মঙ্গলবার মালদহে বিজেপির সাংগঠনিক জেলার সভা ছিল। সেই মঞ্চ থেকে বক্তৃতায় রাজ্যে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে চাঁচাছোলা আক্রমণ করেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এমনিতে জনসভায় বক্তৃতায় দিলীপবাবু টিকা টিপ্পনিতে খোলামেলা। কোনও রাখঢাক রাখেন না। এদিনও অন্যথা হয়নি। তাঁর বক্তৃতার হাইলাইটস:
দিদিমণি বলেছিলেন, উন্নয়ন না হলে ডেভেলপমেন্ট হয় না। এখানে এসে সেটা বুঝলাম।
পঞ্চায়েত ভোটের সময়ে তৃণমূলের বীরভূমের জেলা সভাপতি কেষ্ট মণ্ডল বলেছিলেন, উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। এখানে দেখছি উন্নয়ন রাস্তায় শুয়ে আছে, যমেও দেখতে আসছে না।
ডেভেলপমেন্টটা কী হয়েছে? তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ি দেখুন, তাঁদের গাড়ির বহর দেখুন, ডেভেলপমেন্ট কী বুঝে যাবেন।
এখন আর উন্নয়ন শুয়েও নেই, বাড়ি বাড়ি পৌঁছে গেছে। শুনেছেন কিনা দুয়ারে দুয়ারে সরকার। কেন্দ্রের পাঠানো চাল লুঠ করে নিল, আমফানের টাকা লুঠ করে নিল, এবার তারা বাড়িতে বাড়িতে লুঠ করতে যাচ্ছে। সময় হয়ে এসেছে, এই সরকার শিগগির যমের দুয়ারে যাবে।
দিদিমণির ঘুম ছুটে গেছে। ডিসেম্বরে ঘেমে ঘুরে বেরাচ্ছেন। উত্তরবঙ্গে এসে বলেছেন, উন্নয়ন করবেন, গত দশ বছর কে করতে বারণ বলেছিল।
কেন্দ্র দশ হাজার টাকা পাঠাচ্ছে পায়খানা বানানোর জন্য। সেখান থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে নিচ্ছে কাটমানি। আজকের দিনে সিমেন্টের দাম বেড়েছে, লোহার রডের দাম বেড়েছে। ১ হাজার টাকা কেটে নিলে কী হবে?
নিয়ম হচ্ছে, কেন্দ্র ১০ হাজার টাকা দেবে, রাজ্য দেবে ৩ হাজার টাকা। রাজ্য কোনও টাকা দিচ্ছে না। তার উপর ১০ হাজার টাকা থেকে কাটমানি নেওয়া হচ্ছে। কোথাও ১ হাজার, কোথাও ২ হাজার টাকা। পায়খানা হওয়া উচিত ছিল, এত বড়, হয়ে গেছে এইটুকু। দরজা হয়ে গেছে ছোট। আমাদের মঞ্চে শ্যামদা বসে আছেন, ওই চেহারা নিয়ে ঢুকতে পারবেন?
আমাদের রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রয়েছেন, আজকাল তাঁর স্বাস্থ্য ভাল নয়, তাই বাড়ি থেকে বেরোন না। তাঁকে যদি কোলে করে ওই বাথরুমে নিয়ে যেতে হয়, ঢুকতে পারবেন? আর যদি ঠেলেঠুলে ঢুকে যান, বার করতে গেলে দেওয়াল ভাঙতে হবে।
পায়খানার টাকাও খেয়েছে, আবাস যোজনার টাকাও খেয়ে নিচ্ছে। আমফানের ঝড়ে মানুষের কত ক্ষতি হয়েছে। কত ঘর বাড়ি নষ্ট হয়েছে। এখনও তাদের মাথা গোঁজার ছাদ হয়নি। কারণ, গরিব মানুষ আমফানের টাকা পাননি। ১ হাজার কোটি টাকা গায়েব হল। তার পর লিস্ট বেরোল, সেই লিস্টে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্যের নাম। কারও ভাই, কারও ভাইপো, কারও শালা। পরে বলল ভুল হয়েছে। দিদির ভুল হলে ভাইরা টাকা পায়। আপনারা পান না।
আরও পড়ুন: ‘বাঘের মতো দাঁড়িয়ে বিজেপি, পুরো ভোটে লড়তে হবে: দিলীপ
আগে বিড়ি খেত। বৃষ্টি বলে বাইরে কম ভিতরে বেশি জল পড়ত। বাড়িতে হাঁড়ি চড়ত না। ভাঙা ঝরঝরে সাইকেল। ঘট ঘট আওয়াজ হত। এখন লম্বা সিগারেট খায়। তিন তলা বাড়ি হয়েছে। দামি মোটর সাইকেল চড়ে ঘোরে। আমাদের কর্মীর বাড়ির সামনে দিয়ে গেলে বিপ বিপ করে দুবার বাজায়। বোঝাতে চায়, দেখো কেমন টাকা মেরেছি।
সিপিএম তৃণমূলের ভুল নীতির জন্য বাংলায় একের পর এক শিল্প বন্ধ হয়ে গেছে। এখানকার ছেলেমেয়েদের বাইরের রাজ্যে কাজ করতে যেতে হচ্ছে।
চিকিত্সা ব্যবস্থার কী অবস্থা? কেন্দ্রের টাকায় বড় বিল্ডিং হয়েছে। কিন্তু ডাক্তার নেই, নার্স নেই। কেউ নেই। বেসরকারি হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। এখান থেকে ভেলোর, চেন্নাই যেতে হচ্ছে বাংলার মানুষকে চিকিত্সার জন্য। গয়নাগাঁটি বন্ধক দিয়ে মানুষ যাচ্ছে।
স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে গত কয়েক বছরে একটা লোকও টাকা পায়নি। বেসরকারি হাসপাতালে গেলে বলে পকেটে রেখে দিন। ওই কার্ডে কাজ হয় না। আয়ুষ্মান যোজনার কার্ড থাকলে শুধু এখানে নয় বেঙ্গালুরুতে চিকিত্সা করতে গেলেও বিমার সুবিধা পেতেন।
মালদহে আমের চাষ হয়। কিন্তু সেই আমের দাম চাষিরা কি পান? একটাও ফুড প্রসেসিং ইউনিট হয়নি মালদায়। বাবা, ঠাকুরদা আম ফলাতেন, এখন ছেলেও তাই করেন। তার বেশি কিছু হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান যোজনার টাকা বাংলার মানুষ পায় না। দিদিমণি বলছেন, আমাকে দিন, আমাকে কৃষকদের পাঠিয়ে দেব। আপনারাই বলুন দিদিমণির হাতে গেলে সেই টাকা আপনারা পাবেন? আরে আপনারা কেন, তৃণমূলের লোকেরাও বিশ্বাস করবে না। ওনার এমনই হাতযশ। মোদীজি সেটা জানেন। গুজরাতের লোক তো। ব্যবসাটা বোঝেন।
রোজ একজন করে ভাই সকাল হলে কোনও মন্তব্য করেন। আর দিদি কাউকে তাঁর কাছে পাঠিয়ে বলেন, ওকে বোঝাও। তখন অন্য কেউ আবার কিছু বলে দেন। ও বাড়িতে কেউ আর থাকতে চাইছেন না। সবাই পালাতে চাইছেন। একটা করে টালি খুলে পড়ছে। আর একজন বুড়ো মাস্টারমশাই রয়েছেন। তিনি টিভিতে গিয়ে বসেন। তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন, জাহাজ ডুবছে। তাই সবাই পালাচ্ছে।
সুত্র: THE WALL