Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
রূপচর্চা

শীতে ত্বক ফাটার কারণ ও প্রতিকার

শীতে ত্বক ফাটার কারণ ও প্রতিকার

শীত চলে এসেছে। শুষ্ক প্রকৃতি। বাইরে বইছে ঠান্ডা বাতাস। হিমেল হাওয়ার এমন দিনে কম-বেশি সবারই ত্বক ফাটে। সাধারণত শীত এলেই আমাদের ত্বক ফেটে যায়। মরা চামড়াগুলো ধারালো সূচের মতো হয়ে যায়। ত্বক হয়ে ওঠে রুক্ষ্ম, খড়খড়ে। যা অন্যান্য ঋতুতে হয় না। তাই খুব সহজেই আমাদের ত্বকে, ঠোঁটে, পায়ে ফাটা দাগ দেখা যায়। আপনি এজন্য ঠিকই রোজ নিয়মমতো স্নানের সময়ে তেল ও রাতে শোয়ার সময়ে ক্রিম মাখছেন। বারবার লিপজেল ব্যবহার করছেন। তারপরও ত্বক ফেটে যাচ্ছে। ঠোঁটে শুষ্কতা তৈরি হচ্ছে। ঠোঁট ফাটা দেখা যাচ্ছে। জানতে ইচ্ছে করে, এমন কেন হয়? কী করা যায়! আছে কি উপায়?

গবেষকরা জানান, আমাদের দেশে সাধারণত শীতকালে শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়। অল্প আর্দ্রতা, খুব সূর্যের আলো ও ঠান্ডা বাতাস এর কারণ। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের শরীরেও কিছু পরিবর্তন আসে। যেমন- শীতে অতিরিক্ত ধুলোবালির কারণে শরীরে রুক্ষ্মতা তৈরি হয়। ত্বকে অতিরিক্ত ময়লা জমে। ত্বক খসখসে হয়ে যায়। শীতের শুষ্ক আবহাওয়াই ত্বক ফাটার অন্যতম কারণ।

বিজ্ঞানীদের মতে, শীতকালে সূর্য হেলানো ভাবে কিরণ দিলেও তা সরাসরি বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে। শীতকালে বায়ুতে তেমন কোনো জলীয় বাষ্প থাকে না। কোনো জলীয়বাষ্প না থাকায় সেই শুষ্ক বায়ুতে চারপাশ থেকে জল জলীয় বাষ্পে পরিণত হয়। এ কারণে শীতকাল এলেই পুকুর, নদীর জল কমতে দেখা যায়। বায়ুর মধ্যে জলীয় বাষ্পের ভারসাম্য রক্ষায় চারদিক থেকে জলের দরকার হয়।

আরও পড়ুন : আঁচিলের সমস্যা দূর করবেন যেভাবে

বিজ্ঞানীরা বলেন, মানুষের শরীরে বা উপরের ত্বকের কোষে যে জল রয়েছে এসময় তা কোষের ছিদ্র দিয়ে বের হয়ে যায়। ফলে শরীর শুষ্ক, রুক্ষ্ম, টানটান হয়ে যায়। একসময় ত্বক এতটাই রুক্ষ্ম হয়ে ওঠে যে, সেই টানটান শুষ্ক ত্বক ক্রমে ফেটে যায়। ঠোঁটের ক্ষেত্রে দেখা যায় ঠোঁট ফেটে তার উপরের পাতলা চামড়া উঠে যায় এবং ঠোঁট যে ফেটেছে তা স্পষ্ট বোঝা যায়। শীতে ত্বক সব সময় শুষ্ক থাকে। যার প্রমাণ শরীরের কোনো অংশে হালকা আঁচড় দিলে ত্বকের পাতলা চামড়া উঠে যেতে থাকে। পায়ের ক্ষেত্রে টানটান ত্বক যখন হাঁটা হয়, তখন শরীরের সমস্ত ভারে পায়ের তলার পিছনের দিকে চাপ পড়ে এবং পায়ের তলার চারদিকের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ফাটতে থাকে। তবে সব ঋতুতেই পা ফাটে পেশাগত কারণে। যেমন প্রখর রোদে বেশিক্ষণ থাকা, বাগান, কৃষিকাজ বা নির্মাণকাজ যারা করেন। শীতকালে শুষ্ক ত্বকের জন্যই ফাটা দাগ বেশি দেখা যায়।

