জাতীয়

ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের বিজয় উদযাপনে ১৯ নভেম্বর ‘ফতেহ দিবস’ পালন

ঐতিহাসিক কৃষক আন্দোলনের বিজয় উদযাপনে ১৯ নভেম্বর ‘ফতেহ দিবস’ পালন

সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার ডাকে আগামী ২৬ নভেম্বর গোটা দেশের সবকটি রাজ্যে ‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হতে চলেছে। এদিন একটি সাংবাদিক বৈঠকে এমনটাই জানাল সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। জানানো হয়েছে, একগুচ্ছ দাবিকে সামনে রেখে বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যাপালের মাধ্যমে দেশের রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি প্রদানের জন্যেই এই ‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচী।

যেসব দাবিতে এই কর্মসূচীর ডাক দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হল, ১। সমস্ত ফসলের জন্য সব কৃষককে সি-২ প্লাস ৫০ শতাংশ হারে ন্যূন্যতম সহায়ক মূল্য প্রদানের বিষয়টি আইনিভাবে নিশ্চিত করতে হবে ২। ঋণগ্রস্ত কৃষককে দেনার বোঝা থেকে মুক্তি দিতে ঋণ মকুব প্রকল্প চালু করা ৩। বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল ২০২০ প্রত্যাহার ৪। লখিমপুর খেরিতে কৃষক ও সাংবাদিক হত্যায় অভিযুক্ত দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের রাষ্ট্রীয় প্রতিমন্ত্রী অজয় মিশ্রকে মন্ত্রীত্ব থেকে বহিষ্কার করার পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করা ৫। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসলের ক্ষতির জন্য কৃষকদের দ্রুত ক্ষতিপূরণ দিতে ব্যাপক ফসল বীমা প্রকল্প কার্যকর করা ৬। প্রান্তিক, ক্ষুদ্র ও মাঝারি স্তরের কৃষক এবং কৃষিমজুরদের জন্য মাসিক ৫ হাজার টাকার পেনশন চালু করা ৭। কৃষক আন্দোলনের সময় চাষিদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ৮। কৃষক আন্দোলনে শহীদ কৃষকদের পরিবার পিছু ক্ষতিপূরণ।

এইসব কেন্দ্রীয় দাবিগুলোর পাশাপাশি রাজ্যস্তরের স্থানীয় দাবিদাওয়াগুলোও উল্লেখ করা হবে স্মারকলিপিতে।

প্রসঙ্গত, দিনটি ছিল ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর যেদিন সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা ঐতিহাসিক ঐতিহাসিক ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলন শুরু করেছিল, যা বিশ্বের দীর্ঘতম ও বৃহত্তম কৃষক আন্দোলনে পরিণত হয়। কৃষকদের তাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করার লক্ষ্যে কর্পোরেট সংস্থার সঙ্গে শাসকশ্রেণীর রাজনীতির যে আঁতাত, তাঁর বিরুদ্ধে এই আন্দোলনের মাধ্যমে কৃষকদের অভূতপূর্ব বিজয় লক্ষ করেছিল গোটা দুনিয়া।

বলে রাখা দরকার, গত ১৪ নভেম্বর নয়া দিল্লির রাকাবগঞ্জ গুরুদ্বারে এসকেএম-এর জাতীয় কাউন্সিল-এর সভায় থেকে, প্রায় এক বছর আগে দেওয়া লিখিত আশ্বাসগুলি বাস্তবায়ন না করে কৃষকদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য মোদি সরকারের কঠোর নিন্দা জানানো হয়। ‘বিদ্যুৎ সংশোধনী বিল, ২০২০’ প্রত্যাহার ও সকল ফসলের জন্য আইনিভাবে এমএসপি নিশ্চিত করার ব্যাপারে মোদি সরকার যে লিখিত আশ্বাস দিয়েছিল, সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জন্যেই ইউনিয়ন সরকারকে ধিক্কার জানিয়েছে এসকেএম। এইসব বকেয়া দাবিগুলো যতক্ষণ অবধি পূরণ করা হচ্ছে, ততক্ষণ অবধি এর দাবিতে সংঘবদ্ধভাবে গোটা দেশে লড়াই আরও জোরদার করার সকল সংগঠনকে প্রস্তুত থাকার পরামর্শ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয় ওদিনের বৈঠকে।

