বর্ধমান

প্রকাশ্যে শাসকের গোষ্ঠীদ্বন্ধ; বিধায়ক বনাম উপপ্রধানের লড়াই

প্রকাশ্যে শাসকের গোষ্ঠীদ্বন্ধ; বিধায়ক বনাম উপপ্রধানের লড়াই

নিজেদের মধ্যে গন্ডগোল না করে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু বাস্তবে জেলায় জেলায় দেখা যাচ্ছে অন্য চিত্র।শাসকদলের বিধায়কের সঙ্গে দলেরই প্রধান-উপপ্রধানের ঝামেলা। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোল পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলীতে। জেলাশাসক, কালনার মহকুমা শাসকের দফতরে পূর্বস্থলী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান, উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগও জানালেন এলাকার বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়।

পাল্টা বিধায়ককে এক হাত নিয়েছেন উপপ্রধান পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়। বলেন, বিধায়কের নাম মুখে আনতে ঘৃণা করে তাঁর। একই বক্তব্য বিধায়কেরও। উপপ্রধানের ‘চার আনা’ও দাম নেই, বলে কটাক্ষ তপন চট্টোপাধ্যায়ের। ভোটের মুখে দলের অন্দরে এমন আকচাআকচিতে বিড়ম্বনা দলের কর্মীদের মধ্যেই। ১৫ সদস্যর এই গ্রামপঞ্চায়েতে বিধায়কের নির্দেশে ৬ জন পঞ্চায়েত সদস্য অভিযোগ জানান বলে জানা গিয়েছে। পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের ঘটনা।

এলাকার লোকজন জানান, এর আগেও একাধিকবার পূর্বস্থলী পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বনাম পূর্বস্থলী উত্তরের বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ের দ্বন্দ্ব সামনে এসেছে। এবার পঞ্চায়েত উপপ্রধানের উদ্যোগে একটি কটেজ তৈরি ও তার লিজ দেওয়া নিয়ে টাকা তছরূপের অভিযোগ জমা পড়ল এসডিওর কাছে। বিধায়ক যেমন ৪৫ লক্ষ টাকা খরচে পঞ্চায়েতের কটেজ তৈরি ও নির্মাণ নিয়ে টাকা তছরূপের অভিযোগ এনেছেন, তেমনি বিধায়কের কারণে আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রামপঞ্চায়েত হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন উপপ্রধান পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায়।

পঙ্কজ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “যে যেমন, সে তেমনই মনে করবে। আমাদের পঞ্চায়েতে কোনও দুর্নীতি হয়নি। যদি কেউ মনে করে দুর্নীতি হয়েছে, সরকারি নিয়ম মেনে তদন্ত করলেই পেয়ে যাবে। আসলে যে চিনি খায়, তার কাছে সবই চিনি মনে হয়।” বিধায়কের অভিযোগ, কোনও আলোচনা ছাড়াই সব করে ফেলেন প্রধান, উপপ্রধান। এ প্রসঙ্গে উপপ্রধান পঙ্কজের বক্তব্য, “উনি আলোচনা করেন কি না জিজ্ঞাসা করবেন। আর পঞ্চায়েত সদস্য যাঁরা এসডিওর কাছে গিয়েছেন, আসলে ভয়ে বা চামচাগিরি করতে। রেজোলিউশন আমার করা আছে। দেখে নিতে পারে। মিটিং ডাকা হয়েছে, যারা এসেছে এসেছে। কেউ না এলে তো ধরে নিয়ে আসবে না প্রধান।”

তবে এত কিছুর পরও দলের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে নারাজ তিনি। বরং তিনি বলেন, “বিধায়কের হয়ত কোনও স্বার্থে ঘা লেগেছে তাই অভিযোগ করছেন। কেউ যদি বলে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত প্রমাণ করে দিক।” যদিও বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে অধিকাংশ সদস্যকে দিয়ে প্রথমে সই করিয়ে নিয়ে তারপর রেজোলিউশন করেছিলেন। ১৪ জনের সই ছিল। প্রধান সেদিন যাননি। উপপ্রধানই সব করেছিলেন। আমাদের না জানিয়েই সবটা করেছেন। পরে কটেজ যখন হয় বলা হয়েছিল, রাস্তাঘাট করতে। ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থ করতে এসব করছে। আমার কাছে অধিকাংশ সদস্য অভিযোগ করেছেন পঞ্চায়েতের। তাই আমি জেলাশাসক, এসডিওকে অভিযোগ জানিয়েছি।”

অভিযোগকারীদের মধ্যে এক পঞ্চায়েত সদস্য সমর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পঞ্চায়েতের বাগানে তিনটে ঘর করে কটেজ তৈরি হচ্ছে। বোর্ড মিটিংয়ে না জানিয়েই কাজ শুরু করে দেয়। এবার যখন লিজ দেবে, তখন চিঠি করে জানাচ্ছে। সবথেকে বড় কথা, কাজ শেষ হয়নি, আগেই লিজ? টাকা পয়সা নিয়ে এসব করছেন ওনারা।”

আরও পড়ুন ::

Back to top button