এ ছাড়াও যখন টানটান চামড়া বা শরীরের কোনো জায়গা ব্যবহার বা নড়াচড়ার সময় প্রসারিত হয়; তখনো ত্বক ফাটে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজানোর অভ্যাস, সিগারেট খাওয়া, আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মি, হরমোনের সমস্যা, অত্যধিক কফি খাওয়া অথবা ভিটামিন বি টু, ভিটামিন ‘এ’ ও ‘বি’র অভাব হলে, জিংক ও ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব হলেও ত্বক ফাটে। এসবের অভাবে শীতে ত্বক ও ঠোঁটের শুষ্কতাকে বাড়িয়ে দেয়। পুষ্টিহীনতা ও শরীরে জলের ঘাটতি, রেটিনয়েড-জাতীয় ওষুধ সেবন ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগের কারণেও শীতে বেশি বেশি ত্বক ফাটে। বংশগত বা জিনগত কারণে, বয়স ৪০-এর পর তেল ও ঘাম গ্রন্থির সংখ্যা কমে যাওয়াও ত্বক ফাটার একটি কারণ। এ ছাড়া ক্লোরিনযুক্ত জলে অতিরিক্ত সাঁতার কাটলে বা স্নান করলে, বিশেষ করে গরম জল বা ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহার করলে, অতিরিক্ত আকাশপথে ভ্রমণ করলে, কিছু চর্মরোগে, কিছু ওষুধ সেবন, এসিতে অতিরিক্ত অবস্থান, থাইরয়েডের সমস্যা, ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত সুগন্ধি ব্যবহার ইত্যাদিও ত্বক ফাটার কারণ। ত্বক ফেটে যাওয়া ছাড়াও কালচে হয়ে যাওয়া, অ্যালার্জিসহ দেখা যায় নানা রকম সমস্যা।

কী করবেন? এজন্য প্রয়োজন বাড়তি যত্নের। নয়তো ত্বকে দেখা দিতে পারে বিভিন্ন সমস্যা। ত্বক ফাটা রোধের জন্য শীত ঋতুতে অনেক ধরনের লোশন, গ্লিসারিন, ভেসলিন, স্নো, তৈল ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। এগুলো সবই তৈল জাতীয়। যা ব্যবহার করলে ত্বক তেল তেল করে। অর্থাৎ ত্বক থেকে জল বের হতে পারে না। বাতাস ত্বকের উপরে তেলজাতীয় পদার্থের জন্য জল চুষতে পারে না। এগুলো ত্বকের রুক্ষ্মতা রোধ করে। সুতরাং এসব ব্যবহার করে ত্বক ফাটা রোধ করা যায়। শীতে তাই ভালো মানের লিপস্টিক ও লিপ বাম ব্যবহার করতে হবে। ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। স্নানের ময়েশ্চারাইজারযুক্ত সাবান ব্যবহার করুন। ময়েশ্চারাইজার লাগানোর আগে ত্বকের মরা কোষ পরিষ্কার করে নিন। ভালো ময়েশ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম ব্যবহার করতে পারেন। যাদের ব্রণের সমস্যা রয়েছে, তারা ক্রিমের সঙ্গে একটু জল মিশিয়ে নিতে পারেন।

আরও পড়ুন : এই গোপন পদ্ধতিতে বগলের কালো দাগ বা ছোপ একদম দূর করুন সাত দিনেই, পাবেন একদম উজ্জ্বলতা!

তবে সবার আগে বদ অভ্যাসগুলোকে ছাড়ার চেষ্টা করুন, যেমন- ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় চা বা কফি কম পান করতে হবে। লবণাক্ত খাবারে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। শীতে অনেকেই ঠান্ডার কথা ভেবে জল কম পান করে কিন্তু তাতে করে ত্বকে বেশি ফাটল দেখা দেয়। তাই শীতে প্রচুর জল পানের বিকল্প নেই। এ ছাড়া প্রচুর শাক-সবজি খাবেন। নরম সুতির আরামদায়ক পোশাক পরার চেষ্টা করবেন। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাবেন না, ঠোঁটের চামড়া টেনে ওঠাবেন না। অতিরিক্ত ঠান্ডা থেকে মুখকে সুরক্ষিত রাখতে স্কার্ফ ব্যবহার করুন। কুসুম কুসুম গরম জলে স্নান করুন। মুখ দিয়ে নয়, শ্বাস নিন নাক দিয়ে। নাক বন্ধ হয়ে গেলে ড্রপ ব্যবহার করুন। এ সময় ১০ শতাংশ ইউরিয়া, ভেসলিন লাগালে হাতের তালু অনেকটা মসৃণ হয়ে আসে। শীতে অনেকের পায়ের তলাও ফেটে যায়। এজন্য ৫ শতাংশ স্যালিসাইলিক অ্যাসিড অয়েন্টমেন্ট অথবা ভেসলিন নিয়মিত মাখতে পারেন। কুসুম গরম জলে পরিষ্কার একটি কাপড় ভিজিয়ে নিয়ে ঠোঁটে হালকা করে তিন-চারবার চাপ দিন। তারপর ভ্যাসলিন বা গ্লিসারিন পাতলা করে লাগিয়ে নিন।