আসলে দেশব্যাপী ‘রাজভবন চলো’ কর্মসূচী আন্দোলনের পরবর্তী পর্বের সূচনা করতে চলেছে। এসকেএম সারাদেশের কৃষকদেরকে ‘ঋণমুক্তি-পুরো দাম ও ‘ঋণ থেকে মুক্তি এবং সম্পূর্ণ পারিশ্রমিকের মূল্য’ বিষয়গুলো সরকার যতক্ষণ না পর্যন্ত পূরণ না করবে, ততদিন দেশব্যাপী ব্যাপক সংগ্রামের প্রস্তুতি নিতে চলেছে সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা। সমস্ত ফসলের নুন্যতম সহায়ক মূল্য প্রদানের বিষয়টি আইনিভাবে নিশ্চিত করা এবং ঋণমুক্তি হল প্রধান দাবি, এই দাবিতে কৃষকরা দেশে নয়া-উদারনীতি চালু হওয়ার পর থেকে লড়াই করে আসছেন। উল্লেখ্য, এই ভুবনায়িত নয়া-উদার অর্থনীতির জেরেই দেশের কৃষি সঙ্কট যেমন বেড়ে চলেছে, ঠিক সেভাবেই আত্মঘাতী কৃষকের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। ১৯৯৫ সাল থেকে ভারতে ৪ লাখেরও বেশি কৃষক আত্মহত্যা করে মারা গেছে এবং প্রায় ৬৮ শতাংশ কৃষক পরিবার ঋণ ও আর্থিক সঙ্কটে জর্জরিত।

কৃষকদের ন্যায্য দাবির প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে, গ্রাম পর্যায় থেকে শুরু করে ব্যাপক প্রতিবাদ-সমাবেশকে কেন্দ্র করে আগামী সপ্তাহগুলিতে বিক্ষোভকে তীব্র করার জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা স্থির করা হয়েছে। যা শুরু হবে:

১) ১৯ নভেম্বর ২০২২-এ ভারত জুড়ে ফতেহ দিবস বা বিজয় দিবস পালিত হবে। স্মরণ করা যেতে পারে যে মোদি সরকারকে ১৯ নভেম্বর ২০২১-এ তিনটি খামার আইন বাতিলের দাবিতে নতি স্বীকার করতে হয়েছিল। অব্যাহত বিক্ষোভের মুখে ৯ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখে একটি লিখিত আশ্বাস দিয়েছে এসকেএম থেকে ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব-সহ এমএসপি আইনের ওপর একটি কমিটি গঠন করার জন্য এবং অন্যান্য দাবিগুলির জন্য। এই আশ্বাসের ভিত্তিতেই কৃষকরা ১১ ডিসেম্বর ২০২১-এ বাড়ি ফিরেছিলেন, দিল্লি সীমান্তে তাঁদের ঐতিহাসিক সংগ্রাম স্থগিত করে, যাতে ৭০০ জনেরও বেশি কৃষক শহিদ হয়েছিলেন। কৃষকদের এই সংগ্রাম, সক্রিয়ভাবে শ্রমিকদের দ্বারা সমর্থিত, স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এবং দীর্ঘতম গণ-বিক্ষোভ। এই পটভূমিতে, সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা ১৯ নভেম্বর ২০২২ নরেন্দ্র মোদি কর্তৃক ৩টি কালো কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণার প্রথম বার্ষিকী ফতেহ দিবস বা বিজয় দিবস হিসাবে উদযাপন করবে। এদিন প্রতিটি গ্রামে ও শহরে কৃষকরা প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালিয়ে মিষ্টি বিতরণ করবেন।

২) ১ ডিসেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত, সমস্ত রাজনৈতিক দলের লোকসভা এবং রাজ্যসভা সাংসদের অফিসে এবং সমস্ত রাজ্য বিধানসভার নেতা এবং বিধায়কদের কাছে মিছিল করা হবে৷ তাদের সকলের কাছে কল-টু-অ্যাকশন চিঠি জমা দেওয়া হবে, দাবি করা হবে যে তাঁরা সংসদ/রাজ্য বিধানসভাগুলিতে কৃষকদের দাবির বিষয়টি তুলে ধরবে এবং এই সমস্যাগুলির বিতর্ক এবং সমাধান করতে বাধ্য করবে।

সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা পরিবেশ, প্রকৃতি এবং মানুষ ও গবাদি পশুর জীবনের উপর পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছাড়াই, বীজ একচেটিয়া কর্পোরেট মুনাফা অর্জনের সুবিধার্থে জিএম-সরিষার বীজ সাফ করার জন্য বিজেপি-নেতৃত্বাধীন মোদি সরকারের তড়িঘড়ি প্রচেষ্টার নিন্দা করে।

সংযুক্ত কিষাণ মোর্চা কৃষকদের সংগ্রামকে অব্যাহত সমর্থন এবং সংহতির জন্য কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ প্ল্যাটফর্মকে ধন্যবাদ জানায় এবং ২৬ নভেম্বর ২০২২-এ ‘রাজভবন চলো’ অভিযান-সহ চলমান সংগ্রামগুলিকে এগিয়ে আসার এবং সমর্থন করার জন্য আবেদন করে।

সংযুক্ত কিষাণ মোর্চার পরবর্তী সভা ৮ ডিসেম্বর ২০২২-এ কর্নালে নির্ধারিত হয়েছে যেখানে আন্দোলনের পরবর্তী ধাপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং ঘোষণা করা হবে।

সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দর্শন পাল, হান্নান মোল্লা, যুধবীর সিং, অভীক সাহা এবং অশোক ধাওয়ালে।

আরও পড়ুন ::

Back to top button