বর্ধমান

হিন্দু, মুসলিম পরিবারকে সম্প্রীতির বন্ধনে বেঁধে রেখেছিলেন তিনি; মান্নান বাবুর প্রয়ানে চোখে জল সবার

হিন্দু, মুসলিম পরিবারকে সম্প্রীতির বন্ধনে বেঁধে রেখেছিলেন তিনি; মান্নান বাবুর প্রয়ানে চোখে জল সবার

ভারতবর্ষ সব জাতি ও ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষের মিলন ক্ষেত্র। এই বাস্তব সত্যটা রাজনীতিকরা বুঝুক বা না বুঝুক, সেটা বুঝেছিলেন পূর্ব বর্ধমানের রায়নার বামুনিয়া গ্রামের সেখ মান্নান তাই ধর্মের বেড়াজাল দূরে সরিয়ে রেখে তিনি গ্রামে সকল হিন্দু, মুসলিম পরিবারকে সম্প্রীতির বন্ধনে বেঁধে রেখেছিলেন।

রবিবার ৭৩ বছর বয়সী মান্নান বাবুর প্রয়ানে তাই শোকাহত গোটা বামুনিয়া গ্রাম। সন্মান জানাতে গ্রামের বারোয়ারি মন্দির তলায় এদিন যখন মান্নান বাবুর দেহ আনা হয় তখন তার জন্য হিন্দুরাও চোখের জল ফেললেন। তাঁর শেষকৃত্যেও সামিল থাকলেন বামুনিয়া গ্রামের দুই সম্প্রদায়ের মানুষজন।

রায়না ১ ব্লকের হিজলনা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রত্যন্ত গ্রাম বামুনিয়া। হিন্দু, মুসলিম এই দুই সম্প্রদায়ের পরিবার গ্রামে মিলেমিশে বসবাস করেন। গ্রামের বেশীরভাগ মানুষ কৃষিজীবী। বামুনিয়া গ্রামে মসজিদ যেমন আছে তেমনই আছে মন্দির। গ্রামের মানুষজন নিজের নিজের মত করে তাদের ধর্মীর আচার অনুষ্ঠান, পরব পালন করেন। গ্রামের মানুষজনের মধ্যে এই সম্প্রীতির বন্ধন টিকিয়ে রাখতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত শেখ মান্নান ছিলেন শিখণ্ডী। কৃষিজীবী পরিবারের মান্নানই ছিলেন গ্রামের সবার অভিবাবক। যে কোন বিষয়ে যুক্তি পরামর্শ নেওয়ার জন্য গ্রামের মানুষ তার কাছে ছেটে যেতেন। এমন এক মানুষকে হারিয়ে আজ যেন অভিভাবক শূন্য বামুনিয়া গ্রাম।

গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দা ভোলানাথ হালদার এদিন চোখের জলেই সেখ মান্নান কে চির বিদায় জানান। তিনি বলেন, সেখ মান্নানের মত মানুষ এই গ্রামে জন্ম নিয়েছিল এটা আমাদের গর্ব। মান্নানই গ্রামের সকল হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে এক বন্ধনে বেঁধে রেখেছিল। বামুনিয়া গ্রামকে হিন্দু ও মুসলিমের মিলন ক্ষেত্র বানানোর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিলেন আমাদের মান্নান সহেব। নিজের জীবনের মায়া না করে মান্নান গ্রামে এই সম্প্রীতি বন্ধন টিকিয়ে রাখ ও ভাল কাজ করার ব্যাপারে বদ্ধ পরিকর ছিল ।মানবতাই তার কাছে ছিল শেষ কথা । তাই গ্রামের সকল হিন্দু পরিবারও তাকে মর্জাদার আসনে স্থান দিয়েছিলেন।গ্রামের হিন্দু পরিবারের যে কোন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত থাকতেন সেখ মান্নান ।মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত উনি যেন ছিলেন গ্রামের সবার অভিভাবক। এমন এক মানুষের প্রয়ান অপুরণীয় ক্ষতি বলে ভোলানাথ হালদার মন্তব্য করেছেন।

মান্নান বাবুর পরিবার সদস্যদের পাশাপাশি তাঁর আত্মীয় পরিজনও এদিন বলেন, সেখ মান্নান প্রকৃত অর্থেই ছিলেন মানবতার পুজারি। তিনি কোন দিন ধর্মীয় বেড়াজালে নিজেকে আটকে রাখেন নি । তাই আজ তাঁর বাদায়ের দিন সব সম্প্রদায়ের মাধুই চোখের জল ফেললেন। মান্নান বাবুর চিন্তা ও ভাবধারাকে গ্রামে প্রতিষ্ঠিত য়াখতে

আমাদের সবাইকেই এবার দায়িত্ব নিতে হবে। হিজলনা অঞ্চলের বাসিন্দা তথা রায়না ১ ব্লক তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বামদেব মণ্ডল ও একই ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রত্না মহান্ত বলেন,”সেখ মান্নান হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতির এক অনন্য নজির সৃষ্টি করে গিয়েছেন। গ্রামের সকল মানুষজনকে এই ঐতিহ্য অটুট রাখার শপথ নিতে হবে”।

আরও পড়ুন ::

Back to top button