এবার কয়েকটি ঘরোয়া টোটকা ব্যবহারের কথা জেনে নিন। উপকার পাবেন। বাড়িতে অ্যালোভেরা গাছ থাকলে ভালো। না থাকলে শুদ্ধ অ্যালোভেরা জেল কিনে নিন। এতে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। প্রতিদিন রাতে অল্প একটু অ্যালোভেরা জেল ঠোঁটে মেখে শোবেন। এতে আপনার ঠোঁট আর্দ্রতা পাবে। ঠোঁটে একফোটা নারকেল তেল মেখে রাখলে প্রদাহজনিত সমস্যা থাকলে তা সেরে যাবে আর ঠোঁটকে করে তুলবে নরম ও আর্দ্র। মধু ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ রয়েছে বলে শুষ্কতাকে আটকায় ও মরা চামড়া জমতে দেয় না। এ ছাড়াও ভিটামিন ও মিনারেল থাকায় শসা ঠোঁট আর্দ্র ও নরম রাখতে সাহায্য করে। গ্রিন টিতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও মিনারেল রয়েছে, যা ত্বককে আর্দ্র রাখে। গ্রিন টিতে পলিফেনল রয়েছে, যা ত্বকের প্রদাহ কমায়। তাই একটি গ্রিন টি ব্যাগ হালকা গরম জলে ভিজিয়ে নিন। খুব আস্তে আস্তে ত্বকে মাখতে থাকুন। ত্বকের চামড়া শুষ্ক হয়ে ফেটে যাওয়া থেকে আটকাবে এ পদ্ধতি।

আরও পড়ুন : মাত্র তিনদিনে শীতকালে পা ফাঁটা চিরতরে দূর করার দারুন কার্যকরী কৌশল, যেভাবে করবেন, রইলো স্টেপ বাই স্টেপ পদ্ধতি!

এ ছাড়া ত্বক ফাটা রোধে কিছু স্ক্রাবারও বানানো যায় বাড়িতে বসে। যেকোনো একটি প্রয়োগ করলে আপনি খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাবেন। যেমন- গোলাপের পাপড়ি জলে ভিজিয়ে রাখুন রাতে। সকালে উঠে পাপড়িগুলো পিষে তার সঙ্গে একটু দুধ মিশিয়ে ত্বকে মাখুন। তারপর এভাবেই ৩০ মিনিট রেখে দিন। এবার হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন। অথবা এক চিমটি হলুদ, তিন ফোঁটা দুধ ভালো করে মিশিয়ে ত্বকে মেখে নিন। দু’তিন মিনিট রেখে দিয়ে হালকা গরম জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। যেকোনো ভালো সংস্থার একটি লিপ বাম মেখে রেখে দিন। তিন ফোটা লেবুর রস ও এক চিমটি চিনি নিয়ে ভালো করে মেশান। তর্জনিতে নিয়ে ঠোঁটে ঘষতে থাকুন। এতে মরা চামড়াগুলো উঠে আসবে। তারপর এক মিনিট রেখে হালকা গরম জলে ধুয়ে ফেলুন। এ পদ্ধতি সপ্তাহে দু’বার করে প্রয়োগ করুন।

স্নানের কয়েক মিনিট আগে সারা শরীরে অলিভ ওয়েল মেখে স্নান করুন। অলিভ ওয়েল ১ টেবিল চামচ, ৫ টেবিল চামচ লবণ, ১ টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে স্ক্রাব তৈরি করে নিন। সেটি মুখে ও সারা শরীরে লাগাতে পারেন। শুষ্ক জায়গায় মালিশ করে দু-তিন মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এতে মরা কোষ দূর হবে। শীতে নারকেল তেল ত্বকে ব্যবহার করলেও ত্বক ফাটা সমস্যায় উপকার পাবেন। আর হ্যাঁ। করোনাকালে নিয়ম মেনে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধুয়ে নিতে ভুলবেন না। বাইরে বেরোলে পরিষ্কার মাস্কে মুখ-নাক ঢেকে রাখুন আর সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার চেষ্টা করুন।

আরও পড়ুন ::

Back to top button