Jannah Theme License is not validated, Go to the theme options page to validate the license, You need a single license for each domain name.
বিচিত্রতা

গরু নিয়ে খুনোখুনি গরুই বিয়ের পণ

গরু নিয়ে খুনোখুনি গরুই বিয়ের পণ - West Bengal News 24

আফ্রিকার দেশ দক্ষিণ সুদানের সোয়া কোটি মানুষের জীবন, জীবিকা, সংস্কৃতি গরুকেন্দ্রিক। গরুর পাল লালন ও পরিচর্যা করাই তাদের বেঁচে থাকার অবলম্বন। বিয়ের পণ হিসেবে কনের অভিভাবককে দিতে হয় গরু। অনেক সময় একপক্ষের গরুর পাল ছিনিয়ে নিয়ে যায় অন্য পক্ষ। গরু রক্ষায় দক্ষিণ সুদানের মানুষ সঙ্গে রাখেন স্বয়ংক্রিয় ভারী অস্ত্র। দেশটিতে যত সহিংসতা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, তার মূলেও রয়েছে এই গরু। নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ বাধে এই গরু নিয়ে। এ কারণে তারা তাদের গরুরও বিশেষ যত্ন নিয়ে থাকে। কারণ, গরু তাদের সংস্কৃতিরই অংশ। বিরাট আকারের শিংয়ের জন্য বিখ্যাত দক্ষিণ সুদানের গরুকে সহজেই আলাদা করে চেনা যায়। সুদানি একেকটা গরু আট ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

দক্ষিণ সুদানের বিয়ের বাজারে গরু আলাদা গুরুত্ব বহন করে। বিয়ের উপযুক্ত কেউ বিয়ে করতে চাইলে তার কাছে পর্যাপ্ত গরু থাকতে হয়। বিয়েতে মেয়ের বাবাকে সর্বনিম্ন পাঁচটি গরু উপহার দিতে হয়। কন্যা রূপে-গুণে অনন্যা হলে কমপক্ষে ১০ থেকে ২০টা গরু দিতে হয় পণ হিসেবে। তাই যথেষ্ট পরিমাণে গরু থাকলে সমাজে আলাদা মর্যাদা পাওয়া যায়। এমনো দেখা গেছে, কেউ কেউ ১০০ থেকে ২০০ গরু মেয়ের বাবাকে দিয়ে বিয়ে করছেন। সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী যার যত গরু আছে, তিনি তত বেশি বিয়ে করতে পারেন

আরও পড়ুন :: সমকামী পুরুষের সঙ্গে প্রেমের অভিজ্ঞতা জানালেন রূপান্তরিত নারী

দক্ষিণ সুদানে অধিবাসীদের নিজেদের মধ্যে প্রধানত সংঘর্ষ হয় গরু নিয়ে। এ কারণে নিজেদের চেয়েও তারা তাদের গরুর বিশেষ যত্ন নিয়ে থাকেন। অনেক সম্প্রদায় তাদের গরু পাহারার জন্য স্বয়ংক্রিয় ভারী অস্ত্র নিয়ে ঘোরাঘুরি করেন। দক্ষিণ সুদানের মানুষের জীবন-জীবিকা গরু লালন-পালনকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে। যার যত গরু আছে তিনি সমাজে ততই প্রভাবশালী। ১ হাজার কিংবা ২ হাজার গরুর মালিককে আলাদা সমীহের চোখে দেখা হয়। দেশটিতে কেউ বিয়ে করতে চাইলে তার কমপক্ষে পাঁচটি গরু থাকতে হয়। অনেকে গরু জোগাড় করতে না পেরে সারাজীবন বিয়ে করতে পারে না। কেউ কেউ এ জন্য গরু জোগাড়ে জোর জবরদস্তির পথ বেছে নেয়। প্রথম বিয়ের পর ১০০ গরু থাকলে আরেকটা বিয়ে করা যায়। এভাবে ৫ থেকে ২০টা পর্যন্ত বিয়ে করতে পারেন দক্ষিণ সুদানের একজন পুরুষ। অনেকের ২ থেকে ৩ হাজার কিংবা তারচেয়ে বেশি গরু রয়েছে। গরুর পাল নিয়ে মাঠ থেকে মাঠে ঘুরে বেড়ায় এর মালিকরা। ৫০০ কিংবা ১ হাজার গরুর পাল যখন এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখন সামনে ও পেছনে অত্যাধুনিক একে-৪৭

রাইফেল দিয়ে পাহারা দেওয়া হয়। অধিক পরিমাণে মাংস আর দুধ দেওয়ার কারণে চোরা শিকারিদেরও প্রধান লক্ষ্য এই গরু। এসব গরুর শিং আর চামড়াও বেশ মূল্যবান। এ জন্য সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারীদের টার্গেট থাকে অরক্ষিত গরুর পাল। সব মিলিয়ে এসব গরু ছিনিয়ে নিতে পারলেই উচ্চমূল্যে বিক্রি করা সম্ভব। এ কারণে সংঘবদ্ধ চক্র রাস্তার পাশে জঙ্গলে ওতপেতে থাকে এবং সুযোগ বুঝে গোলাগুলি করে গরু ছিনিয়ে নিয়ে যায়। পরে কারা হামলা করেছে, কোন গোত্রের মানুষ জড়িত, সেটা নিশ্চিত হয়ে প্রতিশোধ নেওয়া হয়। প্রতিশোধের চক্করে পড়ে অনেক মানুষকেও প্রাণ দিতে হয়। এমনকি জ্বালিয়ে দেওয়া হয় গ্রামের পর গ্রাম।

দক্ষিণ সুদানের ডিঙ্কা ও মুন্ডারি জনগোষ্ঠীর ওপর গরুর প্রভাব অনেক বেশি। মুন্ডারি রাখালদের জীবনে এই গরুই সবকিছু। গরুই তাদের নিত্যসঙ্গী। পরিবারের ঘনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে পরিচিত এই গরুর মল ও মূত্র তারা নানা প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার করে। অনেক সময় এই গরু তারা উপাসনার কাজেও ব্যবহার করে। সাধারণত মাংস খাওয়ার জন্য তারা নিজেদের গরুকে কখনো জবাই করে না। এর বাজারজাত মূল্য চড়া হওয়ার কারণে অধিকাংশ মুন্ডারি সদস্যের কাছে গরুর মাংস খাওয়া এক ধরনের বিলাসিতা। মুন্ডারিরা আকৃতিতে লম্বা ও পেশিবহুল স্বাস্থ্যের অধিকারী। তারা প্রচুর দুধও খেয়ে থাকে। গরুর প্রস্রাবও তারা পান করে। গরুর গোবরের ছাইও তারা মুখে মেখে থাকে।

দক্ষিণ সুদানের রাজধানী জুবায় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠান ফার্স্টনেট এর শীর্ষ কর্মকর্তা এ এস এম সাজ্জাদুল আমিন বলেন, এখানে আসলে কিছুই উৎপাদন হয় না। পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এখানে কৃষি খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। মৎস্য ও পশুখাদ্যের প্লান্ট হতে পারে। বিশেষ করে মাংস প্রক্রিয়াজাত প্লান্ট লাভজনক বিনিয়োগ হতে পারে। এদেশে প্রচুর গরু রয়েছে। পাশের দেশগুলোতে রপ্তানির লক্ষ্য নিয়ে মাংস প্রসেসিং প্লান্ট গড়ে তুলতে পারেন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা।

আরও পড়ুন ::

Back to top button