স্বাস্থ্য

খাদ্যে অ্যালার্জি : আপনার করনীয়

খাদ্যে অ্যালার্জি : আপনার করনীয়

কোন কিছু খাওয়া বা পান করার পর যখন শরীরের ইমিউন সিস্টেমে অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তখন তাকে ফুড অ্যালার্জি বলা হয়। ফুড অ্যালার্জি রিসার্চ এন্ড এডুকেশন (FARE) এর মতে, আমেরিকার ১৫ মিলিয়ন মানুষ ফুড অ্যালার্জিতে ভোগে। শিশুদেরকেই বেশি ভুগতে দেখা যায়। আমেরিকায় গড়পড়তা ১৩ জনে ১ জন শিশু ফুড অ্যালার্জিতে আক্রান্ত হয়। ফুড অ্যালার্জির সমস্যাটিতে ত্বক, গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট বা শ্বসনতন্ত্র বা কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম আক্রান্ত হয়।

বিভিন্ন ধরণের খাবার অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু খাবার আছে যারা অন্য খাবারের তুলনায় অধিক অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন তৈরি করে। FARE এর মতে, ৯০ শতাংশ ফুড অ্যালার্জি হয়ে থাকে ৮ টি খাদ্যের জন্য। এগুলো হচ্ছে- দুধ, ডিম, চিনাবাদাম, মাছ, খোলওয়ালা মাছ (যেমন- চিংড়ি), গাছ বাদাম (যেমন- কাজুবাদাম বা আখরোট), গম, সয়াসস।

যেকোন খাবারই অ্যালার্জি সৃষ্টি করতে পারে। অ্যালার্জি সৃষ্টিকারী আরো কিছু খাবার হচ্ছে- ভুট্টা, জেলাটিন, গরুর মাংস, ভেড়ার মাংস, মুরগীর মাংস, বীজ- সূর্যমুখী, তিল, পোস্ত, মসলা- কেওড়া, ধনিয়া, রসুন ও সরিয়া।

লক্ষণ :
খাদ্যের অ্যালার্জির লক্ষণগুলো হালকা থেকে তীব্র হতে পারে। এরা হঠাৎ করে প্রকাশিত হয় অথবা ঘন্টাব্যাপী আস্তে আস্তে প্রকট হয়। কোন কিছু খাওয়ার পরে মিনিটের মধ্যে অ্যালার্জির লক্ষণ দেখা দিতে পারে অথবা ঘন্টাখানিক পরেও হতে পারে। মৃদু লক্ষণ দেখা দিলে খাদ্য শনাক্ত করা মুশকিল হতে পারে। এক্ষেত্রে যে লক্ষণগুলো দেখা যায় তাহল –

১। লাল হয়ে ফুলে যাওয়া বা চুলকানিসহ র‍্যাশ হওয়া

২। নাক দিয়ে জল পড়া, হাঁচি দেওয়া বা হালকা ও শুকনো কাশি আসা

৩। চোখ লাল হয়ে জল আসা ও চুলকানি হওয়া

৪। মুখ এবং কানের ভেতরেও চুলকানি হওয়া

৫। মুখের স্বাদে পরিবর্তন আসা

৬। পেট ফাঁপা, বমি বা ডায়রিয়া হওয়া

চিনাবাদাম, মাছ, খোলসওয়ালা মাছ এবং বাদাম মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে যেমন-

১। শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া বা ঢোক গিলতে অসুবিধা হওয়া

২। ঠোঁট, জিভ ও গলা ফুলে যাওয়া

৩। দুর্বল অনুভব করা, দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া, লঘুচিত্ত বা অচেতন হওয়া

৪। বুকে ব্যথা হওয়া, হার্টবিট অসম হওয়া

যেহেতু ছোট শিশুরা ঠিকমত বুঝিয়া বলতে পারেনা তাই তারা হয়তো বলতে পারে, আমার মুখে খচখচ করছে বা আমর জিহ্বা ভারী মনে হচ্ছে অথবা আমার গলার মধ্যে কিছু আটকে গেছে। এছাড়াও গলার স্বর কর্কশ হতে পারে বা কথা জড়িয়ে যেতে পারে। কখনো কখনো লক্ষণগুলো সারা শরীরে প্রকাশ পায় এবং জীবন সংশয়কারী হতে পারে। এই ধরণের প্রতিক্রিয়াকে অ্যানাফাইলাক্সিস বলে। এর জন্য জরুরী চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। এটি সাধারণত খাওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে হয়। যদি আপনার অ্যাজমার সমস্যা থাকে সেই সাথে খাদ্যের অ্যালার্জিও থাকে তাহলে আপনার অ্যানাফাইলাক্সিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। যদি আপনার মারাত্মক ধরণের ফুড অ্যালার্জি থাকে তাহলে আপনার সাথে এপিনেফ্রিন ইনজেকশন রাখুন। চিকিৎসা না পাওয়া পর্যন্ত আপনাকে আরাম দিবে এবং আপনার জীবন রক্ষা করবে এই এপিনেফ্রিন ইনজেকশন। উচ্চমাত্রার অ্যালার্জিক মানুষদের খুবই সামান্য পরিমাণ খাদ্যের কারণেও অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে দেখা যায়। কম সংবেদনশীল মানুষেরা সামান্য পরিমাণে এই ধরণের খাদ্য খেতে পারেন।

রোগ নির্ণয় :
ফুড অ্যালার্জি নির্ণয় লক্ষণের তীব্রতার উপর নির্ভর করে। হালকা লক্ষণের ক্ষেত্রে চিকিৎসক আপনাকে ফুড ডায়েরি তৈরি করার কথা বলতে পারেন। আপনি নিজেই লক্ষ্য করবেন কোন খাবারটিতে আপনার সমস্যা হচ্ছে। আরেকটি উপায় হচ্ছে চিকিৎসক আপনার খাদ্যতালিকা থেকে নির্দিষ্ট কিছু খাবার বাদ দিতে বলবেন। তারপর আবার আস্তে আস্তে সেই খাদ্যগুলো গ্রহণ করে দেখতে হবে উপসর্গগুলো ফিরে আসে কিনা।

মারাত্মক ধরণের অ্যালার্জির ক্ষেত্রে চিকিৎসক আপনাকে ব্লাড টেস্ট ও স্কিন টেস্ট করতে দেবেন।

চিকিৎসা :
হালকা উপসর্গের ক্ষেত্রে তেমন কোন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়না অথবা অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ঔষধ সেবন করলেই সমাধান সম্ভব। অনেক মারাত্মক ধরণের অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ার জন্য চিকিৎসক আপনাকে স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবনের পরামর্শ দেবেন। স্টেরয়েডের মারাত্মক পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে। তাই একাধারে কয়েকদিনের বেশি ব্যবহার করা উচিৎ নয়।

আরও পড়ুন ::

Back to top button