আন্তর্জাতিক

গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মিয়ানমার

গৃহযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে মিয়ানমার - West Bengal News 24

মিয়ানমারে টানা দুই মাস ধরে জান্তাবিরোধী আন্দোলন চলছে। গত সপ্তাহ থেকে জান্তা বিক্ষোভকারীদের ওপর ব্যাপক মাত্রায় চড়াও হতে শুরু করলে পাঁচ শতাধিক বিক্ষোভকারী নিহত হয় সেনাবাহিনীর গুলিতে। এমন অবস্থার মধ্যেই দেশটির সবচেয়ে বড় সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী জান্তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। এমন ঘোষণার ফলে দেশটিতে বহু বছর ধরে জারি থাকা সীমান্ত সমস্যা ও গৃহযুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গত সপ্তাহেই দ্য কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়নের ঘাঁটি লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়েছে জান্তা সরকারের বাহিনী। ওই হামলায় বেশ কয়েকটি স্থাপনা ধ্বংস হলেও, হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। সশস্ত্র এই আদিবাসী গ্রুপটি দীর্ঘদিন ধরেই মিয়ানমারের থাই সীমান্তবর্তী দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। গত সোমবার ওই এলাকা থেকে ১০ হাজারের বেশি মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে গেছে বিমানবাহিনীর হামলা এড়াতে। পলায়নপর বাসিন্দাদের মতে, জান্তার বিমান হামলায় এ পর্যন্ত তিনজন মারা গেছে। যদিও এ দাবি যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

আরো পড়ুন : ইন্দোনেশিয়ায় পুলিশের প্রধান কার্যালয়ে গোলাগুলি, নিহত ১

এর আগে কারেন গোষ্ঠীর ক্যাডাররা থাই সীমান্তবর্তী অঞ্চলে থাকা জান্তা সেনাবাহিনীর একটি পোস্টে হামলা চালিয়ে অন্তত ১০ সেনাকে হত্যা করে ও আটজনকে গ্রেপ্তার করে। এর জবাবেই মূলত মিয়ানমারের বিমানবাহিনী হামলা চালাতে শুরু করে। কিন্তু হামলার পর মিয়ানমারের অন্য সশস্ত্র গ্রুপগুলো জান্তার বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান জানিয়ে বিদ্রোহের ঘোষণা দিয়েছে। যেদিন গ্রুপগুলো এ বিদ্রোহের ঘোষণা দেয়, সেদিনই সেনাবাহিনীর গুলিতে ১১৪ জন বিক্ষোভকারী নিহত হয়।

অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ ইউনিভার্সিটির প্রভাষক লি মর্গেনবেসার এএফপিকে বলেন, ‘মিয়ানমারের বর্তমান যে পরিস্থিতি তা যেকোনো মুহূর্তে গৃহযুদ্ধে মোড় নিতে পারে। দেশটির সীমান্তগুলো এমনিতেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে। সেখানে একাধিক আদিবাসী সশস্ত্র গোষ্ঠী রয়েছে যারা রাষ্ট্রের নিয়ম মেনে চলে না। গৃহযুদ্ধ শুরু হলে তা আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘন হবে।’ সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান প্রাউথ সীমান্তবর্তী অঞ্চলের অস্থিরতা প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা চাই না নিজেদের এলাকার মধ্যে গণঅভিবাসন হোক। কিন্তু আমাদের মানবাধিকারের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। দেশে যে সহিংস অবস্থা চলছে তাতে এটাই স্বাভাবিক যে অনেক মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়ে অন্যত্র চলে যাবে।’

সম্প্রতি প্রায় ১২টি দেশের সেনাবাহিনী প্রধানরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্মকাণ্ড নিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন। এমন বিরল যৌথ বিবৃতির পরও মিয়ানমারের সেনাবাহিনী নিজেদের অবস্থান থেকে নড়েনি। বিশ্লেষকরা এর পেছনের কারণে হিসেবে চীনের সবুজ সংকেত না দেওয়াকে দায়ী করছেন। এটা খোলাখুলি গোপন বিষয় যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে পেইচিং একচ্ছত্র সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যদিও চীন সরকারও মিয়ানমারে গণতন্ত্রের পক্ষে মাত্র একবার বিবৃতি দিয়েছে, কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে চীনের জন্য মিয়ানমার যে বেশ গুরুত্বপূর্ণ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ফলে কোয়াড বা আসিয়ানের মতো জোট থেকে পদক্ষেপ নিলেও কোনো কাজ হবে না বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়ার চাবি একমাত্র চীনের হাতে।

মিয়ানমার সরকারের এক হিসাবমতে, দেশটিতে ১৩৫টি সশস্ত্র আদিবাসী গোষ্ঠী রয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত ২০টি গ্রুপের রাজনৈতিক ও মিলিটারি শাখাও রয়েছে। এই রাজনৈতিক শাখাগুলোর অনেকই ইতিমধ্যে জান্তাবিরোধী বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছে। অংশ নেওয়া এই গ্রুপগুলো গোপনে সু চির মিত্র সিআরপিএইচর সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারা প্রতিটি আদিবাসী গ্রুপের কাছে জান্তাবিরোধী লিখিত বার্তা পাঠানোর চেষ্টা করছে, যেখানে নতুন সংবিধান প্রণয়নের বিষয়টি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button