জিমেইলের যে ইতিহাস সম্ভবত অনেকেই জানেন না
শুরুর ধাক্কা সামলে কঠিন পথ পার করে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ইমেইল সেবা এখন গুগলের জিমেইল। বিশ্বজুড়ে দেড়শ’ কোটির বেশি সক্রিয় গ্রাহক রয়েছে জিমেইলের।
ছোট একটি পরীক্ষা থেকে শুরু করে এখন গুগলের জি সুইটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ জিমেইল। সাফল্যের এই পর্যায়ে আসতে কঠিন সময়ও পার করতে হয়েছে সেবাটিকে, শুরুর ধাক্কা তো ছিলোই। জিমেইলের সেই দীর্ঘ পথ পেরোনোর গল্প সম্প্রতি বলেছে সিএনবিসি।
১৯৯৯ সালে জিমেইলে নিয়ে কাজ শুরু করে গুগল। সে সময় ইয়াহু মেইলের সক্রিয় গ্রাহক সংখ্যা ছিল এক কোটি ২০ লাখ এবং মাইক্রোসফটের হটমেইলের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় তিন কোটি।
আরও পড়ুন :: ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে যেভাবে খুঁজে পাবেন
গুগলের ২৩তম কর্মী পল বুখেইট তখন প্রতিষ্ঠানের অনলাইন ইমেইল সেবা নিয়ে লড়েছেন। কিন্তু অনেক নির্বাহী কর্মকর্তাই এতে আস্থা রাখতে পারেননি। তারা বুঝতে পারছিলেন না একটি সার্চ ইঞ্জিন প্রতিষ্ঠান কীভাবে ইমেইল সেবা থেকে লাভবান হতে পারে। সে সময় অনেক নির্বাহী কর্মকর্তাই এই প্রকল্প থেকে সরে এসেছেন বলে বেশ কিছু প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘২০ শতাংশ’ প্রকল্প হিসেবে সেবাটি বানিয়েছিলেন বুখেইট। কিছু কিছু সময় কর্মীদের নিজের বাছাই করা প্রকল্প নিয়ে কাজ করার সুযোগ দেয় গুগল। প্রতিষ্ঠানের এই অনানুষ্ঠানিক প্রকল্পগুলোকেই বলা হয় ‘২০ শতাংশ’ প্রকল্প।
গুগল যখন জিমেইল উন্মোচন করে তখন গ্রাহক এটিকে আসলে কৌতুক হিসেবেই নিয়েছিল। এর পেছনে কারণও ছিলো। ২০০৪ সালের এপ্রিল ফুল’স ডে-তে উন্মোচন করা হয় সেবাটি। ফলে গ্রাহক মনে করেন গুগল তাদেরকে বোকা বানানোর চেষ্টা করছে।
গ্রাহক যখন বুঝতে পারেন গুগল আসলেই সেবাটি উন্মোচন করেছে তখন বিনামূল্যের ইমেইল সেবাগুলোর তালিকায় গ্রাহকের পছন্দের তালিকায় আসতে শুরু করে জিমেইলও।
আরও পড়ুন :: অ্যাপ ছাড়াই ফেসবুক ভিডিও ডাউনলোড করার উপায়! না জানা থাকলে জেনে নিন
নব্বইয়ের দশকে প্রথম ওয়েবভিত্তিক ইমেইল সেবা ছিল মাইক্রোসফটের হটমেইল এবং ইয়াহু মেইল।
জিমেইল চালুর পর এই সেবাটি থেকে আয়ের পথ বের করাটা তখন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করে। কিছু ব্যক্তি তখন বলেছেন জিমেইলের পরিধি সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে গ্রাহকের কাছ থেকে নিবন্ধন ফি না নিয়ে এতে বিজ্ঞাপন সমর্থন আনতে হবে।
জিমেইলে বিজ্ঞাপনের মডেল আনার প্রস্তাব পাশ হলেও ২০০৭ সালে সাধারণ জনগণের জন্য সেবাটি উন্মুক্ত করার আগেই বাধার মুখে পড়ে এটি। ইমেইল স্ক্যান করে এর কনটেন্ট ব্যবহার করে টার্গেটেড বিজ্ঞাপন দেখানোর কারণে সমালোচনার মুখে পড়ে গুগল।
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি স্বীকার করেছে বিজ্ঞাপন টার্গেট করতে জিমেইল অ্যাকাউন্ট স্ক্যান করে অ্যাপ ডেভেলপাররা। এরপর আবারও সমালোচনার মুখে সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানটি।
আরও পড়ুন :: মাত্র ১ মিনিটেই বাড়িয়ে নিন গুগল ক্রোমের গতি
২০১৯ সালেও সমালোচনা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ে। গ্রাহকের গোপনতা বিষয়ে গুগলসহ অন্যান্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে তোপের মুখে রাখে কংগ্রেস। গ্রীষ্মে গুগল স্বীকার করে যে, গ্রাহক জিমেইল ব্যবহার করে কেনাকাটা করলে তার তালিকা রাখে প্রতিষ্ঠানটি।
২০১২ সাল পর্যন্তও অন্যান্য প্রতিযোগিদের চেয়ে খুব বেশি ভালো করতে পারেনি জিমেইল। কিন্তু নিজেদের উদ্ভাবন চালিয়ে গেছে প্রতিষ্ঠানটি। ভোক্তা এবং এন্টারপ্রাইজ দুই ধরনের গ্রাহককেই লক্ষ্য বানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন নতুন ফিচার এনে এখন শীর্ষ অবস্থান করছে গুগলের জিমেইল।