ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে বৈঠকে বসছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটি। কেন্দ্রীয় কমিটির এই বৈঠকে যোগ দেবে তৃণমূল। যে কমিটিতে শাসক এবং বিরোধী মিলিয়ে মোট ৩১ জন সাংসদ রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংসদীয় কমিটিতে বাংলার ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পেতে পারে বলে জল্পনা। তবে শুধুমাত্র বাংলার ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে আলোচনা হলে তীব্র প্রতিবাদ জানাতেও পিছপা হবে না তৃণমূল সে কথা আগেভাগে জানিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ মালা রায়।
ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে আলোচনায় শুধু বাংলাকে ‘টার্গেট’ করা হলে তাঁরা বিরোধিতা করবেন বলে জানালেন কমিটির সদস্য তৃণমূল সাংসদ মালা রায়। তিনি বলেন, “উত্তর প্রদেশ, গুজরাট, বিহারের ভোট পরবর্তী হিংসার সঙ্গে তুলনা করলে বাংলায় কোনও হিংসাই হয়নি। তবে আলোচনা হতেই পারে। আলোচনা হোক আমরা চাই। কিন্তু, একতরফাভাবে শুধু বাংলা নিয়ে আলোচনা হবে, সেটা তো হতে পারে না। এটা আমরা মানব না। বিজেপি ক্ষমতায় রয়েছে এমন সব রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসার ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে। সেইসব রাজ্যগুলি নিয়ে আলোচনা হোক। তারপর বাংলার প্রসঙ্গ উঠলে আমরা বলব। যেগুলো আমরা করিনি, সেটা যদি বলতে চায়, তখন প্রতিবাদ হবে। শুধু বিরোধীদের আক্রমণ করার জন্য, তাদের হেয় করার জন্য আলোচনা হবে, সেটা মানব না। যথার্থ আলোচনা হলে আমরা স্বাগত জানাব। পরিস্থিতি দেখে তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
২০১৬ সালে দ্বিতীয় তৃণমূল সরকার গঠন হয়। তারপর থেকে লাগাতার রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এবং বামেরা নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী সন্ত্রাস নিয়ে অভিযোগে সরব হয়েছে। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত নির্বাচন, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচন পরবর্তী হিংসা, ২০২১ সালের পুরসভা নির্বাচন এবং ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা নিয়ে শাসকদল তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিরোধীরা।
বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ রাধামোহন দাস আগরওয়াল এই কমিটির চেয়ারম্যান। বাকি ৩০ জন সাংসদের মধ্যে ১৩ জন বিজেপি বা এনডিএ জোটের শরিক দলগুলির। কমিটির সদস্য হিসেবে তৃণমূলের তরফে রয়েছেন কলকাতা দক্ষিণের সাংসদ মালা রায়, বারাসতের সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার এবং রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন। এ রাজ্য থেকে বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য ওই কমিটিতে রয়েছেন।
২০২১ সালের পুরসভা নির্বাচন এবং ২০২৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা নিয়ে শাসকদল তৃণমূলকে নিশানা করেছে বিরোধীরা। একের পর এক ঘটনায় কেন্দ্রের তরফে রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা দেখতে প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে শাসক শিবিরের উপর ‘চাপ’ তৈরি করতে বাংলায় ভোট পরবর্তী হিংসার প্রসঙ্গ আলোচনায় তুলে আনা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে বারবার এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রাজ্যকে বলা হলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার উদাসীন থেকেছে বলে অভিযোগ।
কমিটির সদস্য শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “আমি ওই কমিটির সদস্য। সংসদীয় রীতিনীতি মেনে, এই নিয়ে কিছু বলব না।” অন্যদিকে বিজেপি নেতা জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন , “অনুপ্রবেশ, ভোট পরবর্তী হিংসা-সহ নানা ইস্যু নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হবে। সব রাজ্যেরই ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে আলোচনা হবে। তার মধ্যে যে রাজ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পরবর্তী হিংসা হয়েছে, সেই রাজ্য নিয়ে বেশি আলোচনা হবে।” তবে বৈঠকে যোগ না দিলে তার ফল লো যে ভালো হবে না তার হুঁশিয়ারি আগেভাগে দিয়েছেন তিনি।