Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
শিক্ষা

শিক্ষক দিবস পালিত হলেও, ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে রাধাকৃষ্ণন ও তার শিক্ষানীতি

শিক্ষক দিবস পালিত হলেও, ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে রাধাকৃষ্ণন ও তার শিক্ষানীতি
ড সর্বপল্লি রাধা কৃষ্ণান

ঘটনাকাল ১৯২৮ সালের কোনও এক সময়। স্থান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। সাইমন কমিশনের প্রতিবাদে পড়ুয়ারা ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। বাধ্য হয়ে উপাচার্য পুলিশ ডাকলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের জব্দ করতে পুলিশ ডাকা হচ্ছে শুনে এক শিক্ষক স্পষ্ট জানালেন, পুলিশ ডেকে খুব ভুল কাজ হয়েছে।

সেদিনের সেই শিক্ষকের নাম সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণন। এই ঘটনার পরেই চ্যান্সেলর ছাত্রদের সরকারি অনুদান বন্ধ করার হুমকি দেন। ফের প্রতিবাদে আরও সোচ্চার হলেন সেই শিক্ষক। এইভাবে শিক্ষক জীবনের সমস্ত সময়টাই তিনি ছাত্রদের পক্ষেই কথা বলেছেন। চেয়েছিলেন ছাত্রদের প্রকৃত শিক্ষা দিতে।

শিক্ষক দিবস সেই শিক্ষক ও দার্শনিকের জন্মদিনেই নির্দিষ্ট। ওই শিক্ষক মনে করতেন, শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য হল স্বাধীন এবং সৃষ্টিশীল মানুষ গঠন। যে মানুষ যাবতীয় ঐতিহাসিক ঘটনা এবং প্রকৃতির নানা ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সঠিকভাবে সাড়া দিতে পারবেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শিক্ষার উন্নতির জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়।

উদ্যেশ্য সারা দেশে কিভাবে উচ্চ শিক্ষার বিস্তার ঘটানো যায়। সেই উদ্যেশ্যে ১৯৪৮ সালে ড: সর্বপল্লি রাধা কৃষ্ণানের তত্বাবধানে এক শিক্ষা কমিশন গঠন করা হল। কমিশনের মূল কাজ ছিল দেশের সর্বত্র উচ্চ শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেওয়া এবং তার জন্য পরিকল্পিত ব্যবস্থা করা। স্বাধীন ভারতের এটি ছিল প্রথম শিক্ষা কমিশন।

শিক্ষক দিবস পালিত হলেও, ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে রাধাকৃষ্ণন ও তার শিক্ষানীতি

রাধাকৃষ্ণন যেহেতু ওই কমিশনের প্রথম সভাপতি ছিলেন তাই তাঁর নামের অনুসারে ওই কমিশনকে রাধাকৃষ্ণন কমিশন বলা হয়। কমিশন গঠনের পর ওই কমিশন নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সুপারিশ করে, যে সুপারিশ গুলিকে কমিশনের প্রস্তাবও বলা হয়।

কমিশন জানায়, শিক্ষা হল যে কোনো জাতির মেরুদন্ড তাই শিক্ষা ব্যবস্থা সুগঠিত হলে সেই জাতিও সংগঠিত হয়ে ওঠে। যেহেতু শিক্ষা ব্যবস্থার ধারক হলেন শিক্ষক তাই কমিশনের মত শিক্ষককে হতে হবে যোগ্যতম ব্যক্তি, কারণ তাকে অনুসরণ করবে শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন : কামড়ে ধরা হাঙরকে ডাঙায় তুলে আনলেন যুবক (দেখুন ভিডিও)

সাধারণত আমাদের দেশের পাঠক্রমকে দু’ভাবে দেখা যায়। এক হল বিজ্ঞানভিত্তিক আরেকটি হল কলা বিভাগের পাঠক্রম। কিন্তু এই কমিশন প্রথম উল্লেখ করে যে এই পাঠক্রমের পাশাপাশি পেশাগত পাঠক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে। সে কারণে কৃষি, কারিগরি, প্রযুক্তি বিদ্যার উপর কমিশন জোর দেয়।

দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে কমিশনের মত ছিল, পরীক্ষা ব্যবস্থায় শুধুমাত্র রচনাধর্মী প্রশ্ন থাকলে হবে না , পরীক্ষায় সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামীন বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এই কমিশনের উচ্চ শিক্ষার বিস্তারে সবথেকে জনপ্রিয় পরিকল্পনা। সেই সময়ে ভারত ছিল গ্রাম প্রধান দেশ তাই বিশ্ববিদ্যালয় কে যদি না গ্রাম কেন্দ্রিক করা যায় তবে শিক্ষার বিস্তার ঘটবে না। সেই কারণে এই কমিশন গ্রামীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তা দিয়েছিল।

রাধাকৃষ্ণন কমিশন নারীশিক্ষা বাস্তবায়িত করার জন্য অনেকটাই এগিয়ে আসেন। মেয়েদের লেখাপড়া শেখার বিষয়টি পরাধীন ভারত থেকেই চলে আসছিল। কিন্তু কখনোই পূর্ন রূপ পায়নি। সেই উদ্যোগ যাতে সম্পূর্ণ হয় সেই কথা গুরুত্ব দিয়ে জানিয়েছিল।

শিক্ষক দিবস পালিত হলেও, ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে রাধাকৃষ্ণন ও তার শিক্ষানীতি

ওই কমিশন মনে করত, শিক্ষার্থীদের মধ্যে যদি নৈতিকতার প্রসার না ঘটে তবে শিক্ষা সফল বলে ধরা যায় না। রাধাকৃষ্ণন কমিশন শিক্ষার্থীদের নৈতিক ও ধর্মীয় বোধের শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তার জন্য তারা মনীষীদের জীবনী পাঠক্রমে অন্তর্ভুক্তঙ্করার প্রস্তাব দেন।

ওই কমিশন শিক্ষার ভাষার বিষয়ে রাষ্ট্র ভাষাকে গুরুত্ব দিলেও উচ্চশিক্ষার ম্যান উন্নয়নের জন্য ইংরেজি ভাষাকেই বেঁচে নিয়েছিলেন। তাদের মতে ইংরেজি ভাষায় আধুনিকতার ছোঁয়া আছে। স্বাধীনতা উত্তর ভারতের শিক্ষা-ইতিহাসের সরণি বেয়ে রাধাকৃষ্ণন কমিশনের পর মুদালিয়র কমিশন, কোঠারি কমিশন, জাতীয় শিক্ষানীতি, প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন এবং অন্যান্যর পর সর্বশেষ জাতীয় শিক্ষানীতি-২০২০।

শিক্ষাবিদদের মতে, এমন অপ্রত্যাশিত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শিক্ষানীতির খসড়া এর আগে হয় নি। যেখানে শুধু নতুন শব্দবন্ধে পুরনো বিষয়গুলিকেই পেশ করা হয়েছে। শিক্ষাখাতে খরচ বাড়িয়ে লক্ষ্যপূরণ করার কোনও আন্তরিক প্রয়াস নেই সরকারের। কেবল শিক্ষায় ধর্মীয় মূল্যবোধের গুরুত্বের কথা বলা হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে সরকার যে নতুন শিক্ষানীতি তৈরি করছে তা তার ধর্ম ও মতকে প্রতিষ্ঠা করতেই।

 

সুত্র: Asianet বাংলা

 

আরও পড়ুন ::

Back to top button