : ‘মিম’ হয়ে যিনি সারা বিশ্বে বিখ্যাত

রোস্তম আলী বলেন, ভিটে-বাড়ি ছাড়া তার নিজের জমি নেই। তাই চারা রোপণের জন্য এক প্রতিবেশির কাছ থেকে এক বিঘা জমি চুক্তিতে বন্দক নিয়েছেন। এই জমিতে আমের চারা রোপণ করেন। চলতি মৌসুমে তার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৩০ হাজার আমের চারা রোপণ করা। তুলনামূলক উচু জমিতে রোপণের কয়েক দিন পর আমের চারা গজাতে শুরু করে। এসময় তিনি জমিতে ব্যবহার করেন জৈব সার। আর চারায় নতুন পাতা গজালে পোকা-মাকড় প্রতিরোধে ব্যবহার করেন হালকা কীটনাশক।

রোস্তম আলী আরো বলেন, দেড় মাস বয়স থেকে এসব আমের চারা বিক্রি শুরু হয়। যারা বড় নার্সারি করেন, তাদের কেউ-কেউ এসব আমের চারা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। এছাড়াও সাধারণ মানুষ তার কাছ থেকে এসব চারা ক্রয় করে থাকেন। প্রয়োজনে নিজেও হাট-বাজারে চারা বিক্রি করেন। প্রতি পিচ চারা ১০ টাকা থেকে শুরু করে ৪০ টাকায় পর্যন্ত বিক্রি করেন। চারা যত বড় হবে, দাম ততো বাড়বে। এভাবেই তিনি বন্দক নেওয়া জমিতে এবং বাড়ির আশে পাশে প্রতি বছর ২৮ থেকে ৩০ হাজার আমের চারা রোপণ করেন। এই চারা বিক্রি করেন ৬ থেকে ৭ লাখ টাকায়। চারা উৎপাদনে খরচ হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। এই উপার্জনের টাকায় চলে তার পাঁচ সদস্যের পরিবার। পরিবারের অন্য সদস্যরাও চারা উৎপাদনের কাজে তাকে সহায়তা করে থাকেন।

আরও পড়ুন : কাজের মহিলার সঙ্গে প্রেম, স্বামীকে ফাঁসিয়ে দিল পোষা তোতা!

জামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান মন্ডল বলেন, রোস্তম আলী অত্যন্ত পরিশ্রমী মানুষ। নিজে গুণগত মানের চারা উৎপাদনের পাশাপাশি গোটা বছর জুড়েই রিক্সা-ভ্যানে করে তিনি চারা বিক্রি করেন। শহর থেকে শুরু করে গ্রামে এবং আশপাশের সকল হাট-বাজারেই ভ্রাম্যমাণ চারা বিক্রেতা হিসেবে রোস্তম আলীর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। বাড়তি পারিশ্রমিক দিলে মানুষের বাড়িতে গিয়েও চারা লাগিয়ে (গেরে) দিয়ে আসেন রোস্তম আলী।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খাজানুর রহমান বলেন, রোস্তম আলীরা আছে বলেই চার পাশে এখনো অনেক বৃক্ষের দেখা মেলে। আমের বিচি কুড়িয়ে রোস্তম আলী প্রথমত অন্য মানুষের ময়লা-আবর্জনার ভাগার পরিষ্কার করে দিচ্ছেন। দ্বিতীয়ত এসব পরিত্যক্ত আমের বিচি থেকে চারা উৎপাদনের মাধ্যমে নিজে অর্থ উপার্জন করছেন এবং দেশের উপকার করছেন। প্রকৃতিকে সবুজ রাখতে সহায়তা করছেন। তাই চারা উৎপাদনে রোস্তম আলীর জন্য সরকারিভাবে আরো বাড়তি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

সূত্র: সমকাল

আরও পড়ুন ::

Back to top button